মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় দুই নারীসহ গাড়ীর চালক নিহত নয়নের লাশ আদালতের নির্দেশে নেত্রকোণার কলমাকান্দা উপজেলার কবরস্থান থেকে উত্তোলন করা হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, গত ২১ জুলাই দিবাগত রাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের গজারিয়ার অংশে আলীপুরা নামক এলাকায় অন্য গাড়ী দিয়ে ধাক্কা দেওয়ার অভিযোগ আনার পর তিন মাস ২৪ দিন পর গেলো সোমবার বিকেলে কলমাকান্দা উপজেলার খারনই ইউনিয়নের মেদিরকান্দা গ্রামের সার্বজনীন কবরস্থানে থেকে লাশটি উত্তোলন করা হয়।
এসময় কলমাকান্দা উপজেলার সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অমিত রায়, কলমাকান্দা থানার ওসি (তদন্ত) হাবিবুল্লাহ্ খান, ওই মামলা তদন্তকারি কর্মকর্তা গজারিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সেকান্দর আলীসহ পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
কলমাকান্দা থানার ওসি (তদন্ত) হাবিবুল্লাহ্ খান বলেন, মুন্সীগঞ্জ জেলা আদালতের নির্দেশে গজারিয়া থানায় এই হত্যা মামলা করা হয়েছে এবং সোমবার নয়ন মিয়ার লাশ উত্তোলন করা হয়। উত্তোলনের পর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
নিহত নয়ন মিয়া কলমাকান্দা উপজেলার খারনই ইউনিয়নের মেদিরকান্দা গ্রামের মৃত আবদুল হেকিমের পুত্র। তিনি পেশায় একজন গাড়ির চালক ছিলেন। ঢাকার গুলশানের কালাচাঁদপুর নামক এলাকায় স্ত্রীসহ চার কন্যাসন্তান নিয়ে বসবাস করতেন।
এর আগে নিহতের স্ত্রী নিলুফা (৩৪) গত ১৯ আগস্ট মুন্সীগঞ্জ জেলার বিজ্ঞ চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দুইজনের নাম উল্লেখসহ একটি পিটিশন করেন। পরে আট অক্টোবর আদালতের বিচারক আমলে নেন ও পিটিশনটিকে মামলা হিসেবে নথি করার এবং গজারিয়া থানা পুলিশকে নিহতের মরদেহ উত্তোলনসহ প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন।
পিটিশন ও নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, গত ২১ জুলাই দিবাগত রাতে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক রাজিব চৌধুরী ওরফে রকি তার বন্ধু নোমান, লিজা ও জারাসহ কয়েকজন বন্ধুদের সাথে কুমিল্লা শহরের উদ্দেশ্য রওনা দেন। ওইদিনই রাতে কুমিল্লার একটি উইন ওয়ান হোটেলে বিশ্রাম শেষে লিজা ও জারা নামের দুই নারীকে নিয়ে নয়ন প্রাইভেটকারযোগে ঢাকার উদ্দেশ্য রওয়ানা হন। অপরদিকে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক রাজিব চৌধুরী ওরফে রকি তার বন্ধু নোমানসহ অন্যান্যের সাথে করে অপর গাড়ির চালক আশরাফকে নিয়ে কুমিল্লা শহরের দিকে রওনা হন।
মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়া থানার আলীপুরা নামকস্থানে পৌঁছলে সড়ক দুর্ঘটনায় দুই নারীসহ গাড়ির চালক নয়ন নিহত হন। পরে কোরবানি ঈদের পরের দিন ২৩ জুলাই সকাল নিহতে নেত্রকোণার কলমাকান্দায় নিজ গ্রামে নয়নের লাশ দাফন করা হয়।
এ ঘটনায় ঢাকার গুলশানের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক রাজিব চৌধুরী ওরফে রকি (৩৬) ও তার স্ত্রী খালেদা ইয়াছমিন পুশনসহ (২৮) অজ্ঞাতদের অভিযুক্ত করে নিহত নয়ন মিয়া স্ত্রী মুন্সীগঞ্জ জেলার বিজ্ঞ চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন।
নিহত নয়ন মিয়ার স্ত্রী নিলুফা বলেন, ঢাকার গুলশানের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক রাজিব চৌধুরী ওরফে রকির ব্যক্তিগত গাড়ীর চালাতেন। রকি সাহেবের নারী কেলেঙ্কারির ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য পরিকল্পিত ভাবে অন্য গাড়ী দিয়ে পেছনে ধাক্কা দিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে আমার ধারণা। এখন পর্যন্ত পুলিশ আসামীদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়া থানার ওই মামলা তদন্তকারি কর্মকর্তা উপপরিদর্শক সেকান্দর আলীর বলেন, আদালতের নির্দেশে প্রায় চারমাস পর নেত্রকোণার কলমাকান্দার মেদিরকান্দা গ্রামের সার্বজনীন কবরস্থানে থেকে বিকালে নয়ন মিয়ার লাশ উত্তোলন করা হয়। উত্তোলনের পর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পেলেই মৃত্যুর প্রকৃত রহস্য জানা যাবে। অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।