পরিবহণ নৈরাজ্য থামছে না। প্রথা চালু থাকলেও বাসে শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া নেওয়া হচ্ছে না। হাফ ভাড়া নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রায়ই পরিবহন শ্রমিকদের বাগবিত-া হচ্ছে। এমনকি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থী লাঞ্ছনা কিংবা মারামারির ঘটনাও ঘটছে। সরকারি সড়ক পরিবহন সংস্থা বিআরটিসির বাসেও শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া নেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। হাফ ভাড়া নিশ্চিতের দাবিতে রাজধানীজুড়ে বিক্ষিপ্তভাবে আন্দোলন শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা। সম্প্রতি পরিবহন শ্রমিকরা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে হেনস্তা করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সরকারি তিতুমীর কলেজের চার শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে আহত করা হয়েছে। সায়েন্স কলেজের শিক্ষার্থীদের লাঞ্ছিত করাসহ একাধিক জায়গায় শিক্ষার্থীদের হেনস্তা করা হয়েছে। গত রোববার বাসে ‘হাফ ভাড়া’ দিতে চাওয়ায় এক কলেজছাত্রীকে ‘ধর্ষণের হুমকি দেওয়ার’ অভিযোগ এনে পুরান ঢাকার বকশীবাজার মোড়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে কয়েক শ শিক্ষার্থী। অবশ্য রোববার ই বাসচালক ও তাঁর সহকারীকে আটক করেছে র্যাব।
ভাড়া নির্ধারণ প্রক্রিয়া অনুযায়ী ছাত্র-ছাত্রী ও দাঁড়ানো যাত্রীদের হাফ ভাড়া কোনো দাবি বা দয়া নয়। এটি যাত্রীদের অধিকার। যাত্রী অধিকার নিয়ে যাঁরা কাজ করেন, তাঁরা বলছেন, যাত্রী প্রতিনিধি না রেখে ভাড়া নির্ধারণ করায় বিআরটিএ কর্মকর্তাদের ভুল বুঝিয়ে বাস মালিকরা নানা খাতে অযৌক্তিক ও অতিরিক্ত ব্যয় দেখিয়ে একচেটিয়া ভাড়া বাড়ানোর ফলে এই ভাড়া যাত্রীদের গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে। এই ভাড়া পরিশোধ করে বাসে যাতায়াত করা নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত যাত্রীদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ছে। ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে গণপরিবহনের ভাড়া বাড়ানো থেকে রাজধানীর গণপরিবহনে ভাড়া নৈরাজ্য শুরু হয়েছে। যাত্রী অধিকার নিয়ে যাঁরা কাজ করেন তাঁরা বলছেন, ছাত্ররা যদি অর্ধেক ভাড়া দেয়, তাহলেও তারা মূল ভাড়ার থেকে খুব একটা কম দিচ্ছে না।
আমাদের এই মহানগরীতে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা নেই। আবার এখানে শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা গণপরিবহন ব্যবস্থাও নেই। শিক্ষার্থীদের জন্য কয়েকটি রুটে বিআরটিসির বাস সার্ভিস চালু করা হয়েছিল। কিন্তু সেই সার্ভিস খুব বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। ফলে বাধ্য হয়েই শিক্ষার্থীদের রাজধানীতে গণপরিবহন ব্যবহার করতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। গণপরিবহনে যাতায়াত করতে গিয়ে, বিশেষ করে ছাত্রীদের হেনস্তা হওয়ার ঘটনাও ঘটে। গণপরিবহনকে শিক্ষার্থীবান্ধব করতে সরকার কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এটাই প্রত্যাশা।