মেহেরপুরের গাংনীতে ফসলি জমির টপ সয়েল (মাটির উপর অংশ) কেটে বিক্রির মহোৎসব চলছে। কৃষি অফিসার লাভলী খাতুনের নিস্ক্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে ও জমি মালিকদের সার, বীজ ও টাকার প্রলোভন দেখিয়ে অসাধু ইটভাটা ও মাটি ব্যবসায়ীরা এসব জমির টপ সয়েল কিনে নিচ্ছেন। একারণে জমির উর্বরতা শক্তি হারানোর সাথে উৎপাদন ক্ষমতা ব্যাহত হচ্ছে। যার কারণে জমি হারাচ্ছে শস্য উৎপাদন ক্ষমতা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কিছু মাটি ব্যবসায়ী প্রতি বছরের ডিসেম্বর থেকে শুরু করে মার্চ পর্যন্ত মাটির ব্যবসা করেন। তারা কৃষকদের অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে জমির এক থেকে দেড় ফুট মাটি কিনে নিয়ে চড়া দামে ইটভাটায় বিক্রি করেন। এ ছাড়া বাড়ি তৈরিতে মাটি ভরাট প্রয়োজন হলেও অনেকে এসব মাটি ব্যবসায়ীর দ্বারস্থ হন।
উপজেলার বেশিরভাগ গ্রামেই এখন দুই/তিন ফসলি জমির টপ সয়েল (উর্বর মাটি) কেটে নেওয়া হচ্ছে। এতে পাশের জমির মালিক ও অন্যান্য কৃষকরা ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছে, টপ সয়েল জমির প্রাণ। টপ সয়েল একবার কেটে নিলে সে জমিতে আর প্রাণ থাকে না। জমির উপরের আট থেকে ১০/১৫ ইঞ্চিই হলো টপ সয়েল। আর ওই অংশেই থাকে মূল জৈবশক্তি। টপ সয়েল কাটলে জমির এ ক্ষতি কয়েক বছরেও পূরণ হবে না।
চিৎলা গ্রামের কয়েক কৃষক জানান, ইটভাটা,মাটি ও বালি ব্যবসায়ীরা জমির মালিকদের কাছ থেকে বালি উত্তোলনের জন্য জমি কিনে অথবা চুক্তি ভিত্তিক নেন। পরে ড্রেজার বসিয়ে বালি উত্তোলন করে। বালি উত্তোলনের ফলে পাশবর্তী জমিও ড্রেজিং গর্তে বিলীন হয়ে যায়। কোন কৃষক ইচ্ছে করে জমি দিতে না চাইলেও ভাঙ্গনের কবলে পড়ে শেষ পর্যন্ত ড্রেজার মালিকদের কাছে কম মূল্যে জমি ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তদারকি করলে সুফল পাওয়া সম্ভব হবে।
স্থানীয়রা জানান, ট্রাক ও ট্রলিযোগে এসব মাটি নিয়ে যাচ্ছেন জেলার বিভিন্ন ইটভাটায়। এতে করে গ্রামীণ ও শহুরে গুরুত্বপূর্ন রাস্তাঘাট, ব্রীজ ও কার্লভাট নষ্ট হচ্ছে। এ ছাড়া ধুলাবালির রাস্তাঘাটে চলাচলের ক্ষেত্রে স্কুল পড়-য়া ছাত্র/ছাত্রী হতে বয়স্ক ও মধ্যে বয়সের পথচারীদের স্বাস-প্রশ্বাসের ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। নানা দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষকে চলাচল করতে হচ্ছে এসব রাস্তায়।
এছাড়া গত বছর দূর্ভোগ সহ্য করতে না পেরে জুগিন্দা,মটমুড়া,ধানখোলা,হিজলবাড়িয়া ও পশ্চিম মালসাদহ এলাকার বাসিন্দারা মাটির গাড়ি বন্ধ করে দিয়ে ছিলেও মাটি ও ইটভাটা ব্যবসায়ীরা প্রভাবশালী হওয়ায় তেমন কোন সুফল পাওয়া যায়নী।
গাংনী উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি এনামুল হক বলেন,ফসলের মূল্যে বুদ্ধি হওয়ার কারণে জমির মূল্যেও বৃদ্ধি পেয়েছে। একারনে তেমন কেউ মাটি বিক্রি করতে চাইছেনা। তবে ছাতিয়ান,বাউট ও মটমুড়া এলাকায় কিছু টপ সয়েলের মাটি বিক্রি হয়। এগুলো যাতে না হয় সেদিকে ইটভাটা মালিকরা লক্ষা রাখছে। তাছাড়া পুরানো পুকুর ও অনাবাদি জমির মাটি নেয়া হচ্ছে।
এবিষয়ে গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসার মোছা: লাভলী খাতুন বলেন, টপ সয়েল কাটার বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেনি। তাছাড়া মাটি কাটার বিষয়ে সরকারী বিধি বিধান ও আইন রয়েছে। আইন মোতাবেক উপজেলা প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌসুমি খানম বলেন, টপ সয়েল কেটে বিক্রি করলে (মাটির উপর অংশ) তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।