অবকাঠামোগত সুবিধা না থাকায় সড়কপথের মতো রেলপথেও ভারতীয় পণ্য আমদানিতে ব্যবসায়ীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে বর্তমানে রেলপথ প্রচুর আমদানি হচ্ছে। তাতে বাংলাদেশ রেলওয়ে বিপুল পরিমাণ আয় করলেও পণ্য খালাসের ক্ষেত্রে রেলওয়ে থেকে ন্যূনতম সহযোগিতা মিলছে না। ফলে আমদানিকারকদের পণ্য খালাসে নানা দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। রেলওয়ের স্টেশনগুলোয় কোটি কোটি টাকার আমদানি পণ্য আনলোড হলেও সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হয়নি। আমদানি-রফতানিতে নিয়োজিত ব্যবসায়ীদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, স্থলপথে পণ্যজটের কারণে বেনাপোল বন্দর দিয়ে খালাস প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতার কারণে বেশির ভাগ বহুজাতিক কোম্পানি রেলপথে পণ্য আমদানিতে আগ্রহী হয়ে উঠছে। এমনকি রেলপথে পণ্য আনলে বিরাট অংকের ডিটেনশন চার্জ এড়ানোও সম্ভব হচ্ছে। মূলত যানজটের কারণে পণ্যবাহী গাড়ি আটকে থাকলে ওই মাশুল গুনতে হয়। রেলপথে ওই জটের ঝামেলা নেই। ফলে কম সময়ে আমদানি পণ্য দেশে প্রবেশ করতে পারে। তবে কার্গো চালানের ছাড়পত্র-সংক্রান্ত কিছু সমস্যা রয়েছে। ভারত থেকে আমদানি পণ্যবাহী ট্রেনগুলো বেনাপোল স্টেশনে কাস্টমস-সংক্রান্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করে পণ্য খালাসের জন্য যশোর স্টেশনে পৌঁছায়। তবে সেখানে দীর্ঘদিনেও লোডিং-আনলোডিং প্লাটফর্মের নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় ব্যবসায়ীদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ওসব ঝামেলা এড়াতে অনেক ব্যবসায়ী নওয়াপাড়া ও সিঙ্গিয়া স্টেশনে পণ্য খালাস করে থাকে। কিন্তু বিদ্যুৎ না থাকায় সন্ধ্যার পর সেখানেও পণ্য খালাস করা যাচ্ছে না।
সূত্র জানায়, যশোর স্টেশন থেকে প্রতিদিন ২০টি (১০ ওয়াগন) কনটেইনার খালি করতে হবে বলে ব্যবসায়ীদের জানানো হয়েছে। আর তা না করা গেলে কনটেইনার প্রতি ৯০ টাকা চার্য দিতে হবে। কিন্তু পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার অভাবে প্রতিদিন ১০টির বেশি কনটেইনারের পণ্য খালাস সম্ভব হয় না। আর বেশির ভাগ পণ্যবাহী রেল কার্গোই বাংলাদেশে সন্ধ্যায় এসে পৌঁছায়। ফলে সংশ্লিষ্ট অফিস বন্ধ থাকায় পরের দিন খালাস শুরু করতে হয়। আর ১২ ঘণ্টা পেরোনার পর সেক্ষেত্রেও ডিটেনশন চার্জ গুনতে হয়। ব্যবসায়ীরা ওই সময়সীমা ২৪ ঘণ্টা করার দাবি জানিয়েছে। তাহলে ব্যবসায়ীরা ওই ব্যয় এড়াতে পারবে। তাছাড়া ব্যবসায়ীরা বেনাপোলের দ্বিতীয় লাইনটিও দ্রুত চালুর দাবি জানিয়েছে। সেটি চালু হলে আরো বেশিসংখ্যক আমদানি পণ্যবাহী ট্রেন সেখানে অবস্থান করতে পারবে। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) ভারত থেকে রেলপথে ১ লাখ ২০ হাজার টন বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি হয়েছে। আর তা থেকে রেলওয়ের আয় হয়েছে প্রায় ৮ কোটি ২৬ লাখ টাকা। কিন্তুরেল কর্তৃপক্ষআমদানি পণ্য খালাসে ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা বাড়ায়নি।
এদিকে ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক মতিয়ার রহমান পণ্য খালাসে বেঁধে দেয়া ৩ দিনের সময়সীমা বাড়িয়ে ৫ দিন করার দাবি জানান। তাছাড়া বিদ্যমান ডিটেনশন চার্জ কমানোর পাশাপাশি যশোর স্টেশনের লোডিং-আনলোডিং প্লাটফর্মের নির্মাণকাজও দ্রুত সম্পন্ন করার দাবি জানানো হয়।
অন্যদিকে বেনাপোল স্টেশনের ম্যানেজার সাইদুর রহমান জানান, আশা করা যায় শিগগিরই বেনাপোল স্টেশনের দ্বিতীয় লাইনটি চালু হবে। রেল কর্তৃপক্ষ ব্যবসায়ীদের দুর্ভোগ লাঘবে কাজ করছে।
এ বিষয়ে বেনাপোল কাস্টমসের কমিশনার মো. আজিজুর রহমান জানান, পেট্রাপোলে দীর্ঘ জটের কারণে আমদানিকারকরা রেলপথে আমদানি করছে। এটা সবার জন্য ভালো। সেজন্য রেল সুবিধাকে আরো উন্নত করতে হবে।