ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে বরগুনাগামী লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় 'এমভি অভিযান-১০' এর মালিক মো. হাম জালাল ও স্টাফদের বিরুদ্ধে বরগুনায় মামলা দায়ের হয়েছে। রোববার বরগুনা থানায় মামলা গ্রহণের আদেশ দিয়েছেন বরগুনার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। জনস্বার্থে মামলাটি দায়ের করেন বালিয়াতলী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নাজমুল ইসলাম নাসির।
এর আগে, শনিবার দুর্ঘটনাস্থল সদর উপজেলার পোনাবালিয়া ইউনিয়নের দিয়াকুল এলাকার গ্রাম পুলিশ (চৌকিদার) মো. জাহাঙ্গীর হোসেন ঝালকাঠি থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেন।
এদিকে, এ আগুনের ঘটনায় লাফিয়ে পড়া মানুষের সন্ধানে রোববার সকাল থেকে তৃতীয় দিনের মত অভিযান চালাচ্ছে ফায়ার সার্ভিস ও কোস্টগার্ড সদস্যরা। তবে এখন পর্যন্ত কোন মরদেহ উদ্ধারের খবর পাওয়া যায়নি।
সকাল ৮টা থেকে ঝালকাঠি ও বরিশালের ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিদল এবং কোস্টগার্ডের একটি টিম লঞ্চঘাট এলাকা থেকে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করেন। নদীতে লাফিয়ে নিখোঁজদের উদ্ধারে ডুবুরি দল সন্ধা পর্যন্ত কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন ঝালকাঠি ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক মো. কামাল উদ্দিন ভুঁইয়া।
নিখোঁজদের স্বজনদের দাবি, কমপক্ষে অর্ধশতাধিক মানুষ নদীতে লাফিয়ে এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। তাদের সন্ধানে সুগন্ধার তীরে অপেক্ষায় আছেন স্বজনরা। কেউ আবার ট্রলার নিয়ে নদীর বিভিন্ন প্রান্তে খুঁজে বেড়াচ্ছেন প্রিয়জনকে। কারো হাতে নিখোঁজদের ছবি। তা নিয়ে নদীতীরের বাসিন্দাদের দেখাচ্ছেন, আর বিলাপ করছেন। কেউ আবার নদীতীরের মিনিপার্ক, ডিসিপার্ক, লঞ্চঘাট এবং ঘটনাস্থল দিয়াকুল এলাকায় ঘুরছেন। অন্তত নিখোঁজ স্বজনদের মৃতদেহ যেন বাড়ি নিয়ে যেতে পারেন, সেই অপেক্ষায় আছেন স্বজনরা।
তাদের অভিযোগ, লঞ্চ কর্তৃপক্ষ যদি আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে লঞ্চটি কোথাও ভেড়াতে পারতো, তাহলে এত প্রাণহানি ঘটতো না। কর্তৃপক্ষের অবহেলায় এ মৃত্যু হয়েছে। তাই লঞ্চ কর্তৃপক্ষের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন নিখোঁজদের স্বজনরা।
এদিকে, বরগুনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক জালাল আহমেদ জানান, লঞ্চ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় লঞ্চ কর্তৃপক্ষ ও স্টাফদের গাফিলতি ছিল কিনা এ বিষয়ে তদন্ত করা হবে।
এর আগে, গতকাল বরগুনার পোটকাখালী গণকবরে ২১ কবরে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত ২৩ জনকে দাফন করা হয়। বরগুনার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান সদর উপজেলার পোটকাখালী সরকারি গণকবরে উপস্থিত থেকে দাফনকার্য সম্পন্ন করেন। এ ছাড়া ১৪ জনের মরদেহ পারিবারিকভাবে দাফন করা হয়। বাকিদের ডিএনএ স্যাম্পল রেখে দেয়া হয়েছে।
এদিকে, লঞ্চে আগুনে দগ্ধ ৩২ জনের চিকিৎসা চলছে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। ভয়াবহ দুর্ঘটনার জন্য লঞ্চের স্টাফদেরই দুষেছেন বেঁচে যাওয়া যাত্রীরা। হাসপাতালের বেডে চিকিৎসারত একাধিক রোগী জানান, বরিশাল নদীবন্দর পার হওয়ার পূর্ব থেকেই দ্বিতীয় তলার ডেক গরম হওয়ায় বসা যাচ্ছিল না। বিষয়টি একাধিকবার লঞ্চ স্টাফদের জানানোর পর তারা গরম নিরসনে ব্যবস্থা করে। কিন্তু তাতেও মানছিল না। ওই সময় লঞ্চটি বরিশাল নৌবন্দরে নোঙ্গর করলে এত বড় দুর্ঘটনার হাত থেকে আমরা বেঁচে যেতাম। এজন্য লঞ্চ স্টাফদের কঠোর বিচারের দাবি জানান তারা।
এছাড়া, রাজধানীর শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ১৭ জনের চিকিৎসা চলছে। ইতোমধ্যে চিকিৎসাধীন একজনের মৃত্যু হয়েছে সেখানে।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে ঢাকা থেকে বরগুনার উদ্দেশে যাওয়া এমভি অভিযান-১০ নামের লঞ্চটিতে অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এতে এখন পর্যন্ত ৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন ৭০ জনের বেশি। তাদেরকে ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল, বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতাল ও ঢাকা শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়।