দিঘলিয়া এমএ মজিদ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষের ও উপাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে কলেজের অর্থ আত্মসাৎ ও কলেজটিতে যিনি উপাধ্যক্ষ এবং ভারপ্রাপ্ত অধ্যাক্ষের দায়িত্ব আছেন, শিক্ষক হিসেবে তাঁর নিয়োগ নানা অনিয়ম ও দুর্ণীতির মাধ্যমে নিয়োগ হয়েছে বলে অভিযোগে জানা যায়। আর এ সকল অনিয়ম ও দুর্ণীতির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ স্বাক্ষী দুইজন হলেও কেউ সুস্পষ্ট সত্য কথা প্রকাশ করছেন না। চলছে দুইজনের দায় সারা প্রতিযোগিতা। কলেজের রক্ষিত অর্থ অবৈধ পন্থায় উত্তোলন করে আত্মসাৎ করে শুনানো হচ্ছে নানা কল্প কাহিনী। যা শুনে বা দেখে সকলমহলের নিকটই প্রতীয়মান হয়েছে টাকা ব্যাংক থেকে তুলে অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ নিজেরাই আত্মসাৎ করেছেন বলে জানা গেছে। যদিও নানা মহল বলছে উপাধ্যক্ষ অধ্যক্ষকে নানা ভাবে জিম্মি করে ওই টাকা কৌশলে উত্তোলন ও আত্মসাৎ করার কথা। কিন্তু ওই কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য করেন নি। চলছে অনিয়ম ও দুর্ণীতি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ।
বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, দিঘলিয়া এমএ মজিদ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মীর্জা নুরুজ্জামান ও উপাধ্যক্ষ খান মোঃ রওশন আলী। কলেজটি ২০১৮ সালে সরকারি হয়। কলেজের প্রতিষ্ঠাতা দানবীর এমএ মজিদ কলেজটি প্রতিষ্ঠার পর কলেজের নামে খুলনা ন্যাশনাল ব্যাংকে ৩ লাখ টাকা এফডিআর করে জমা রাখেন। ওই টাকা বিভিন্ন সময় মেয়াদান্তে উঠানো এবং জমা করতে করতে মোট টাকার অঙ্ক দাঁড়ায় ২১ লাখ ৩৯ হাজার ১৬১ টাকা(এফডিআর নং এনটিডি ০১৬৫৬১/৫৫০৪/৮৯/। প্রকাশ থাকে যে ২০০৭ সালে মেয়াদান্তে টাকা তুলে রেজুলেশনের মাধ্যমে ১০ লাখ টাকা পুনরায় এফডিআর করা হয় এবং ১ লাখ ৭৪ হাজার টাকা কলেজ উন্নয়নে ব্যয় করার রেজুলেশনে সিদ্ধান্ত থাকলেও তা বাস্তবায়ন করা হয় নি। এদিকে ২০১৬ সালে ওই এফডিআর এর টাকার অঙ্ক দাঁড়ায় ২১ লাখ ৩৯ হাজার ১৬১ টাকা। ওই টাকা উত্তোলন ও আত্মসাতের অশুভ উদ্দেশ্যে অধ্যক্ষ মীর্জা নুরুজ্জামানও উপাধ্যক্ষ খান মোঃ রওশন আলী পরিচালনা পরিষদের কতিপয় সদস্যের যোগ সাজসে কলেজের ব্যাংকে জমাকৃত টাকা আত্মসাৎ করেন। এদিকে কলেজের জমাকৃত টাকাসহ ক্যাম্পাসের গাছ বিক্রি করে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যসহ পরিচালনা পরিষদের কতিপয় সদস্য দিঘলিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট ২০২০ সালের ২১ মার্চ অভিযোগ দায়ের করেন কিন্তু দীর্ঘ সময় পার হলেও অভিযোগের ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ না নেওয়ায় অভিযোগকারীদের পক্ষ থেকে পরবর্তীতে দিঘলিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাহবুবুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করলে অভিযোগ তদন্তের জন্য দিঘলিয়া উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ মাহফুজুর রহমানকে অভিযোগ তদন্তের জন্য পত্র দেন। ওই চিঠির প্রেক্ষিতে দিঘলিয়া উপজেলা শিক্ষা অফিসার মাধ্যমিক মোঃ মাহফুজুর রহমান উভয় পক্ষকে চিঠির মাধ্যমে অবগত করেন ৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ ইং তারিখে তদন্তের সামনে নিজ নিজ প্রমাণাদি নিয়ে হাজির থাকতে। সকল পক্ষের উপস্থিতিতে গত ৮ সেপ্টেম্বর কলেজের অভিযোগের ব্যাপারে পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করেন তদন্তে দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা। তদন্তে বেরিয়ে আসে কলেজের অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষের কলেজের এফডিআর করে ব্যাংকে জমা রাখা প্রায় ২০ লাখ টাকা নানা কুট কৌশলে তুলে আত্মসাৎ করেছেন বা চেষ্টা করেছেন। তদন্তের সময় টাকার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করায় জবাবে সন্তোষজনক জবাব আসেনি এমনই কথা জানা গেছে। কলেজের ১ লাখ ৭৪ হাজার টাকা ব্যাংক থেকে তুলে কলেজের উন্নয়নের রেজুলেশন থাকলেও সে টাকায় কোন কাজ করা হয়নি। পরবর্তীতে কমিটির সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে পরিচালনা পরিষদের রূপরেখা পরিবর্তন করে ব্যাংকে এফডিআর করে রাখা প্রায় ২২ লক্ষ টাকা ও মেহগুনি গাছ বিক্রি ২লক্ষ টাকার থেকে সোনালী ব্যাংক দিঘলিয়া শাখার কলেজের হিসাব নম্বরে ৫ লাখ টাকা জমা রাখা হয়েছে। বাকী টাকার ২ লাখ টাকা কলেজের মামলায় খরচ হয়েছে, ১০ লাখ টাকা কলেজের সাবেক সভাপতি, এমএ মজিদ মাধ্যমিক বিদ্যালের সবেক প্রধান শিক্ষক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান খান নজরুল ইসলামের নিকট জমা আছে এবং প্রায় ৭লাখ টাকা কলেজের সাবেক সভাপতিকে দেওয়া হয়েছে বলে অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ তদন্ত কর্মকর্তার সামনে জানিয়েছেন, যার কোন সন্তোষজনক কাগজপত্র জমা দিতে পারেন নি বলে জানা গেছে। এদিকে কলেজের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় আলিয়া রওশন প্রথম প্রথম স্থান অধিকার করলেও খান রওশন আলী নিয়োগ বোর্ডের তৈরি করা ও স্বাক্ষর করা ফলাফল ও রেজুলেশন উপেক্ষা করে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে ঊর্ধ্বতন মহলে জমা দিয়ে তাঁর জালজালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগ নেন। কাগজপত্রে আলিয়া রওশনকে বাদ রেখে খান মোঃ রওশন আলী তার নিয়োগ বৈধ করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। আলেয়া রওশন মেধা তালিকায় প্রথম হওয়া সত্বেও খান মোঃ রওশন আলী ভুয়া কাগজপত্রে প্রথম দেখিয়ে তিনি সিনিয়র সেজে কলেজের ব্যবস্থাপনা বিষয়ের শিক্ষক নিয়োগ বৈধ করার অভিযোগ রয়েছে।জালিয়াতির মাধমে নিয়োগ পাওয়া খান রওশন আলী বর্তমানে উপাধ্যক্ষ পদ দখল করেছেন যে পদে আসিন হবেন আলিয়া রওশন। খান মোঃ রওশন আলী কয়েকজন টিআরকে সাথে নিয়ে অধ্যক্ষ মীর্জা নুরুজ্জামানকে নানামুখী চাপে ফেলে কলেজের অর্থ আত্মসাৎ ও নানা মুখী স্বার্থ হাসিল করেছেন এমন অভিযোগ এলাকার মানুষের মুখে মুখে। এমনকি ওই কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যকে উপেক্ষা করে নিজের ক্ষমতার গন্ডি তৈরি করে নানা অনিয়মের জন্ম দিয়েছেন এ কলেজটিতে বলে জানা গেছে। যা তদন্ত করলে সত্যতা বেরিয়ে আসবে। দিঘলিয়ার কৃতী সন্তান মরহুম দানবীর এমএ মজিদ। যার সম্পদ ও অর্থায়নে দিঘলিয়ায় একাধিক সামাজিক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্ম হয়েছে। যিনি না হলে কলেজের জন্ম হতোনা, তার সন্তানদেরও উপেক্ষার চোখে দেখেন এই উপাধ্যক্ষ বলে জানা যায়। একই ষড়যন্ত্রের জাল তৈরি হয়েছে এমএ মজিদ মাধমিক বিদ্যালয়ে। বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক ও পরবর্তীতে সভাপতি হয়ে খান নজরুল ইসলাম বিদ্যালয়ে নানা অনিয়ম, ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্কুল কলেজ থেকে কুয়েটের ড. বাসুদেব, মুন্সী তৌহিদুর রহমান এমনকি ১৭ বছর দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এমএ মতিনকে কমিটি হতে বাদ দিয়েছেন। স্কুলের কমিটি গঠনের সময় প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ফরম পূরণ না করে বোর্ড থেকে কমিটি করে এনে বিদ্যালয় চালিয়েছেন যা সম্পূর্ণভাবে নিয়ম বহির্ভূত। নিরোপেক্ষ তদন্ত হলেই সাবেক এ প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির ক্ষক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়মের রহস্য উন্মোচন হবে। ইতোপূর্বে ২০১০ সালে কলেজের সভাপতি থাকাকালীন কমিটির সদস্যগণ অনাস্থা জ্ঞাপন করেছিলেন বলে জানা যায়। এদিকে কলেজটির নানা অনিয়ম, দুর্ণীতি ও অর্থ আত্মসাতের ব্যাপারে গঠিত তদন্তের ৪ মাস গত হলেও কর্মকর্তা তদন্ত রিপোর্ট দানে গড়িমসি করছেন, এমন অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্ট মহল। কেউ কেউ তদন্ত রিপোর্ট দানে গড়িমসি করায় একটা অশুভমহলের অপতৎপরতাকে দায়ী করছেন।
দিঘলিয়া এমএ মজিদ কলেজের নয় ছয় করা অর্থ উদ্ধার ও এ অনিয়ম এবং দুর্নীতির সাথে যাঁরা জড়িত তাঁদের সবাইকে আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবী সর্ব মহলের।