চলমান করোনা সংকট মোকাবিলা ও সামাজিক কাজে আর্তমানবতার সেবায় অবদান রাখার স্বীকৃতি স্বরূপ ‘শেখ হাসিনা ইয়্যুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড ২০২০ পেলেন রংপুরের পীরগাছার সন্তান বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষার্থী মুহতাসিম আবশাদ জিসান। তিনি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন চলো স্বপ্ন ছুঁই এর প্রতিষ্ঠাতা। বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকায় ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়-এর উদ্যোগে এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় ‘ঢাকা ওআইসি ইয়্যুথ ক্যাপিটাল ২০২০’-এর অধীনে প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর নামে ‘শেখ হাসিনা ইয়্যুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড ২০২০’ শীর্ষক প্রতিযোগিতা তিনি ১০০ জন বিজয়ীর মধ্যে রংপুরের জিসান একমাত্র জয়ী হিসেবে তাকে শেখ হাসিনা ইয়্যুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড ২০২০ প্রদান করা হয়।
জানা গেছে, তিন হাজার ৫শ প্রার্থীর মধ্যে তরুণদের ১০টি ভিন্ন ভিন্ন ক্যাটাগরিতে একক ও দলীয়ভাবে মোট ১০০ জনকে পুরস্কার ও সম্মাননা প্রদান করা হয়।
অ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের সভাপতিত্বে এ ছাড়া বিশেষ অতিথি ছিলেন অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন এর সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাম্বাসেডর হিসেইন ইব্রাহিম তাহা, মালদ্বীপের মাননীয় যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রী আহমেদ মাওলুফ, রাশিয়ার যুব বিষয়ক ফেডারেল এজেন্সির প্রধান সেনিয়া রাজুভায়েভা, মাননীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড.একে আবদুল মোমেন, তাতারস্তান প্রজাতন্ত্র এর মাননীয় যুব মন্ত্রী তিমুর আয়হানসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
তরুণ এই সেচ্ছাসেবক রংপুরের পীরগাছা উপজেলার তাম্বুলপুর ইউনিয়নের নটাবাড়ি গ্রামের স্বনামধন্য ডাক্তার পরিবারের মরহুম ডা. সামসুল হকের নাতি এবং আবু হেনা মো. শাহনেওয়াজ ফুয়াদের বড় ছেলে। বর্তমানে তিনি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স ডিসিপ্লিনে প্রথম বর্ষে অধ্যয়নরত আছেন।
মুহতাসিম আবশাদ জিসান বলেন, "আমার সংগঠনের সহযোদ্ধারা সঙ্গে না থাকলে আমার এই অর্জন সম্ভব হতো না, এই অর্জন আমার একার নয়, আমার এই অর্জন সংগঠনের সকল সহযোদ্ধাদের। সেই সঙ্গে যেসব শুভাকাক্সক্ষীরা আমাদের সব সময় সহযোগিতা করে তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।
জিসানের অ্যাওয়ার্ড পাওয়ায় খুশি গোটা রংপুরসহ পীরগাছা উপজেলার মানুষ। অজোপাড়া গায়ের একজন শিক্ষার্থী হয়ে একের পর এক বিভিন্ন সম্মাননায় তাকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ।
উল্লেখ্য, ২০১৮ মাত্র ৩০ জন সদস্য নিয়ে চলো স্বপ্ন ছুঁই যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে উত্তরবঙ্গের ৭টি জেলায় ৪৫০ এর অধিক সদস্য এসডিজির পাঁচটি প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে। ত্রাণ কার্যক্রম দিয়ে শুরু হলেও পরিস্থিতি মোকাবিলায় জনসচেতনতা বাড়াতে সারা শহরে জীবাণুনাশক স্প্রে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দোকানপাটের সামনে নিরাপদ দূরত্বের সুরক্ষা ছক অঙ্কন, দেয়াল লিখন পোস্টারিং ইত্যাদির পাশাপাশি মানুষের স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়াতে পথচারীদের মাঝে নিয়মিত মাস্ক, স্যানিটাইজার, হ্যান্ডওয়াশ ইত্যাদি বিতরণ করেন তারা। সেই সাথে মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পেইন এবং বিনা মূল্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন বিতরণ, রেস্টুরেন্টের ওয়াশ রুমে স্যানিটারি ন্যাপকিন বক্স স্থাপন করে "চলো স্বপ্ন ছুঁই "। করোনায় কর্মহীন অসহায় মানুষদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৪৫০০ এর বেশি পরিবারকে ত্রাণ-সহায়তা প্রদান, কর্মহীন হয়ে পড়া সাধারণ মানুষকে আত্ম নির্ভরশীলতা ফিরিয়ে দিতে "স্বপ্নপূরণ" নামে প্রকল্প, কর্মক্ষম মা-বোনদের সেলাই মেশিন, হাঁস-মুরগি ইত্যাদি প্রদানের পাশাপাশি ক্ষুদ্র ব্যবসায় সহযোগিতা করছে "চলো স্বপ্ন ছুঁই"। এখন পর্যন্ত ৭৫ জন নারীকে সেলাই মেশিনসহ শতাধিক পরিবারে সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে পেরেছে এই সংগঠনটি।