খুলনার পাইকগাছা পৌরসদর থেকে উপজেলার লতার হাট পর্যন্ত প্রায় ৬ কিলোমিটার সড়কের নির্মাণকাজ ৪ বছরেও শেষ হয়নি। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সড়কটির নির্মাণ শেষ না হওয়ায় জনদুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। সরেজমিন দেখা গেছে, সড়কটির কিছু জায়গায় খোয়া ঢালা হলেও অধিকাংশ জায়গা খোঁড়া অবস্থাতেই পড়ে আছে। বাধ্য হয়ে বেহাল এ সড়কটি দিয়েই মানুষ ও যানবাহন চলাচল করছে। উপজেলা প্রকৌশলী অফিস সূত্রে, ২০১৮ সালে সড়কটিতে পিচ ঢালাইয়ের জন্য ৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। খুলনা বিভাগ উন্নয়ন প্রকল্প (কেডিআরআইডিপি) অধীনে সড়কটি নির্মাণের কার্যাদেশ পায় ঢাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স ডলি কনস্ট্রাকশন। ওই বছরের ১ অক্টোবর সড়কটি খুড়া-খুঁড়ি শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। নির্মাণকাজ শেষ করার কথা ছিল ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবরের মধ্যে। কিন্তু অর্ধেকের বেশি কাজ ফেলে রেখে নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। প্রকৌশলী কার্যালয় বলছে, সড়কটির মাত্র ৩৫ শতাংশ কাজ করা হয়েছে। গত ৪ বছরেও কাজ শেষ না হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছে দুটি ইউনিয়নের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। ইউনিয়নের পুতলাখালী গ্রামের খিরোদ সরকার বলেন, উপজেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র সড়ক এটি। কিন্তু চার বছর ধরে খুঁড়ে রেখে কাজ শেষ না করায় চরম দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছি। সড়কটি দিয়ে মানুষ কোনো রকমে চলাচল করলেও কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। আবার বর্ষা মৌসুমে একটু বৃষ্টিতেই কাঁদা জমে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে যায়। একই এলাকার গীতা সরকার বলেন, বর্ষা মৌসুমে আমাদের এ এলাকার ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুল-কলেজে যাওয়া একপ্রকার বন্ধ হয়ে পড়েছিল। খুব জরুরি কাজ না থাকলে আমরাও এ সড়কটি দিয়ে যাতায়াত করতাম না। ইউপি সদস্য স্বপন কুমার মন্ডল ও রিনা পারভিন বলেন, সড়কের কোথাও কোথাও ইট-খোয়া-বালু ফেলা হয়েছে, আবার অধিকাংশ সড়ক খুঁড়ে খাল বানিয়ে রেখেছে। অসুস্থ রোগীসহ বিভিন্ন পণ্যবহনে কোন যানবাহন আসতে পারে না। রাস্তার দু’পাশ দিয়ে কিছু মোটরসাইকেল চলাচল করলেও ভ্যান বা অন্যান্য যানবাহন চলতে পারে না। ইউপি চেয়ারম্যান কাজল কান্তি বিশ্বাস বলেন, আমি সবেমাত্র চেয়ারম্যান হিসেবে ইউপিতে যোগ দিয়েছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে সড়কটির নির্মাণকাজ শেষ করা ব্যবস্থা করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অনুরোধ করেছি। কার্যাদেশ পাওয়া স্বর্ণা ভৌমিক, মেসার্স ডলি কনস্ট্রাকশন প্রজেক্টের প্রকৌশলীর মোবাইল ফোন রিসিভ না হওয়ায় কোনো মন্তব্য নেওয়া যায়নি। উপজেলা প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান খান জানান, সড়কটি খুলনা বিভাগ উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে থাকায় কাজটির দেখাশোনা করে খুলনা জেলা প্রকৌশলী অধিদপ্তর। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি কাজ ফেলে চলে যাওয়ায় পুনরায় দরপত্র আহ্বানের জন্য কাগজপত্র তৈরি করে খুলনা জেলা অফিসে জমা দিয়েছি। বৃষ্টির কারণে মাপজোক করে তথ্য অফিসে পাঠাতে দেরি হয়েছে। খুলনা জেলা (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী কামরুজ্জামান জানান, নির্দিষ্ট সময়ে কাজটি শেষ না করতে পারায় মেসার্স ডলি কনস্ট্রাকশনের কার্যাদেশ বাতিল করা হয়েছে এবং আগামী দুই বছর ওই প্রতিষ্ঠান কোনো টেন্ডারে অংশ নিতে পারবে না। তাছাড়া কাজের পরিমাণ হিসেব করে প্রকল্প পরিচালকের (পিডি) অফিসে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে অনুমোদন পেলে দরপত্র আহ্বান করে আরেকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সড়কটির নির্মাণকাজ শেষ করা হবে।