নির্বাচনের সাথে সংঘাত-সহিংসতার ঘটনা সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত শুক্রবার ঝিনাইদহের শৈলকুপায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ঘিরে সহিংসতায় এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। ভোলার শিবপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত ও স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ, গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন। যশোরের কেশবপুরের তিনটি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ চেয়ারম্যান প্রার্থীদের পাঁচটি নির্বাচনী কার্যালয় ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে নৌকার কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে।
সংঘাত-সহিংসতার বাইরে চলছে হুমকি-ধমকি। জানা যায়, চলতি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতারা প্রকাশ্যে নৌকায় ভোট দেওয়া, প্রতিপক্ষ প্রার্থীদের হুমকি দিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। এ ধরনের বক্তব্যের কয়েকটি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ হলেও তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আচরণবিধি ভঙ্গের আরো অনেক ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু নির্বিকার থেকেছে নির্বাচন কমিশন। কোথাও কোথাও নামকাওয়াস্তে সাবধান করে চিঠি দিয়ে দায়িত্ব শেষ করেছে।
যখন উপজেলা পর্যায়ের কোনো নেতা একে-৪৭ ব্যবহারের হুমকি দেন কিংবা কোনো সংসদ সদস্য বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের পেটানোর হুমকি দেন, তখন নির্বাচন কমিশন চুপ করে থাকে কী করে? ভোটকেন্দ্র দখল করে রাখার কথাও বলেছেন অনেক নেতা।
অনেক স্থানে নির্বাচনের পরও এ সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। স্বাভাবিকভাবেই আশঙ্কা করা যায় যে এ ধরনের ঘটনা চলতে থাকবে। আরো অনেক হতাহতের ঘটনা ঘটবে। কিন্তু এর কি কোনো শেষ নেই? ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের কি কোনো উপায়ই নেই সরকারের হাতে?
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সংঘাত-সহিংসতার জন্য রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতাই মূলত দায়ী। নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতা ও আন্তরিকতার অভাবকেই ব্যাপকভাবে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। অন্যদিকে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীগুলোর বিরুদ্ধে যথাযথ ভূমিকা পালন না করার ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে। এ পর্যন্ত যেসব ঘটনা ঘটেছে, তা বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কমিশনের গৃহীত ব্যবস্থা মোটেও পর্যাপ্ত ছিল না। অবশ্য নির্বাচন কমিশন বরাবরই দাবি করে আসছে যে নির্বাচন সুষ্ঠু হচ্ছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশনকে বুঝতে তো হবে যে জনগণের আস্থা হারালে সেই কমিশন আর যা-ই হোক অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করা তো দূরে থাক, নূন্যতম গ্রহণযোগ্য কোনো নির্বাচনও করতে পারে না।
নির্বাচন কমিশনের মতো একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান গ্রহণযোগ্যতা হারালে তার ফল তো ভালো হবে না। কমিশন তার ক্ষমতা প্রয়োগে পিছপা হবে নাÑএটাই প্রত্যাশা।