নীলফামারীর সৈয়দপুরে বাসার মালিক ও ভাড়াটিয়ার মধ্যে বকেয়া ভাড়া নিয়ে ঝগড়া থামাতে গিয়ে মিথ্যে মামলার আসামি হলেন সৈয়দপুর পৌর স্বেচ্ছাসেবকলীগ সভাপতি মহসিন মন্ডল মিঠু। ওই মিথ্যে ও যড়যন্ত্রমুলক মামলার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেন সৈয়দপুর পৌর স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি মোঃ মহসিন মন্ডল মিঠু। ৫ জানুয়ারি তাঁর বাসার পাশে বাঙ্গালীপুর দারুল উলুম মাদরাসা মোড়ে ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করনে তিনি। এ সময় সাথে ছিলেন ফজলু চৌধুরীসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
লিখিত বক্তব্যে মহসিন মন্ডল মিঠু ওই মামলার প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, দারুল উলুম মোড় সংলগ্ন ফজলু চৌধুরীর স্ত্রীর নামে একটি বসতবাড়ী রয়েছে। বাড়ীটি প্রায় ৭ শতক জমির উপর নির্মিত। ৭ শতক জমির মধ্যে পৌনে ৫ শতক জমি জমিদারি। যার দাগ নং ১১৪৯, খতিয়ান নং ২১৩। এ জমিটি ১৯৮৪ সালে জনৈক আবুল খায়েরের কাছ থেকে রেজিস্ট্রি দলিলমুলে ক্রয় করা হয়। ওই জমির সাথে ১ দশমিক ৪৭ শতক রেলওয়ের এবং ১ দশমিক ৯৭ শতক সড়ক ও জনপথ বিভাগের। ওই জমিটুকুও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে যথাযথ নিয়মতান্ত্রিকভাবে লিজ নেয়া হয়। যার খাজনা পাতিও পরিশোধ করা হয়েছে।
আর ওই বাড়িটি ফেলে না রেখে মালিক পক্ষ জাহেদুল ইসলাম মানিক নামে এক মোটর ড্রাইভারকে ভাড়ায় দেয়। তিনি ওই বাড়িতে দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর যাবত ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করে আসছেন। ভাড়াটিয়া মানিক ব্যক্তিগত জীবনে খুবই উচ্ছৃঙ্খল ও নানা অবৈধ কাজের সাথে জড়িত। ওই বাসাতে দেহ ও মাদক ব্যবসা করে চার বছর আগে মানিক তার সহযোগী কানজুরুল ইসলাম (ড্রাইভার) নারী ও মাদকসহ এলাকাবাসী আটক করে। সে সময় বাসার মালিক বাসা ছেড়ে দেয়ার জন্য সময় দেন। কিন্তু বাসা ছাড়ার সময় নিয়েও ভাড়াটিয়া আর বাসা ছাড়েন নি। বরং বাসা মালিককে ভয়ভীতি দেখিয়ে ভাড়া বন্ধ করে দেয়।
এভাবে চলতে চলতে প্রায় ৬০ হাজার টাকা বাসা ভাড়া বকেয়া পড়ে যায়। তাগাদা দেয়া সত্বেও ভাড়াটিয়া বাসা ভাড়া পরিশোধ করতে তালবাহানা করে সময় ক্ষেপণ করে। পরে বাধ্য হয়ে ফজলু চৌধুরী বিষয়টি এলাকার তৎকালিন কাউন্সিলর আল মামুনসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের অবহিত করেন। এরপর এলাকাবাসী ভাড়াটিয়া জাহেদুল ইসলাম মানিককে নিয়ে শালিসে বসেন। শালিসে সে কথা দেয় বকেয়া ভাড়া অল্প সময়ের মধ্যে মিটিয়ে দিবে। সে সময় ভাড়াটিয়া বাসা ভাড়া না বাড়ানোর অনুরোধ করলে মালিক তা মেনে নেয়।
কিছুদিন পর ভাড়াটিয়া মাত্র ১০ হাজার টাকা পরিশোধ করে। এরপর ভাড়াটিয়া প্রতি মাসে ভাড়া বকেয়া রাখতে রাখতে আবার প্রায় ৩০ মাসের ভাড়া বাকি পড়ে যায়।
এ অবস্থায় বাসার মালিক বার বার ভাড়ার তাগাদা দিলেও ভাড়াটিয়া ভাড়া পরিশোধ করতে গড়িমশি করতে থাকে। অনেকটা নিরুপায় হয়ে বাসা মালিক বিষয়টি থানায় অবহিত করেন। অভিযোগ পেয়ে থানা পুলিশের উপস্থিতিতে ভাড়াটিয়া মানিক জানায় ঘরের চালের টিন ফুটো হয়েছে, বৃষ্টির পানি পড়ে, বাসায় ঘুমিয়ে থাকা যায় না। তাই ভাড়া দেয়া বন্ধ করে দেই। বাসার টিন পাল্টে দিলে ভাড়া চালু করবো। তার কথা মত গত ৩ জানুয়ারি সকালে ফজলু চৌধুরী মিস্ত্রি ডেকে টিন লাগানোর ব্যবস্থা করে। ভাড়াটিয়া মানিকের সম্মতি নিয়ে পুরনো টিন খোলার পর নতুন টিন লাগানোর প্রাক্কালে হঠাৎ মানিক বাঁধা দেয়।
কারণ জানতে চাইলে সে বলে এই বাড়ী ফজলু চৌধুরীর নয় বরং জনৈক মাসুম নামে একজনের।এ কথা বলার পর সে তার মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন থেকে প্রায় ২০/৩০ জন লোক ডেকে আনে। তারা ঘটনাস্থলে এসে হট্টগোল শুরু করে এবং ঘরের চালে ওঠা মিস্ত্রিদেরসহ ফজলু চৌধুরীকে তাড়িয়ে দেয়ার চেষ্ঠা করলে উপস্থিত এলাকাবাসীর সাথে বাকবিতন্ডার সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় সেখানে সৃষ্টি হয় হইহুল্লোড়। আর এটি দেখতে আমি সেখানে এগিয়ে যাই এবং সবাইকে বুঝিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করি।
আর এ ঘটনাটিকে রং চং দিয়ে ভাড়াটিয়া মানিক বাড়ীতে হামলা ও লুটপাটের মিথ্যে নাটক সাজিয়ে আমার বিরুদ্ধে সৈয়দপুর থানায় মামলা দায়ের করে। ওই মামলায় আসামি করা হয় আমাকে, বাসার মালিক ফজলু চৌধুরী, মিস্ত্রীসহ ৮ জনকে।আমি ওই মামলায় বর্তমানে জামিনে রয়েছি। সৈয়দপুরে যেন এ ঘটনাটি মগের মুল্লুকে পরিনত হয়েছে।
ভাড়াটিয়া কর্তৃক বাড়ী দখল। আবার উল্টো বাড়ির মালিককেই বহিরাগত উল্লেখ করে ষড়যন্ত্রমুলক মিথ্যে মামলা দিয়ে একটা চরম হয়রানীর মধ্যে ফেলা হয়েছে।
ফজলু চৌধুরী বলেন, মানিক একজন সুচতুর প্রতারক, অকৃতজ্ঞ ও বিশ্বাস ঘাতক। ওর বিপদে সহমর্মিতা দেখানোর ফল স্বরুপ সে এমন জঘন্য মিথ্যেচার ও অবিবেচকের মত আচরণ করলো। এর বিচার সে পাবে। দুই তিনদিনের মধ্যে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। আজ তার মিথ্যে মামলার জামিন নিয়ে এসে জাতির বিবেক সংবাদকর্মীদের শরণাপন্ন হয়েছি। আপনারা সঠিক তথ্য জেনে সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে থাকবেন। মানিক অনেক হয়রানী করেছে। আর ছাড় দেয়া হবেনা। দেখি তার ষড়যন্ত্র শক্তিশালী না আমাদের সততা। তিনি সকলের সহযোগীতা প্রত্যাশা করেন।