ব্রিটিশ শাষনামলে নির্মিত জরাজীর্ণ ভবনে প্রতিমূহুর্তে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলছে খুলনার পাইকগাছায় কপিলমুনি ইউপির কার্যক্রম। গ্রাম আদালতসহ পরিষদের সামগ্রীক কার্যক্রম পরিচালনা করতে যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার শঙ্কায় প্রতি দিন জনপ্রতিনিধি, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ হাজার হাজার মানুষ ওঠা-নামা করছে বাঁশ-খুঁটির ঠেকনা দিয়ে রাখা পরিষদের দ্বিতল ভবন। ১৯৩৩ সালের দিকে ৫ শতক জমির উপর নির্মিত পরিষদের ভবনটি থেকে অদ্যাবধি ইউনিয়নের ২২টি গ্রামের মানুষ নানাবিধ সেবা নিলেও ভবনটির সেবায় এগিয়ে আসেনি কেউ। কর্তৃপক্ষ বলছেন, প্রয়োজনীয় জায়গার অভাবে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও সরকার কপিলমুনি ইউপি ভবনের কমপ্লেক্স ভবনের বরাদ্দ দিতে পারছেনা। সারাদেশে দৃষ্টি নন্দন ইউপি কমপ্লেক্স ভবন তৈরী হলেও কপিলমুনির অবস্থা সম্পূর্ণ উল্টো। প্রথম দফায় ১৯৬০ সালের দিকে এরপর ২০০০ সালে এলজিইডির অর্থায়ণে পরিষদের একাংশের ছাঁদ ও পলেস্তারা সংস্কার হলেও এরপর আর ফিরে তাকায়নি কেউ। ইতোপূর্বে পরিষদের নিজস্ব ৫০ শতক বর্তমানে ২৫ শতক জমির প্রয়োজন হলেও পরিষদটি মাত্র ৫ শতক জমির উপর অবস্থিত। বেশ আগে থেকে পরিষদের জন্য কপিলমুনি সদরসহ আশপাশের এলাকায় প্রয়োজনীয় জমির জন্য অনুসন্ধান শুরু হলেও অদ্যাবধি তার অবসান হয়নি। এর উপর কপিলমুনি কেন্দ্রীক একই উপজেলায় বিনোদগঞ্জসহ দু’টি পৌরসভা বাস্তবায়নের কাজ এগিয়ে রয়েছে বহুলাংশে। কপিলমুনি কেন্দ্রীক পৌরসভা বাস্তবায়ন হলে ইউপি ভবন চলে যাবে ইউপি সীমানায়। এমন আশঙ্কার প্রেক্ষিতেও এর জন্য প্রয়োজনীয় জমির দেখভালের কাজ পিঁছিয়ে রয়েছে বলেও দাবি মহল বিশেষ। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দ্বিতল ভবনটির দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ছে, ছাদের প্রায় সব অংশে ধ্বসে খসে খসে পড়ছে। বর্ষা মৌসুমে সম্পূর্ণ ছাদটি ধ্বসে পড়ার আশঙ্কায় বিভিন্ন স্থানে বাঁশের খুঁটি দিয়ে ঠেক (পেয়ালা) দেওয়া রয়েছে। দ্বিতীয় তলার ৪টি কক্ষের সবগুলোই মারাতœক ঝুঁকিপূর্ণ। মেঝে ও ছাঁদ জরাজীর্ণ। প্রায় সব জায়গায় ঢালাইয়ের নষ্ট রড বেরিয়ে উঁকি মারছে। পায়ের ভারে প্রতি মূহুর্তে খসে খসে পড়ছে ছাদের ঢালাইয়ের অংশ বিশেষ। নিচতলার অধিকাংশ কক্ষই পরিত্যাক্ত, যেখানে বর্তমানে সাপ ও কীটপতঙ্গের বসবাস। জানালাগুলোও ভেঙ্গে গেছে বৃষ্টির শুরুতে বাইরে পানি পড়ার আগেই হালকা বাতাসের ঝাপটায় ভেতরে ঢুঁকে পড়ে পানি। এরপরও একপ্রকার বাধ্য হয়ে ইউনিয়নের ২২ টি গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ নিত্য সেবা নিচ্ছেন পরিষদের এই ভবন থেকে। একেবারেই যেন বাধ্য হয়ে তাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চেয়ারম্যান, মেম্বর, সচিব ও সাধারণ মানুষ নিত্য কাজ মেটাচ্ছেন। ভবনটির নিচে ৫টি দোকান ঘর বরাদ্ধ দেওয়া রয়েছে, তারাও ব্যবসা পরিচালনা করছেন জীবনের শংকা নিয়ে। ভবনের অবস্থাটা এতটাই নাজুক যে, যেকোন মূহুর্তে মূল ভবন ধ্বসে ঘটে যেতে পারে কোনো বড় ধরনের প্রাণঘাতি দুর্ঘটনা। এদিকে জরাজীর্ণ ইউনিয়ন পরিষদ ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করার জন্য পরিষদ কর্তৃপক্ষ ইতোপূর্বে বিভিন্ন সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করলেও কাজ হয়নি। আবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা পরিষদ থেকে একাধিকবার ভবনটি পরিদর্শনসহ আধুনিক ভবনের প্রতিশ্রুতি দিলেও অদ্যাবধি কাজ হয়নি। স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ সেবা নিতে আসা বাসিন্দারা জানান, বাধ্য হয়েই ইউপি ভবনে সেবা দেওয়া-নেওয়া করতে আসতে হয় তাদের। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের করুণ পরিস্থিতি প্রতি নিয়ত প্রসারিত হচ্ছে। আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ যেন, ভবনটি ধ্বসে কোনো দুর্ঘটনার সম্মুখীন হতে না হয়। পরিষদে সেবা নিতে আসা দেবাশীষ মন্ডল বলেন, ভবনের অবস্থা ফুলদানিতে রাখা বাসি ফুলের ন্যায় দশা, হালকা হাওয়াতে ঝরে পড়বে পাঁপড়ি। ইউপি সচিব মো. আ. গণি গাজী বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিমূহুর্তে দুর্ঘটনার শঙ্কায় পরিষদের নিত্য কাজসহ ডিজিটাল সেন্টারের কাজ করছি। পরিষদের চেয়ারম্যান মো. কওছার আলী জোয়ার্দার বলেন, বর্তমানে জীবন হাতের মুঠোয় নিয়ে প্রতিদিন ১২ জন মেম্বর, সচিব ও গ্রামপুলিশসহ প্রাত্যহিক কাজ-কর্মের পাশাপাশি গ্রাম আদালতের কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়।