লোনাপানির বাগদা চিংড়ি চাষ নিয়ে খুলনার পাইকগাছায় ঘের ও জমির মালিক মুখোমুখি অবস্থান করছেন। একদিকে পরিবেশ বিধ্বংসী লোনাপানির চিংড়ির ঘের বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন ও সভা সমাবেশ করছে দরিদ্র জমির মালিকরা। অন্যদিকে লোনাপানির ঘের করার দাবিতে প্রভাবশালী ঘের মালিকরা স্মারকলিপি প্রদান করেছেন। ফলে স্থানীয় নেতারা পড়েছেন বেকায়দায়। কে কোন পক্ষে থাকবেন আর থাকবেন না তা নিয়ে রিতিমতো গোলকধাঁধায় রয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন রাজনৈতিক নেতা জানান, আমি বুঝতে পারছি না আসলে কি হচ্ছে। কিছুদিন আগে যিনি লোনাপানির ঘের বিরোধী ছিলেন, তিনি আজ পক্ষে মতামত দিচ্ছেন। আবার কেউ কেউ বলছেন, লোনাপানির ঘেরের সাথে সাথে ধান চাষের উপযোগী হতে হবে। লোনাপানির কারণে ধ্বংস হয়েছে সবুজ সমারো। হ্রাস পেয়েছে কৃষিজাত ধান অন্যান্য ফসল। মুষ্টিমেয় ব্যক্তি ধনী শ্রেণি বনে গিয়েছে। সীমিত মানুষের কর্মস্থান হলেও কর্মহীন হয়েছে অধিকাংশ মানুষ। যার ফলে কর্মহীন মানুষ অধিবাসন হয়েছেন। চলতি বছর থেকে লোনাপানির চিংড়ির ঘের বন্ধের দাবিতে জমির মালিকরা মানববন্ধন করলেও বিভিন্ন কৌঁশল অবলম্বন করছেন প্রভাবশালী ঘের মালিকরা। একাধিক ঘের ব্যাবসায়ী বলছেন, আমরা তো বিগত দিনে চিংড়ির ভাইরাস জনিত কারণে লাখ লাখ টাকা ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি। নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে থাকার তাগিদে ঘের করে বাঁচতে চায়। এই ঘের বন্ধ হলে আমাদের অনাদায়ী পাওনা টাকা আদায় করা সম্ভব হবে না। যার ফলে আমাদের পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করতে হবে। অন্যদিকে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় লোনাপানির চিংড়ি চাষের বিরুদ্ধে চলছে মানববন্ধনসহ সভা সমাবেশ। যার ফলে চিংড়ি চাষি ও লোনাপানি বিরোধী আন্দোলন কারিদের মধ্যে চলছে চোর পুলিশ খেলা বলে জানান ঘের ব্যাবসায়ীরা। একদিকে লোনাপানি বিরোধী সমাবেশ অন্যদিকে লোনাপানির পক্ষে স্বরকালিপি প্রদান। ইতিমধ্যেই স্থানীয় এমপি ও উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে কয়েকটি আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেই আলোচনাসভায় লোনাপানি বন্দে মতামত দিলেও অনেকেই আবার পক্ষে পরোক্ষ ভাবে অবস্থান করছে। ‘পরিবেশ বিধ্বংসী লবণ পানিকে না বলি, পরিবেশের পক্ষে অবস্থা করি’- সম্প্রতি এক মানববন্ধনে ভোলটন মন্ডলের সভাপতিতত্বে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার ইকবাল মন্টু, ভাইস চেয়ারম্যান শিয়াবুদ্দীন ফিরোজ বুলু, ইউপি চেয়ারম্যান রিপন কুমার মন্ডল, ইউপি সদস্য সুকুমার কবিরাজ, কিংশুক রায় মঙ্গল গাইন, বিনতা রানী সরকার, মেরী রানী সরদার, লক্ষ্মী রানী সরকার, হরিদাশ মন্ডলসহ স্থানীয় সর্বসাধারণ উপস্থিত ছিলেন। এ সময় লবণপানি না ঢোকানোয় তরমুজ, তিল ও সবজি চাষে বিঘাপ্রতি জমিতে প্রায় দেড় লাখ টাকা আয় করতে পেরেছেন কৃষকেরা। একদিকে জমির উর্বরতা ও মাটির গুণাগুণ বেড়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে জমির মালিক ও কৃষকেরা ফসল ফলিয়ে কৃষিসমৃদ্ধ দেশ গড়ার পাশাপাশি তাঁরা স্বাবলম্বী হচ্ছেন বলে দাবি করেন। তারা আরো বলেন, লবণপানির চিংড়ি চাষের ফলে পানির ঢেউয়ে সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে পাকা ও কাঁচা রাস্তা ভেঙে নষ্ট হচ্ছে, ঘেরমালিক ওয়াপদার রাস্তা কেটে নষ্ট করছে। যেখানে কেটে পাইপ ঢোকানো হচ্ছে, সেখানে নিচু হয়ে নদীর জোয়ারের পানি প্রবেশ করে ভেঙে এলাকা প্লাবিত হয়ে ক্ষতি হচ্ছে। অপরদিকে, চিংড়ি চাষের সুফল তুলে ধরে ও ধান চাষ অব্যাহত রাখতে গত বুধবার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানসহ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দপ্তর বরাবর জমির মালিকদের পক্ষে সহ¯্রাধিক লোকের স্বাক্ষরিত স্মারকলিপি দিয়েছেন। উপস্থিত ছিলেন, দেলুটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্মল কান্তি মন্ডল, আবুল হোসেন, নিরঞ্জন রায় ও বিভূতিভূষণ রায়। এ ছাড়া জেলা প্রশাসকসহ ৫টি দপ্তরে অনুলিপি দেয়া হয়েছে বলে জানান। এদিকে উভয় পক্ষের বিভিন্ন কর্মসূচির কারণে এলাকায় কোনো অশান্তি তৈরি না হয় সে ব্যাপারে উদ্বেগ জানিয়েছে এলাকাবাসী। সচেতন মহল বলেছেন, লোনাপানির চিংড়ির চাষ যেমন প্রয়োজন তেমনি ধান চাষের গুরুত্ব অনেক বেশি।