খুলনার পাইকগাছায় সমুদ্রগামী জেলেদের জীবনমান বেড়েছে। উন্নয়ন হয়েছে আর্থসামাজিক ও যোগাযোগ ব্যবস্থা। দক্ষ প্রশিক্ষণ ও সরকারি সহায়তা পেয়ে অনেকেই পেশা পরিবর্তন করে ঝুঁকে পড়েছেন আয় বৃদ্ধিমূলক কর্মকান্ডে। অনেকেই আবার বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরি নিয়েছেন। বর্তমানে অত্র উপজেলায় নিবন্ধিত জেলেদের সংখ্যা ৫হাজার ৮৬৩জন। মৎস্যজীবীদের আর্থসামাজিক উন্নয়ন, জীবনমান উন্নয়ন, নারী ক্ষমতায়ন, মৎস্য আহরণের মাত্রা ও ধ্বংসাত্বক মৎস্য আহরণের কার্যক্রম হ্রাস, টেঁকসই মৎস্য আহরণ পদ্ধতির মাধ্যমে উপকূলীয় ও সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণ, খাদ্য নিরাপত্তা, শিক্ষা ও চিকিৎসা নিশ্চিতকরণ, স্বাস্থ্য ও পুষ্টির উন্নয়ন সাধন, উদ্যোক্তা তৈরীতে সহায়তাকরণ ও জীববৈচিত্র রক্ষা করার লক্ষে অত্র উপজেলায় বাস্তবায়ন করা হচ্ছে সাসটেইনেবল কোস্টাল এ- মেরিন ফিশারিজ প্রজেক্ট। এ প্রকল্পের আওতায় ৫টি ইউনিয়নের ১০টি গ্রামে ১ হাজার ২০২ জন সমুদ্রগামী জেলেদের নিয়ে ১০টি মৎস্যজীবী গ্রাম সমিতি গঠন করা হয়েছে। প্রকল্পের কার্যক্রম বাস্তবায়নে সহায়তা করছে এসডিএফ সংস্থা। সমিতির সদস্যরা এ পর্যন্ত সঞ্চয় করেছে ৫ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। স্বাবলম্বী ফান্ড হিসেবে মৎস্যজীবী সমিতির অনুকূলে ৬০ লাখ টাকা সরকারি অনুদান প্রদান করা হয়েছে। সঞ্চয় ও অনুদানের অর্থঋণ হিসেবে সমিতির সদস্যদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। যা দিয়ে তারা হাঁস, মুরগী ও গবাদি পশু পালন, মৎস্য চাষ, ব্যবসা-বাণিজ্য সহ বিভিন্ন আয় বৃদ্ধিমূলক কাজ করে নিজেদের আর্থসামাজিক উন্নয়ন করছে। উপজেলার মাহমুদকাটী গ্রামের জয়ন্তী বিশ্বাস জানান, সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে গাভি পালন শুরু করে। বর্তমানে প্রতিদিন ১০ লিটার দুধ বিক্রি করছে। বিক্রয়কৃত অর্থ দিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে তার পরিবার সুন্দর জীবন-যাপন করছে। ইতোমধ্যে সমিতির ৫৭ জন সদস্যের প্রত্যেককে এককালীন ১০ হাজার টাকা অনুদান প্রদান করা হয়েছে। ৬শ জনকে বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ৩০জনকে কর্মমুখী প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৬জন বর্তমানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চকুরি করছে। দেবদুয়ার গ্রামের স্বপন রায়ের ছেলে বাপ্পী রায় জানান, আমি বহুমূখী প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে বর্তমানে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করছি। জেলে পল্লীর অবকাঠামোগত উন্নয়নকল্পে ৩টি গ্রামে ইটের সলিং এর পাঁকা রাস্তা করা হয়েছে। বাঁকা মৎস্যজীবী গ্রাম সমিতির সভাপতি চন্দনা বিশ্বাস জানান, প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগে আমাদের যাতায়াতের রাস্তা কাঁচা ছিল, ফলে যাতায়াতে চরম ভোগান্তি হতো। প্রকল্পের মাধ্যমে যাতায়াতের রাস্তাটি পাঁকা করে দেওয়ায় আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থার অনেক উন্নয়ন হয়েছে। এ ছাড়া জেলে পল্লীগুলোতে সোলার স্ট্রিট লাইট এবং পানি নিষ্কাসনের জন্য পাঁকা ড্রেন করার পরিকল্পনা রয়েছে। নারীর ক্ষমতায়নের অংশ হিসেবে পশ্চিম মাহমুদকাটী জেলে পল্লীর জয়ন্তী বিশ্বাস সংরক্ষিত মহিলা সদস্য হিসেবে সদ্য সমাপ্ত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নির্বাচিত হয়েছেন। সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা পবিত্র কুমার দাস জানান, এই প্রকল্প সরকারের একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এর আগে উপকূলীয় জেলেদের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষে তেমন কোনো উদ্যোগ ছিলনা। সংশ্লি¬ষ্ট প্রকল্পের মাধ্যমে জেলেদের জীবনমান কয়েকগুণ বেড়েছে। আশা করছি এ প্রকল্পটি সুনীল অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।