সুন্দর বন সংলগ্ন দুই নদ-নদীর ক্রমশ ভাঙ্গনে বিচ্ছিন্ন দ্বীপে পরিনত হতে চলেছে খুলনার সর্ব দক্ষিনে অবস্থিত কয়রা উপজেলার দক্ষিন বেদকাশী ইউনিয়ন। ৩০ হাজার লোকের বসতি সম্মৃদ্ধ এই ্ইউনিয়নে কাস্টমস অফিস, কোষ্টগার্ডের অফিস, ফরেষ্ট অফিস, নৌ-পুলিশ ফাঁড়ি থাকলেও উন্নয়নের কোন ছোঁয়া নেই। ওয়াপদার বেড়ীবাঁধগুলোর মেরামতের জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকায় যে কোন সময় তা ভেঙ্গে গিয়ে একেবারেই আলাদা দ্বীপে পরিনত হবে দক্ষিন বেদকাশী এমনটি আশা প্রকাশ করছে এই এলাকার সাধারন জনগন। তবে সম্প্রতি সময় স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মান প্রকল্প অনুমোদন হওয়ায় কিছুটা সস্তীর নিঃশ্বাস ফেলছে ইউনিয়নের অধিবাসিরা। এজন্য তারা প্রধানমন্ত্রী সহ স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ¦ মোঃ আক্তারুজ্জামান বাবুকে ধন্যবাদ জানিয়েছে। একসময় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা থাকলেও আইলায় তাও শেষ করে দেয়। তবে তা আবার চালু করেছে পল্লী বিদুৎ কর্তৃপক্ষ। কয়রা উপজেলা থেকে ২০ কিলো মিটার দূরে সুন্দরবনের মধ্যে অবস্থিত দক্ষিন বেদকাশী ইউনিয়ন। যাতায়াতের জন্য কপোতাক্ষ নদের পাশের ও শাকবাড়িয়া নদীর বেড়ীবাঁধ ছাড়া আর কোন মাধ্যম নেই। তবে এই দুই বেড়ীবাঁধ দিয়ে পায়ে হেটে ছাড়া চলাই অসম্ভব। স্বাধীন বাংলা যুব সংঘের সভাপতি মোঃ আবু সাইদ খান বলেন, ইউনিয়নের অভ্যন্তরীন যোগাযোগের রাস্তাঘাট গুলোর অবস্থা খুবই নাজুক। প্রতিনিয়ত দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে এখানকার মানুষের বেঁচে থাকটা দুরহ ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। চিকিৎসা সেবা একে বারে নেই বললে চলে। নিয়তির উপর ভরসা করে বেঁচে থাকতে হয় মানুষের। এই ইউনিয়নে রয়েছে রায়মঙ্গল কাস্টমস অফিস, আংটিহারা নৌ-পুলিশ ক্যাম্প, কোষ্টগার্ডের স্থায়ী ক্যাম্প ও বন বিভাগের কোবাদক স্টেশন। চারটি সরকারী কার্যালয় থেকে সরকারের কোষাগারে বিপুল পরিমান রাজস্ব জমা হলেও যাতায়াতের জন্য একমাত্র ভরসা বেড়ীবাঁধগুলো প্রতি বছরই মেরামত করা হয় যথাযথভাবে। বেড়িবাঁধ মেরামতের জন্য যে বরাদ্দ দেয়া হয় তার অর্ধেক অংশ কাজ হয়না বলে অভিমত ব্যাক্ত করেছে অনেকেই। এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, দক্ষিন বেদকাশী ইউনিয়নের দুই পাশ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে শাকবাড়িয়া নদী ও কপোতাক্ষ নদ। দশ বছর আগেও দুই নদ-নদীর দূরত্ব ১০ কিলো মিটারের বেশী থাকলেও বর্তমানে ৫০০ মিটারে এসে ঠেকেছে। ২০০৯ সালে আইলার আঘাতে চার বছরের বেশী সময় পানিতে তলিয়ে থাকে ইউনিয়নের ৭০ ভাগ জমি। সুন্দরবন অভ্যন্তরে হওয়ায় এই ইউনিয়নে অপরাধের মাত্রা একটু বেশী। এখানে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা কোন অভিযান সচারচর করতে পারে না। বর্ষা মৌসুমে কয়রা থেকে যাতায়াতের জন্য নৌযান ছাড়া আর কোন উপায় নেই এই ইউনিয়নে। আংটিহারা এলাকায় একটি নৌ-পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন করা হলেও তাদের যানবাহন মোটর সাইকেলেই সীমাবদ্ধ। সড়ক ব্যবস্থা অত্যান্ত খারাপ হওয়ায় মোটরসাইকেলও সহজে অনেক এলাকায় পৌছাতে পারে না। দক্ষিন বেদকাশী ইউনিয়নের নব নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ আছের আলী মোড়ল বলেন, এই ইউনিয়নে ৪ টি সরকারী অফিস, ৯ টি বিদ্যালয়, ২৮ টি মসজিদ ও মন্দির, ৪ টি সাইক্লোন শেল্টার রয়েছে। কিন্তু যাতায়াত ব্যবস্থা না থাকায় এখন ইউনিয়নটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপে পরিনত হতে চলেছে। তিনি আক্ষেপ করেও আরও বলেন, তার ইউনিয়নে কোন (পাকা) পিচের রাস্তা নেই। আধুনিক এই যুগেও এমন কোন ইউনিয়ন নেই যেখানে পিচের রাস্তা নেই। ১ কিঃ মিঃ হলেও পিচের রাস্তা তৈরীর জন্য তিনি সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানিয়েছে। এই ইউনিয়নের ২৭ কিলো মিটার সড়কের ১৫ কিলোমিটার একেবারেই চলাচলের অনুপযোগী। সম্প্রতি সরকার থেকে স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মান প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। তা বাস্তবায়ন করতে একটু সময় লাগবে। স্থানীয়দের অভিমত ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি স্থানে ভাঙ্গন ধরেছে। মেরামত করার জন্য স্থানীয় এমপিসহ বিভিন্ন দপ্তরে জানানো হয়েছে। আগামী বর্ষা মৌসুমের মধ্যে বাঁধগুলো মেরামত না করা হলে বিচ্ছিন্ন দ্বীপে পরিনত হবে এই ইউনিয়ন। মূল ভূ-খন্ডের সাথে কোন যোগ থাকবে না। তাই আধুনিক সভ্যতার এ যুগে এলাকাবাসী কয়রার দক্ষিন বেদকাশী ইউনিয়নের মানুষের জীবন মাল রক্ষায় ভেড়িবাধ সংস্কারের পাশাপশি ইউনিয়নের বিভিন্ন উন্নয়নমুলক কাজ বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে।