রংপুরের পীরগাছায় চলাচলের রাস্তা ও গাছ কাটার ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রতিবাদকারী ভ্যান চালক ও তার স্ত্রী এবং মেয়েকে গাছে বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নির্যাতনের একটি ভিডিও চিত্র শুক্রবার বিকেলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে গোটা উপজেলা জুড়ে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়। গত বুধবার সকালে উপজেলার পারুল ইউনিয়নের আনন্দী ধনিরাম গ্রামে এ ঘটনায় ৯৯৯ ফোন পেয়ে পীরগাছা থানা পুলিশ গাছে বাঁধা মা ও মেয়েকে উদ্ধার করে পীরগাছা স্বাস্থ্য কমপ্লক্সে ভর্তি করে। তবে নির্যাতনের শিকার ভ্যান চালক শাহজাহান মিয়া গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ১৭ জনকে আসামি করে একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
মামলার এজাহার ও ভুক্তভোগির পরিবার সূত্রে জানা যায়, আনন্দি ধনিরাম গ্রামের সুজা মিয়ার ছেলে শাহজাহান মিয়ার সাথে প্রতিবেশী গোফ্ফার মিয়ার ছেলে জিয়ারু মিয়ার জমি জমা সংক্রান্ত বিরোধ চলে আসছিলো। গত বুধবার সকালে প্রভাবশালী জিয়ারু ও তার লোকজন ভ্যান চালক শাহজাহান মিয়ার রোপন করা গাছ ও চলাচলের রাস্তা কেটে ফেলে। এ সময় শাহজাহান মিয়া ও তার স্ত্রী গোলাপী বেগম তার দুই মেয়ে বাঁধা দেন। এতে জিয়ারু ও তার লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে শাহজাহনের স্ত্রী গোলাপী বেগম ও মেয়ে রাবেয়া বেগমকে গাছে বেঁধে নির্যাতন চালায়। এলাকার লোকজন দুই দফা তাদের উদ্ধার করলেও তৃতীয় বার আবারো তাদের গাছে বেধে নির্যাতন করা হয়।
পরে স্থানীয়রা ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিলে পীরগাছা থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে আহত অবস্থায় তাদেরকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি করান। বর্তমানে তারা এখনও চিকিৎসাধীন আছেন। এদিকে ঘটনার দুই দিন পর গত শুক্রবার বিকেলে মা-মেয়েকে নির্যাতনের একটি ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আবদুল খালেক ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, মা-মেয়ে গাছে বেঁধে নির্যাতনের বিষয়টি আমি শুনেছি। ভুক্তভোগিদের আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
নির্যাতনের শিকার শাহজাহান মিয়া জানান, প্রতিবেশী জিয়ারু ও তার লোকজন জমি দখলে ব্যর্থ হয়ে আমার স্ত্রী ও মেয়েকে গাছে বেঁধে নির্যাতন করেছে। থানায় অভিযোগ দেয়া হলেও এখনো কোন আসামি গ্রেফতার করা হয়নি। আসামিরা প্রভাবশালী হওয়ায় তারা আমাকে জীবনে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত পরিবারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন, গাছে বেঁধে নির্যাতন করা আমাদের ভুল হয়েছে। আমরা বসে এটা মিমাংসা করে নেব।
পীরগাছা থানার এসআই মোকছেদ আলী বলেন, আমরা ৯৯৯ ফোন পেয়ে মা-মেয়েকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছি। নির্যাতনের শিকার শাহজাহান মিয়া একটি অভিযোগ দিয়েছে। আমরা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
এ বিষয়ে পীরগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা (ওসি তদন্ত) শুকুর মিয়া বলেন, এ ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। আসামি গ্রেফতারে অভিযান চালানো হচ্ছে।