উৎকর্ষ সাধন ও কৃষকের জীবনমান উন্নয়নে সবসময় সরকার পাশে আছে। তাই আজ দেশে অনেক শিক্ষিত যুবক চাকরি না করে কৃষি কাজ করে সফলতা নিয়ে এসেছেন। তার একটি উধাহরণ বাঘা উপজেলার আড়ানী পৌরসভার হামিদকুড়া মহল্লার হোসেল রানা। সোহেল রানার গ্লাডিওলাস ফুল চাষের জমি পরিদর্শন শেষে বেড়েরবাড়ি মুক্তার আলীর আম বাগানে সরকার কৃষির উৎকর্ষ সাধনে কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে এ বিষয়ে কৃষকদের সাথে মববিনিময় সভায় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব জালাল আহমেদ এ কথা বলেন।
জানা গেছে, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে শিক্ষিত সোহেল রানা বাড়ির পাশে ২০১৪ সালে ৮ শতক জমিতে গ্লাডিওলাস ফুলের চাষ শুরু করেন। প্রথমবার তিন হাজার টাকা খরচ করে ৮ হাজার টাকার ফুল বিক্রি করে। ২০১৬ সালে ১২ হাজার টাকা, ২০১৭ সালে ১৫ হাজার টাকা, ২০১৮ সালে ১৮ হাজার টাকা, ২০১৯ সালে ৩০ হাজার টাকা, ২০২০ সালে ৫০ হাজার টাকা। ২০২১ সালে ৯০ হাজার টাকা। ২০২২ সালে এই বছর ইতিমধ্যেই ৪০ হাজার টাকা ফুল বিক্রি করা হয়েছে। এই উপজেলায় বানিজ্যিকভাবে গ্লাডিওলাস ফুলের চাষ এই প্রথম।
সোমবার (১৭ জানুয়ারী) আধুনিক প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে রাজশাহী বিভাগের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের কার্যক্রম পরিদর্শন ও কৃষকের সাথে মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন বাঘা উপজেলা কৃষি অফিসার শফিউল্লাহ সুলতান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রকল্প পরিচালক ড. এস.এম. হাসানুজ্জামান, কৃষিবিদ রেহানা সুলতানা, এস.এম আমিনুজ্জামান, প্রকল্পের মনিটরিং অফিসার সাহেদ হাসান, নাইম হাসান প্রমুখ।
এদিকে সোহেল রানার জমিতে সাদা, হলুদ ও গোলাপি রঙের গ্লাডিওলাস ফুলের চাষ করছেন। অক্টোবর মাসের শেষের দিকে এ ফুলের চারা রোপণ করতে হয়। জানুয়ারী ও ফেব্রুয়ারী মাসে ফলন পাওয়া যায়। বর্তমান বাজারে প্রতিটি ফুলের স্টিক ১০ থেকে ১২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতিটি ফুলের স্টিক ব্যবসায়ীদের কাছে ৭ থেকে ৮ টাকায় বিক্রি করেন। সোহেল রানার বাবার বসতভিটাসহ তিন বিঘা জমি ছাড়া কোনো সম্পদ নেই। আয় বলতে জমিই ভরসা।
সোহেল রানার বাবা শাহাবাজ আলী অনেকটাই অসুস্থ। কোন কোন সময়ে স্থানীয় একটি স্ব-মিলের দিন হাজিরায় কাজ করেন। মা দোলেনা বেগম গৃহীনি। বড় ভাই টুটুল আহম্মেদ একটি বেসরকারি কম্পানিতে সেলসম্যান হিসেবে কাজ করছে।
এ বিষয়ে বাঘা উপজেলা কৃষি অফিসার শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, ফুল বিক্রির পর চাষিরা বীজও বিক্রি করতে পারবেন। সোহেল রানা গত মৌসুমে ৮ শতক জমি থেকে ৩০ হাজার টাকার চারা বীজ উৎপাদন করেন। বর্তমানে সোহেলা রানা ফুল চাষ করে সফলতা পেয়েছেন।
উল্লেখ্য, সোহেল রানা ২০১৬ সালে ইসলামের ইতিহাস বিভিাগ থেকে রাজশাহী কলেজ থেকে অনার্স মাষ্টার্স পাশ করে বেকার ঘুড়ে বেড়াতেন। ফুল চাষ করে বাড়তি আয় করা যায়, সেই চিন্তা থেকে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে তাঁর যশোরের এক বন্ধুর সহযোগিতায় ঝিকরগাছা থেকে বীজ সংগ্রহ করে ৮ শতক জমিতে গ্লাডিওলাস ফুলের চাষ করেন। তারপর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।