রাজশাহীর পুঠিয়ায় রাজনৈতিক নেতা এবং উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমঝতা করে ফসলি জমিতে পুকুর খনন করার অভিযোগ উঠেছে। আগামীতে উপজেলায় তিন ফসল করার মতো জমির সংকট দেখা দেওয়ার সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। কৃষি জমিতে পুকুর খনন বন্ধ করতে, জনস্বার্থে মহামান্য হাইকোর্টে ২৪৭৬/২০১৯ নম্বরে একটি রীট আবেদন করা হয়। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত গত ২০১৯ সালে কৃষি জমির শ্রেনি পরিবর্তন বা পুকুর খনন না করতে আদেশ দেন। পাশাপাশি কোথাও পুকুর খনন করলে,উপজেলা প্রশাসনকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু আদালতের নিষেধাজ্ঞাকে অমান্য করে, জমির শ্রেনি পরির্বতন না করে ফসলী জমিতে পুকুর খননের কাজ চলছে। সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসীদের অভিযোগ,পুকুর খননের মাটি রাস্তায় ফেলে প্রতিনিয়ত এলাকা ধুলাময় করে,প্রতিববন্ধকতা সৃস্টি করা হচ্ছে। শিলমাড়িয়া ইউপির মোকাবেরুল ইসলাম নামের ব্যক্তি বলেন,আমাদের ইউপি’র শতকরা ৪০ ভাগ তিন ফসল করার মতো জমি ইতোমধ্যে পুকুর খননের কাজ কোথাও চলছে, কোথাও আবার শেষ হয়ে গিয়েছে। উপজেলা প্রশাসন এবং থানা পুলিশকে টাকা না দিয়ে, কোনো ব্যক্তিরই পুকুর খনন করার নজির নেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলার এক কর্মকর্তা বলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা অবৈধভাবে অনেক আগে নিজেরা পুকুর খনন করেছেন। বর্তমানে ওই নেতারাই এখন আবার পুকুর খননের বিরুদ্ধে কথা বলচ্ছেন। কারণ, তাদের ধারনা বেশি পুকুর খনন করা হলে, আগামীতে মাছের দাম কমে যাবে। কখন তারাদের মাছের ব্যবসায়ী ক্ষতি হতে পাড়ে। তারপরও কিছু ধান্ধাবাজ রাজনৈতিক নেতারা পুকুর খনন করার জন্য সাধারণ মানুষদের নিকট টাকা নিয়ে প্রশাসনের ওপর ভীষণ চাপ সৃষ্টি করছে। এলাকাবাসীদের পক্ষ হতে অভিযোগ দিলে উপজেলা প্রশাসন এবং থানা পুলিশ পুকুর খননের কাজ বন্ধ করে দিচ্ছেন। তারপর কয়েক দিন বন্ধ থাকার পর পূর্ণরায় আবার খনন কাজ শুরু হচ্ছে। উপজেলায় কোনো পুকুর খনন দীর্ঘ দিন যাবত বন্ধ হয়ে থাকছে না। কোথাও আবার রাতের বেলা পুকুর খনন করা হচ্ছে। একটি সূত্র বলছে, ভাঁটা মালিক সমিতির এক নেতা কয়েকটি ইউনিয়নের পুকুর খননের প্রশাসনের সঙ্গে সমঝতা করার দায়িত্ব নিয়ে পুকুর খনন করাচ্ছেন। কয়েকটি পুকুর আবার বিলে বৃষ্টির পানি প্রবাহের স্থলে খনন করার অভিযোগ উঠেছে। এতে করে এলাকার বেশিরভাগ সাধারন কৃষক বিলে পানি বন্দি থেকে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ টাকার ফসলহানী হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। দেখা গেছে, বেশিরভাগ খননকৃত পুকুরগুলো ধান চাষের উপযোগী কিংবা বিভিন্ন বিলের নিচু জমিতে। অনেক স্থানে বর্ষা মৌসুমে বিলের পানি প্রবাহের গতিপদে পুকুরের বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। পুকুর খননকারীরা প্রথমে কৌঁশলে ফসলী জমিতে এলাকার শ্রমিক দিয়ে পুকুর খননের পাড় বেঁধে নিচ্ছেন। তারপর পুকুর সংস্কার করার নামে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে আবেদন করে পুকুর খননের কাজ সম্পন্ন করছে। পুকুর খননকারীরা রাজনৈতিক নেতাদের দ্বারায় উপজেলা প্রশাসনকে চাপ দিলে তারা ঢিলেঢালা ভাবে পুকুর খননের ওপর পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামসুন নাহার ভুঁইয়া বলেন, গত কয়েক বছর আগেও বর্ষা মৌসুমে দুই একটি বিলের নিচু স্থান ছাড়া সব পানি কোনো বাধা ছাড়াই যথা সময়ে নিস্কাশন হতো। এখন কিছু লোকজন রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নিচু জমির পাশাপাশি তিন ফসলী জমিতে পুকুর খনন করেছেন। তবে কোনো জমির মালিক পুকুর খনন করতে অনুমোদনের জন্য আমাদের কাছে আসে না।
এ ব্যাপারে পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল হাই মোহাম্মদ আনাছ বলেন, পুকুর খনন বন্ধে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে আছেন। যেখানেই পুকুর খননের চেস্টা করা হচ্ছে, সেখানেই পুলিশ প্রশাসন অভিযান চালাচ্ছেন। সর্বশেষ গত দুইদিনে বেলপুকুর ও শিলমাড়িয়া এলাকায় অভিযান চালানো হয়। সেখানে পুকুর খনন করায় পৃথক ভাবে দেড় লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। তিনি বলেন, ফসলি জমিতে পুকুর খনন বন্ধে প্রশাসনের পাশাপাশি স্থানীয়দের জনপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।