মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনের জেলা প্রশাসকদের সম্মেলন শুরু হয়েছে গত ১৮ জানুয়ারি। রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলন সকালে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মাঠ পর্যায়ে প্রশাসনে বিরাজমান চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা এবং নাগরিক সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে গৃহীত কার্যক্রম সম্পর্কে আলোচনার জন্য প্রতি বছর জেলা প্রশাসক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। মাঠ পর্যায়ে সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রমের সমন্বয় ও তত্ত্বাবধান-কারী হিসেবে জেলা প্রশাসকরা দায়িত্ব পালন করে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। সে কারণে জেলা প্রশাসক সম্মেলন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীরা নানা বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশনা দিয়ে থাকেন।
এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জেলা প্রশাসকদের ২৪ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন। যার অন্যতম হচ্ছে জন প্রতিনিধিদের সাথে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে। সংসদ সদস্য থেকে শুরু করে জেলা, উপজেলা এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র সহ অন্য নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি রয়েছেন, তাদের সাথে সামঞ্জস্য রাখতে হবে। একই সাথে উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ যথাযথ হচ্ছে কি না বা বাস্তবায়নও যথাযথ হচ্ছে কি না, সেগুলোও সমন্বয় করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার মধ্যে আরো আছে করোনা সংকট মোকাবেলায় সরকারের জারি করা নির্দেশনাগুলোর মাঠ পর্যায়ে প্রতিপালন, সরকারি অফিসগুলোতে সাধারণ মানুষ যেন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বিঘেœ যথাযথ সেবা পান এবং গৃহহীনদের জন্য গৃহনির্মাণ, ভূমিহীনদের কৃষি খাস জমি বরেন্দাবস্তসহ সব সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে প্রকৃত অসহায়, দুস্থ ও সুবিধা বঞ্চিত প্রান্তিক শ্রেণীর মানুষ যেন সুযোগ পান, তা নিশ্চিত করা। এ ছাড়া করোনা পরিস্থিতিতে বিকল্প ব্যবস্থায় অন-লাইনে বা ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে পাঠ দান কার্যক্রম যেন অব্যাহত থাকে, তার ব্যবস্থা করা, ধর্মীয় উগ্রবাদী ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়া, মাদক বিরোধী অভিযান নিয়মিত পরিচালনা, বাল্য বিবাহ, যৌন হয়রানি, খাদ্যে ভেজাল, নকল পণ্য তৈরি ইত্যাদি অপরাধ রোধে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা, মুক্তিযুদ্ধের সময় বিভিন্ন অঞ্চলে গণহত্যার শিকার পরিবারগুলোর বর্তমান অবস্থা জানা এবং তাদের সম্মানজনক জীবনযাত্রার ব্যবস্থা করা ইত্যাদি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনাগুলো যথাযথ এবং সময়োপযোগী। দেশ ও জনগণের কল্যাণে এসব নির্দেশনা পালন করা জরুরি। সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বঙ্গভবন থেকে ভার্চুয়ালি জেলা প্রশাসক সম্মেলনে মুক্ত হয়ে জেলা প্রশাসকদের বলেন, আমরা আপনারা জনগণের সেবক। তাই জনগণের সেবক হিসেবে নিজেদের দায়িত্ব পালন করবেন। জনগণের দোরগোড়ায় সরকারি সেবা পৌঁছে দেবেন। তিনি দক্ষ, আধুনিক, জনকল্যাণমুখী ও টেকসই ভূমি ব্যবস্থাপনার ওপর ও মাদক-মুক্ত সমাজ গঠনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তাছাড়া দুর্নীতির কারণে সব অর্জন নষ্ট হচ্ছে বলে তার লাগাম টেনে ধরার আহবান জানান। আমরা আশা করবো গত ১৮ জানুয়ারি থেকে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত জেলা প্রশাসক সম্মেলন শেষ করে জনকল্যাণে সরকারি নির্দেশনা যথাযথভাবে পালন করবেন এবং দেশকে একটি সুখী সমৃদ্ধিশালী দেশ গঠনে অবদান রাখবেন। তবেই জেলা প্রশাসকদের সম্মেলন সার্থক ও তাৎপর্য হয়ে উঠবে।