করোনা মহামারী কালে জ¦ালানী তেলের দাম বাড়ার ফলে জনজীবনে যে প্রভাব পড়েছে তাতে মড়ার ওপর খাড়ার ঘা হিসেবে গ্যাসের দাম বাড়াবার দূর অভিসন্ধি চলছে। বিশ্ববাজারে গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ায় দাম বাড়াবার প্রস্তাব করেছে পেট্রোবাংলা। দেশে নতুন নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার হলেও তা থেকে গ্যাস উত্তোলন না করে আমদানি নির্ভর হয়ে উঠেছে গ্যাস বিপনন। বাসা বাড়িতে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম দ্বিগুণ করার প্রস্তাব পেট্রোবাংলার। বর্তমানে দু’চুলার গ্যাসের দাম নেয়া হয় ৯৭৫ টাকা। তা বাড়িয়ে ২ হাজার ১০০ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। আর এক চুলার গ্যাসের দাম এখন নেয়া হয় ৯২৫ টাকা। বাড়িয়ে ২ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করেছে পেট্রোবাংলা।
দেশে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির এ প্রস্তাব এমন একসময় করা হলো যখন সারা দেশে গ্যাস সংকট চলছে। সে জন্যে অনেকে রান্নার জন্য বিকল্প জ¦ালানী ব্যবহার করছেন। গ্যাসের অভাবে শিল্প-কারখানা বন্ধ রাখতে হচ্ছে। মহেশখালীর দু’টি ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের একটি বন্ধ হয়ে গেছে। চলমান একটি দিয়ে প্রয়োজনীয় চাহিদা পুড়ন সম্ভব হচ্ছে না। স্বল্প সময়ের মধ্যে এ সংকট দূর হবে বলে মনে হচ্ছে না। জ¦ালানী বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, গ্যাসের ক্ষেত্রে আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে নিজেদের গ্যাস ক্ষেত্রগুলো থেকে গ্যাস উত্তোলন করে এবং গ্যাসের চুরি ও অপচয় রোধ করে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি না করা সম্ভব। এজন্য অবশ্য প্রিপেইড মিটারে গ্যাস সরবরাহ করা শুরু হলেও তা বেশি দূর এগোয় নি। রাজধানীতে মাত্র ১০ শতাংশ মানুষ প্রিপেইড মিটার পেয়েছেন বাকি ৯০ শতাংশ মানুষ আগের নিয়মেই চলছে। সবার ক্ষেত্রে প্রিপেইড মিটার চালু হলে সরকারের রাজস্ব আয় যেমন বাড়বে, তেমনি গ্রাহকরাও সাশ্রয়ী হবেন।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের কাছে গ্যাস সঞ্চালন, উৎপাদন ও বিতরণ কোম্পানিগুলোর দাম বাড়াবার যে প্রস্তাব দিয়েছে তার বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীরা। তারা বলছে, গ্যাসের দাম বাড়লে উৎপাদন খরচ বাড়বে। তাতে চলমান মহামারিতে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানো ব্যহত হবে। অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে চীন ও ভারত আরো ২০ বছর কয়লা-ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু রাখছে। বাংলাদেশের উচিত মজুদ কয়লার সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা। রাজধানীর মতিঝিলে এফবিসিসিআই কার্যালয়ে গত ১৯ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত বিদ্যুৎ, জ¦ালানি ও পরিসেবা বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির প্রথম সভায় গ্যাসের দাম বাড়াবার উদ্যোগে ব্যবসায়ীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
করোনা সংক্রমণের কারণে দেশের মানুষের খুব করুন অবস্থা। অনেকেই কাজ হারিয়ে জীবন যুদ্ধে ভয়ংকর ক্লান্ত। একইভাবে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতেও পড়েছে নেতিবাচক প্রভাব। মানুষ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। কিন্তু এর মাঝে যদি গ্যাসের দাম বাড়ে তবে তারা কি ভাবে বাঁচবে আর শিল্পপতিরা কিভাবে তাদের শিল্প বাঁচাবে তা কেউ বলতে পারে না। কাজেই দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির কথা বিবেচনা করে গ্যাসের দাম না বাড়িয়ে জনমনে স্বস্তি দিতে সরকার তৎপর হবেন। এটাই অধিকাংশ মানুষের প্রত্যাশা। আর জন-বান্ধব সরকার সব সময় জনআকাংক্ষা পুড়নে সচেষ্ট থাকেন।