নিজ ছাত্রীকে শ্লীলতাহানীর অভিযোগে শোকজ প্রাপ্ত খুলনার পাইকগাছায় কপিলমুনি কলেজের পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক সৌমিত্র সাধু শনিবার (২২ জানুয়ারি) তার বিরুদ্ধে শোকজের জবাব দিয়েছেন। বিষয়টি স্বীকার করেছেন, কলেজটির অধ্যক্ষ হাবিবুল্লাহ বাহার। পাশাপাশি অভিযোগকারী ছাত্রীর কাছ থেকে তার দাখিলকৃত অভিযোগপত্রটি প্রত্যাহারে একটি অনাপত্তিপত্রে স্বাক্ষর করিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র। অভিযুক্ত পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক সৌমিত্র সাধু তার শোকজের জবাবে লিখেছেন যে, কোনো ছাত্রীর সাথে তার কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। ২০১২ সালে কলেজে যোগদানের পর থেকে কলেজের সুনাম ও ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষার মানোন্নয়নে শিক্ষকতার পাশাপাশি একটি কোচিং সেন্টার পরিচালনা করে আসছেন। যেখানে আলাদাভাবে কাউকে পড়ানো হয়না। কলেজের সুনাম ক্ষুন্ন ও তার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে কেউ ওই ছাত্রীর কাছ থেকে অভিযোগপত্রটি লিখিয়ে নিয়েছে বলে দাবি তার। এর আগে গত ২১ডিসেম্বর কপিলমুনি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের জনৈকা মেধাবী ছাত্রী একই কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সৌমিত্র সাধুর বিরুদ্ধে কলেজের অধ্যক্ষ বরাবর একটি অভিযোগ করেন যে, তিনি তার কোচিং সেন্টারে তাকে একা পেয়ে তার সাথে অশোভন আচারণ করেন। যা শ্লীলতাহানীর পর্যায়ে পড়ে। যদিও কলেজের অধ্যক্ষ হাবিবুল্লাহ বাহার দাবী করেন, অভিযোগপত্রটি সম্প্রতি ডাকযোগে তার কাছে পৌঁছেছে। যার প্রেক্ষিতে গত ১৫ জানুয়ারি অভিযেুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ৭ কার্যদিবসের সময় দিয়ে শোকজটি করেন। যার স্মারক নং-৮০/৩৯৩/২২। এদিকে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র দাবি করছে, সংশ্লিষ্ট ছাত্রীর কাছ থেকে লিখিয়ে আনা অনাপত্তিপত্রে সে জানায়, ঘটনার দিন অভিযুক্ত শিক্ষক তার কোচিং সেন্টারে তাকে একা পেয়ে অশোভন আচারণ করেন। যা শ্লীলতাহানীর পর্যায়ে পড়ে। এ ছাড়া অভিযোগপত্রটি সে আবেগের বশবর্তী হয়ে করেছিল। অন্যদিকে অভিযুক্ত শিক্ষক দাবি করেছেন যে, কলেজের সুনাম ক্ষুন্ন ও তার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে কেউ ঐ ছাত্রীকে দিয়ে অভিযোগপত্রটি দাখিল করিয়েছিল। প্রসঙ্গত, কপিলমুনি কলেজের পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক সৌমিত্র সাধুর বিরুদ্ধে তারই এক মেধাবী ছাত্রী তাকে শ্লীলতাহানী করেন বলে অভিযোগ করে। সূত্র জানায়, প্রথমত কর্তৃপক্ষ বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করলেও পরে ব্যাপকভাবে চাউর হয়ে পড়ায় স্থানীয় সংবাদকর্মীদের পর্যন্ত পৌঁছায়। একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে অধ্যক্ষ অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে শোকজেপত্রটি প্রদান করেন। মূলত. এরপর থেকেই অভিযুক্ত শিক্ষককে বাঁচাতে তার পক্ষ নিয়ে তারই সহকর্মীসহ একটি মহল বিভিন্ন স্থানে দৌঁড়-ঝাঁপ শুরু করে। সূত্র দাবি করছে, শুক্রবার খুলনায় অবস্থানরত ঐ ছাত্রীর কাছ থেকে প্রত্যাহারপত্রে স্বাক্ষর করাতেও তারাই যান সেখানে। যদি সত্যিই ছাত্রীর পক্ষে অভিযোগপত্র প্রত্যাহারের আবেদন করা হয় তাহলেও আবেদনপত্রটি কারা উপস্থাপন করেছেন? ছাত্রী নিজে, তার কোনো অবিভাবক নাকি অভিযুক্ত শিক্ষকের পক্ষের কোনো সহকর্মী কিংবা তার অবিভাবক? যদিও অনাপত্তি প্রাপ্তির কথা স্বীকার করেননি অধ্যক্ষ। নির্ভরযোগ্য সূত্র দাবি করছে, শোকজপত্র প্রাপ্তির পর থেকেই সৌমিত্র’র সহকর্মীসহ একটি মহল বিষয়টিকে ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করতে জোর অপতৎপরতা চালিয়ে আসছে। অধ্যক্ষ হাবিবুল্লাহ বাহার বরাবরের মত জানান, ঘটনার সময় তিনি কলেজের কাজে ঢাকায় ছিলেন। তবে পরষ্পর শোনার পর শিক্ষককে মৌখিকভাবে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার যান। সর্বশেষ সম্প্রতি ডাকযোগে তিনি একটি অভিযোগপত্র পান। এরপর তিনি গত ১৫ জানুয়ারি সংশ্লিষ্ট অভিযুক্ত শিক্ষককে একটি শোকজ করেন। শনিবার শেষ দিনে শিক্ষক সৌমিত্র তার জবাব প্রদান করেছেন। সর্বশেষ ঘটনায় একের পর এক নাটকে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে অবিভাবক মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।