সুন্দরবনকে ঘিরে দাকোপের কালাবগীতে গড়ে তোলা হচ্ছে আকর্ষনীয় ইকো ট্যুরিজম স্পট। বন্যপ্রাণী আর নানা জাতের বৃক্ষরাজি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে সাথে আধুনিক নির্মান শৈলিতে তৈরী হচ্ছে মনোমুগ্ধকর স্থাপনা। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা আর নিরাপদ পরিবেশের ব্যবস্থা করতে পারলে ইকো ট্যুরিজমকে ঘিরে সৃষ্টি হবে নতুন নতুন কর্মসংস্থান। ফলে সরকার যেমন বড় অংকের রাজস্ব পাবে, তেমনি বদলে যাবে এ অঞ্চলের অর্থনীতি।
বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনভূমি সুন্দরবন। ইউনেস্কো সুন্দরবনকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ ঘোষনার পর দেশ বিদেশের মানুষের কাছে এ বনের আবেদন অনেকাংশে বেড়ে যায়। তবে বনের ভিতর দিয়ে পর্যটকদের অবাধ যাতায়াতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বনের সার্বিক পরিবেশ ও প্রতিবেশ। পরিস্থিতি বিবেচনায় বনের সৌন্দর্য্য অবলোকনে নিরিবিলি পরিবেশ সৃষ্টি এবং বন্যপ্রাণীদের অবাধ বিচরন নিশ্চিত করে পরিবশে বান্ধব পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তুলতে নানা উদ্যোগ নেয় সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় সুন্দরবনের খুলনা রেঞ্জের কালাবগী ষ্টেশনে গড়ে তোলা হচ্ছে ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্র। ইতোমধ্যে কেন্দ্রটি দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। পর্যটক বা দর্শনার্থীরা নির্দিষ্ট ফি পরিশোধ করে সুন্দরবনের মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে পারবেন। খুলনা শহর থেকে সড়ক পথে ৫০ কিঃমিঃ দূরে দাকোপ উপজেলার কালাবগী গ্রাম। গ্রামটির শেষ প্রান্তের বিপরীত পাড়েই কালাবগী ফরেষ্ট ষ্টেশনকে ঘিরে তৈরী হচ্ছে কালাবগী ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্র।
কালাবগী ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্র পরিদর্শন করে দেখা গেছে, পর্যটকদের জন্য সেখানে তৈরী করা হয়েছে নৌযান থেকে ওঠানামার পল্টুন, বসার জন্য গোলঘর ও বেঞ্চ এবং মান সম্মত ওয়াশ ব্যবস্থাপনা। পৃথক খাঁচায় রাখা আছে মায়াবী হরিণ ও কুমির। দেখা মেলে বানর, বুনো শুকর, গুইসাপ ও চিত্রল হরিণের। বন অভ্যন্তরে দেখা মেলে বাঘের পায়ের ছাপ। চলমান আছে দর্শনার্থীদের বনের মধ্যে ঘুরে দেখার জন্য ২ হাজার ৬ শ’ ফুট কংক্রিটের ফুট ট্রেইল বা রাস্তা নির্মান কাজ, নির্মিত হচ্ছে সু উচ্চ ওয়াচ টাওয়ার। যার উপর দাঁড়িয়ে বনের অপরুপ সৌন্দর্য্য উপভোগ করা যাবে। এ ছাড়া পর্যটকদের কেনাকাটার জন্য দোকান ও ময়লা ফেলার স্থান নির্মান চলমান আছে। বনের নানা প্রজাতির বৃক্ষের সাথে দর্শনার্থীদের পরিচয় করিয়ে দিতে গাছের গায়ে নাম লিখে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। টানানো থাকবে বন্যপ্রাণীর নামের তালিকা ও বিস্তারিত বর্ণনার সাইনবোর্ড। বনবিভাগ সুত্রে জানা গেছে, সুন্দরবনের ভিতরে থাকা সাতটি পর্যটন কেন্দ্র প্রতি বছর প্রায় দুই লাখ পর্যটক ভ্রমন করে থাকে। প্রতিনিয়ত সুন্দরবনের প্রতি দর্শনার্থীদের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে বর্তমানে থাকা সাতটি স্থানে এত বেশী সংখ্যক মানুষের যাতায়াতে ঝুঁকির মূখে পড়ে সুন্দরবনের সার্বিক পরিবেশ। পর্যটকদের পদভারে বনের ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো এবং তাদের ভ্রমন আরো সুচারু করার জন্য পরিবেশ বান্ধব নতুন নতুন স্পট তৈরীর উদ্যোগ নেয় বন বিভাগ। সেই উদ্যোগের অংশ হিসেবে ২০২০ সালে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের আলীবান্ধা ও চাদপাই রেঞ্জের আন্ধারমানিক এবং সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগে খুলনা রেঞ্জের শেখেরটেক ও কালাবগীতে আরো চারটি পর্যটন স্পট তৈরীর কাজ শুরু করে।