লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় সরকারী নির্দেশ উপেক্ষা করে সিন্দুর্ণা লোকমান হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়ে পাঠদান কর্মসূচি পরিচালনা করছেন প্রধান শিক্ষক আনিচুর রহমান বাবলু। এতে করে চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন শিক্ষার্থীরা। প্রধান শিক্ষকের চাপে শিক্ষার্থীরা বাধ্য হয়ে বিদ্যালয়ে এসে ক্লাস করছে বলে অভিযোগ করেছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
এদিকে স্থানীয়রা বলছেন, প্রধান শিক্ষক বাবলু সরকারকে চাপে ফেলতে ইচ্ছে করে বিদ্যালয়ে পাঠদান চালু রেখেছে। যেখানে সরকারের নির্দেশ মোতাবেক সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে, সেখানে কোন স্বার্থে প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয় চালু রেখেছে তা বোধগম্য নয়।
আনিচুর রহমান বাবলু লোকমান হোসেন উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও তিনি উপজেলার সিন্দুর্না গ্রামের বাসিন্দা। এ ছাড়া তিনি ছাত্র জীবনে বিএনপি ও জামায়াত শিবিরের রাজনীতি সাথে জড়িত ছিলেন।
জানাগেছে, করোনা সংক্রম রাড়ায় আগামী ০৬ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে সরকার। কিন্তু লোকমান হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক বাবুল নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে সরকারী নির্দেশ অমান্য করে পাঠদান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। এ নিয়ে স্থানীয়রা ও শিক্ষার্থীদের অভিবাবক প্রতিবাদ তুললেও কানে নিচ্ছেন না তিনি। আর তাই বাধ্য হয়ে প্রধান শিক্ষকের চাপে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে এসে ক্লাস করছেন। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।
এদিকে রববার (৩০ জানুয়ারী) সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ওই বিদ্যালয়ের মাঠে চেয়ারে বসে রোদ পোহাচ্ছেন কয়েকজন শিক্ষক। আর একটি শ্রেনী কক্ষে বই হাতে বসে আছেন শিক্ষার্থীরা। অপর এক শ্রেনী কক্ষে গিয়ে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিচ্ছেন প্রধান শিক্ষক।
শ্রেনী কক্ষের বেঞ্চে গাদাগাদি হয়ে বসে আছেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধির কোন বলাই নেই। দুই একজন মাক্স পড়ে আসলেও অনেকের মুখে মাস্ক দেখা যায়নি। এ অবস্থায় সাংবাদিকরা ছবি তুলতে গেলে বিদ্যালয়ের এক কর্মচারী ছবি তুলতে নিষেধ করেন।
শিক্ষার্থীরা জানান, গত কয়েক দিন ধরে ক্লাস চলছে। প্রধান শিক্ষক আমাদের আসতে বলেছেন তাই আমরা এসে ক্লাস করছি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক বলেন, প্রাধান শিক্ষক বাবলু বিএনপি'র রাজনীতির সাথে জড়িত। তাই তিনি সরকারকে ঝামেলায় ফেলাতে ইচ্ছে করে এসব করছে। আর তিনি এমন একটা ভাব নিচ্ছেন যে শিক্ষার্থীদের কন্যাণে পাঠদান চালু রেখেছেন।
কিন্তু যখন করোনা ভাইরাস ছিলো না তখন তারা কি করেছেন তা তাদের রেজাল্ট শিট দেখলে বোঝা যাবে। খুব ভালো ফলাফল তারা করতে পারে নি। তকাই বেশি পন্ডিতগিরি দেখানো ভাল না।
এ বিষয়ে সিন্দুর্ণা লোকমান হোসেন উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনিচুর রহমান বাবলু বলেন, বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। শুধু এ্যাসাইনমেন্টের জন্য শিক্ষার্থীরা আসছে। শিক্ষার্থীরা বলেছেন আপনি নিয়মিত ক্লাস নিচ্ছেন এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ওরা ছোট মানুষ তাই হয়তো ভুল তথ্য দিয়েছে আপনাদের।
এ্যাসাইনমেন্ট অনলাইনে নিতে হবে এমন নির্দেশ দেয়া হয়েছে এরপরেও আপনি কেন স্বশরীরে শিক্ষার্থীদের ডেকে ক্লাস নিচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনলাইনে অনেক ঝামেলা তাই তাদেরকে বিদ্যালয়ে ডাকা হয়েছে।
এ বিষয়ে হাতীবান্ধা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা (প.প) কর্মকর্তা নাঈম হাসান নয়ন বলেন, আমাদের সবার উচিত সরকারী বিধি নিষেধ মেনে চনা। আমরা যদি স্বাস্থ্য বিধি নিষেধ অমান্য করে চলি তাহলে চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে হবে। আর তাই করোনার সংক্রমন ঠেকাতে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলতে হবে।
এ বিষয়ে হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সামিউল আমিন বলেন, ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। যদি কেউ এই নিয়ম অমান্য করে তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
এ বিষয়ে লালমনিরহাট জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কোন ক্লাস নেয়া যাবে না। এ্যাসাইনমেন্ট চলবে সেটা অনলাইনে। তবে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক সামনে থেকে কোন ক্লাস নেয়া যাবে না। যদি কেউ এই নিয়ম অমান্য করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা।