চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার বোয়ালিয়া বৌরতলা দাখিল মাদরাসায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকীতে কেকের বদলে পাউরুটি কাটার মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে রাজশাহী সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. জিয়াউর রহমান আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।
রায়ে মামলার ১১ আসামির মধ্যে ৯ জন বেকসুর খালাস পেয়েছেন। আর মাদরাসার সুপার আবদুস সালাম (৫৫) ও সহকারী শিক্ষক গোলাম কবির (৪৮) দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। তবে আদালত তাঁদের কারাগারে না পাঠিয়ে পাঁচটি শর্তে প্রবেশন দিয়েছেন। শর্ত লঙ্ঘন করলে এক বছরের সশ্রম কারাদ- এবং এক লাখ টাকা জরিমানা দিতে হবে তাঁদের। জরিমানার অর্থ অনাদায়ে আরও এক মাস বিনাশ্রম কারাদ-।
প্রবেশনের শর্তগুলো হলো- প্রবেশনকালীন সময়ে আসামিরা কোন প্রকার অপরাধের সঙ্গে জড়িত হবে না বা একই ধরনের অপরাধ করবেন না। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরবের ইতিহাস সম্পর্কে নিজেরা পড়বেন এবং সহকর্মী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জানাবেন; আদালত এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তলব করলে যথাসময়ে উপস্থিত হবেন; প্রবেশনকালীন সময়ে জাতির পিতার নিজ হাতে লেখা তিনটি বই ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘কারাগারের রোজনামচা’ ও ‘আমার দেখা নয়াচীন’ পড়বেন। এ ছাড়া জাহানারা ইমামের ‘একাত্তরের দিনগুলো’ এবং রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের লেখা ‘একাত্তরেরর চিঠি’ বইগুলো পড়বেন। দুই আসামি প্রবেশনে থাকার সময় ১০টি করে ফলজ ও বনজ বৃক্ষের চারা রোপণ করবেন।
রাজশাহী সাইবার ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ইসমত আরা জানান, গত বছরের ১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকীতে বোয়ালিয়া বৌরতলা দাখিল মাদরাসায় কেকের পরিবর্তে পাউরুটি কাটা হয়। অনুষ্ঠানটি ফেসবুকে লাইভ প্রচার করেন শিক্ষক গোলাম কবির। ব্যঙ্গাত্মক এই আয়োজন ফেসবুকে দেখে স্থানীয়রা গোমস্তাপুর থানায় খবর দেন। খবর পেয়ে পুলিশ দুই মাদরাসার সুপার আবদুস সালাম ও শিক্ষক গোলাম কবিরকে আটক করে। পরে রাতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইউনুস আলী। আলোচিত এ মামলারই রায় ঘোষণা করলেন আদালত।
তিনি জানান, সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রবেশন কর্মকর্তা অভিযুক্ত দুই আসামির প্রবেশনের শর্ত মানার বিষয়টি তদারকি করে থাকেন। এ দুই শিক্ষকের ক্ষেত্রে তিন মাস পর পর তাঁদের শর্ত প্রতিপালন ও অগ্রগতি সম্পর্কে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য প্রবেশন কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আসামিদের প্রবেশনের সময় সন্তোষজনক হলে তাঁদের এই দ- চাকরিসহ ভবিষ্যৎ জীবনে কোনরূপ অযোগ্যতা বলে গণ্য হবে না বলে আদালত উল্লেখ করেছেন।