বেশ কয়েকবছর ধরে মৌমাছির সাথে যেন কলেজ শিক্ষার্থীরা বসবাস শুরু করেছেন। শেরপুরের নকলা উপজেলার একেবারেই দক্ষিণে চন্দ্রকোনা ইউনিয়নের চন্দ্রকোনা ডিগ্রী কলেজ। চরাঞ্চলে শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে কলেজ কর্তৃপক্ষ জানান, ১৯৯৪ ইং সনে প্রতিষ্ঠিত হয় এ কলেজটি। ২০১৮ সনে কলেজ ক্যাম্পাসে দৃষ্টিনন্দন একটি ৪ তলা ভবন নির্মিত হয়। তখন থেকে শীতকাল এলেই চারতলা নতুন ভবনের চারদিকের কার্নিশে মৌমাছিরা এক যুগে বাসা বাঁধে। মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত হয়ে উঠে পুরো কলেজ ক্যাম্পাস সহ আশেপাশের এলাকা। বিভিন্ন এলাকা থেকে সব বয়সের মানুষেরা দল বেঁধে আসে এ মৌচাক দেখতে। সবাই উৎসুক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে মৌচাকের দিকে। মধু আহরণের কাজেই ব্যস্ত থাকে মৌমাছিরা। কিন্তু কারও কোন ক্ষতি করে না। কলেজের ৪ তলা ভবনের চারপাশের কার্নিশে প্রায় ৭০টি মৌচাক রয়েছে বলে কলেজের শিক্ষকরা জানান,কলেজ ক্যাম্পাসে ছাত্র-ছাত্রীরা লেখাপড়া, দৌড়ঝাঁপ, খেলাধুলা সবই করছেন। শিক্ষক-কর্মচারীরা নিজেদের কাজকর্ম নিয়মিত করছেন। সেই সাথে অগণিত মৌমাছিও উড়াউড়ি করছে। কিন্তু কেউ কারও কোন ক্ষতি করছে না। অবস্থা দেখলে মনে হয় যেন তারা মিলেমিশে আছে ওরা যেন একের অন্যের আত্মীয়। ডাক্তারী মতে মধুতে রয়েছে প্রচুর এন্টি অক্সিডেন্ট ভিটামিন। তাছাড়া সর্দিকাশিতে মধু খেলে ভাল ফল পাওয়া যায়। রূপচর্চাতেও মধুর ব্যবহার কমতি নেই। দেশ ও বিদেশের বাজারে রয়েছে মধুর ব্যাপক চাহিদা। ব্রহ্মপুত্র নদ বিধৌত চন্দ্রকোনা এলাকায় প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে নদের পানি বেড়ে দু'পাড়ের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। এতে জমিতে প্রচুর পলি জমে। বর্ষা শেষে পানি নেমে গেলে পলি মিশ্রিত উর্বর জমিতে প্রচুর সরিষার চাষ হয়। সরিষা ফুলের মধু খেতে এখানকার সর্বত্র এ সময়ে মৌমাছিরা বাসা বাঁধে। কিন্তু চন্দ্রকোনা কলেজ ভবনে মৌমাছিরা যে পরিমাণ বাসা বাঁধে তা এখানকার আর কোথাও দেখা যায় না। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল ২০১৮ সন থেকে কলেজের কোন ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক কিংবা কর্মচারীকে মৌমাছি হুল ফুটিয়েছে এমন ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। এখানকার সকলের সাথে মৌমাছির যেন একটা নিবিড় সর্ম্পক তৈরি হয়েছে। দেখলে মনে হয় মানুষ আর মৌমাছি মিলে এক বিশাল পরিবারের মাঝে সকলেই বেঁচে আছেন ভালবাসার অটুট বন্ধনে। স্থানীয়রা জানান, সরিষার মৌসুম এলেই দলে দলে মৌমাছিরা এসে কলেজ ভবনে বাসা বাঁধতে শুরু করে। চারদিকে কোলাহল বেড়ে যায়। প্রতিদিন বিকেল হলেই আশপাশের লোকজন কলেজ মাঠে জমায়েত হয় মৌচাক দেখতে। তবে কেউ রাগীভাব আচরণ করে না। আমরা দর্শনার্থীদের পরামর্শ দেই কেউ যেন মৌচাকে ঢিল না ছুঁড়ে কিংবা খোঁচাখুঁচি না করে। কলেজের ছাত্ররা জানান, আমরা যখন শ্রেণিকক্ষে থাকি কিংবা দৌঁড়ঝাপ ও মাঠে খেলাধুলা করি তখন অগণিত মৌমাছি আমাদের মাথার উপর দিয়েই উড়াউড়ি করে। কিন্তু আমাদের শরীরে হুল ফুটায় না। আমরাও তাদেরকে বিরক্ত করিনা। তাদেরকে বন্ধু মনে করি।
চন্দ্রকোনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান গেন্দু জানান, প্রথম অবস্থায় মৌচাকের সংখ্যা কম থাকলেও দিন দিন তা বেড়ে ৭০টি তে দাঁড়িয়েছে। কলেজের কেউ মৌমাছির সাথে উস্কানিমূলক আচরণ করেন না। দু'বছর ধরে আমরা মৌচাকগুলো নিলামে বিক্রি করে দিচ্ছি। এতে কলেজের একটা বাড়তি আয়ের ব্যবস্থা হয়েছে। এবছর মৌচাকগুলো আমরা ৫৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি।