সহপাঠী, স্বজন ও অন্যন্য শিক্ষার্থীদের চোখের পানিতে ট্রাকচাপায় নিহত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থী মাহমুদ হাসান হিমেলের দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
বুধবার দুপুর আড়াইটায় নাটোরের গাড়িখানা কেন্দ্রীয় গোরস্থানে দাফন সম্পন্ন করা হয় হিমেলকে।
এর আগে বুধবার সকাল পৌনে ১১টায় রাবির কেন্দ্রীয় মসজিদ চত্বরে জানাজা শেষে তার মরদেহ নাটোরের বাড়িতে নেওয়ার উদ্দেশে রওনা হয় লাশবাহী গাড়িটি।
জানাজার আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা মুক্তমঞ্চে নিহত হিমেলের কফিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও সংগঠন শ্রদ্ধা জানিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে। সকালে তার মরদেহ চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণে আনা হলে কান্নায় ভেঙে পড়েন সহপাঠীসহ তার শুভাকাক্সক্ষীরা। হিমেলের এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন সহপাঠীরা।
বুধবার দুপুর সোয়া ১২ টার দিকে হিমেলের মরদেহের গাড়ি বহর নাটোর শহরের কাপুরিয়া পট্ট্রি এলাকায় তার নানার বাড়ি পৌঁছালে সেখানে এক হৃদয়বিদারক পরিবেশ সৃষ্টি হয়। সদা হাস্যোজ¦ল হিমেলের অকাল মৃত্যু তার স্বজনরা ও এলাকাবাসী মেনে নিতে পারছেন না। তারা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তাদের আহাজারিতে এলাকার বাতাস ভারী হয়ে ওঠে।
মরদেহবাহী গাড়ির সঙ্গে নাটোরে আসেন রাবি উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার, অধ্যাপক মো. জাকারিয়া, প্রোভিসি অধ্যাপক সুলতানুল ইসলাম ও প্রক্টর ভারপ্রাপ্ত লিয়াকত আলীসহ সহ¯্রাধিক শিক্ষার্থী।
রাবি উপাচার্য গোলাম সাব্বির সাত্তার নিহতের মায়ের হাতে ৫ লাখ টাকার একটি চেক তুলে দেন। এ সময় নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) নাদিম সারোয়ার ও পৌর মেয়র উমা চৌধুরী জলি উপস্থিত ছিলেন।
নাটোর শহরের কাপুড়িয়াপট্টি মহল্লার নানা অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলামের বাড়িতে মাহবুব হাসান হিমেলের জন্ম। শিশুকালে তার বাবার বাড়ি বগুড়ার শেরপুরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের লেখাপড়া শেষ করে তার নানার বাড়ি নাটোরে চলে আসে হিমেল। সেখান থেকেই নাটোর সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয় ও পরে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা সরকারি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিকপাস করেন হিমেল।
পরে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হতে মেধাবী হিমেল ভর্তি হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগে। চতুর্থ বর্ষের ছাত্র হিমেল মঙ্গলবার রাতে রাবি ক্যাম্পাসে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান।
নিহত হিমেলের বৃদ্ধ নানা মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘হিমেলকে তারা শিশুকাল থেকে নিজে হাতে মানুষ করেছেন। হিমেলের মত এমন সন্তান পাওয়া দুস্কর। পরের বিপদে সে নিঃস্বার্থভাবে ঝাঁপিয়ে পড়তো সেবার জন্য।’
রাবি উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির বলেন, হিমেলের মা যতদিন জীবিত থাকবেন তার আর্থিক দিকসহ সার্বিক দায়িত্ব আমরা নিচ্ছি। আগামীতে তাকে বড় একটি তহবিল দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। হিমেলের মা যেন তার জীবদ্দশায় আর কোনো কষ্ট না পান সেদিকটি আমরা দেখব।’
তিনি জানান, ঘটনায় অভিযুক্ত ট্রাকচালক ও হেলপারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তাদের যথাযথ বিচার হবে।