ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ শহরের ফয়লা গ্রামের বাসিন্দা আকবর আলী ও রাহিমা খাতুন দম্পতির একমাত্র ছেলে রাজিব আহমেদ। ঢাকার ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ালেখা শেষ করে তিনি আমদানী-রপ্তানী ব্যাবসা শুরু করেন।ব্যক্তিগত জীবনে তিনি দুই জমজ কন্যা ও এক পুত্র সন্তানের জনক। ছোটবেলা থেকেই গাছ লাগানোর প্রতি অন্যরকম এক ভালো লাগা কাজ করতো তার মধ্যে। তখন আম ও কাঁঠাল খেয়ে তার বীজ উঠানের এক কোণে বিছিয়ে রাখত। কিছুদিন পর ওই বীজ গুলো থেকে চারা বের হলে তিনি ওইগুলো নিয়ে অন্যত্র লাগাতেন। এভাবেই গাছ লাগানোর প্রতি তার নেশা তৈরি হয়। গাছের প্রতি ভালোবাসা থেকে নিজের চারতলা ভবনের বাইশ'শ স্কয়ার ফিটের ছাদে বাহারি সব গাছের সমন্বয়ে গড়ে তুলেছেন এক ছাঁদ বাগান। কালীগঞ্জ শহরে বোর্ডস্কুল পাড়ার চিত্রা নদীর অভিমুখ রোডে যেতেই চোখে পড়ে একটি দৃষ্টিনন্দন চারতলা ভবন। এই ভবনের দোতলায় তিনি বসবাস করেন।সিঁড়ি বেয়ে উঠে ছাদের দরজা খুলতেই এক মনোরম সুন্দর পরিপাটি বাগান দেখে চোখ জুড়িয়ে গেলো। ছাদের চার পাশে ২৮/৫ ফিট দৈর্ঘ্য ও প্রস্তের এবং ৪ ফিট উচ্চতায় বীমের পাশে বেড তৈরি করে তাতে ২৫% দোআশ মাটি, ৬০% জৈব সার ও বাকি ১৫ % কাঠের গুড়া এবং কোকোডাস্ট এর সমন্বয়ে চারা রোপণে জন্য প্রস্তুত করেন। এছাড়াও এই ছাদে ছোটো বড় টব ও ব্যারেলেও লাগানো হয়েছে গাছ। আবার ছাদের দুইপশে ২০/১০ ফিট দৈর্ঘ্য প্রস্তের ২ টি লোহার তৈরি মাচাও রয়েছে। ছাদবাগানটিতে শোভাপাচ্ছে নানা প্রজাতির ফুল ও ফলের গাছ, গুল্মলতা ও শাকসবজি।ফল গাছের মধ্যে রয়েছে ব্যতিক্রমী হলুদ ড্রাগন,থাইলংগান আশফল,ভিয়েতনামী বারোমাসী মাল্টা,বারী মাল্টা,পাকিস্থানী মাল্টা,বারোমাসী আমড়া,জাপানি সূর্য ডিম আম,আমেরিকান নামডকমাই আম,বারোমাসী মলোয়েশিয়া লুবনা আম,ইন্ডিয়ান ড্রপার আম,ব্যানানা আম, থাইটেন পেয়ারা,কাটিমন আম,হাইব্রিড় জাম,বারোমাসী কাঁঠাল,জামরুল,আনারস,
বারোমাসী লেবু ও সীডলেস লেবু।রাজিবের ছাদবাগানে ফুলের মধ্যে রয়েছে এব্রাকাড্রেবা হাইব্রিড হলুদ,কমলা,লাল ও খয়েরী রঙের গোলাপ,হাজারী গোলাপ,সাদা,হলুদ ও সিটি রঙের কাট গোলাপ,ডালিয়া,চন্দ্রমল্লিকা,গাঁদা,জিনিয়া,টাইমফুল ও রজনীগন্ধ্যা।এছাড়াও সবজিরমধ্যেএইছাদবাগানটিতেদেখাযায়,পালনশাক,সবুজশাক,পুইশাক,লাউ,বেগুন,মিস্টিকুমড়া,গাজর,ধনিয়াপাতা, শশা,সজনা,তরমুজ,মরিচ,বাঙ্গি, চুইঝাল এবং ফিলিপাইন জাতের আখ।ছাদটির পশ্চিম পাশের মাচায় পুইশাক এর ডোগার পাতার গোড়ায় গোড়ায় থোকা থোকা লাল সবুজের ফল শোভা পাচ্ছে। এই মাচাতেই রয়েছে লাউ ও চুই ঝাল।অপরদিকে পূর্বপাশের মাচায় রয়েছে শীম, শশা ও মিস্টিকুমড়া গাছ। কোনো প্রকার রাসায়নিক সার ছাড়াই প্রাকৃতিক বিভিন্ন উপাদানের সমন্বযয়ে রাজিব আহমেদ তার ছাঁদ বাগানের পরিচর্যার কাজ করেন। রোগবালাই এর ক্ষেত্রে বৈদ্দ মিক্সার প্রয়োগ করেন বলে তিনি জানান।মূলত দৈব মিক্সার প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি সাশ্রয়ী মূল্যের ছত্রাকনাশক।এই ছাঁদ বাগানের এক পাশের একটি কক্ষে তিনি ৬০ জোড়া দেশি বিদেশি জাতের কবুতরও পালেন এই বৃক্ষপ্রেমিক।এব্যাপারে বৃক্ষপ্রেমিক রাজিব আহমেদ জানান, বরাবরই গাছের প্রতি আমার অন্যরকম এক ভালোবাসা কাজ করে। আমার মতে গাছ আমাদের নানা রকমের ফুল ফলের পাশাপাশি পরিচ্ছন্ন অক্সিজেন দেয়। যা আমাদের বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য।তাছাড়া প্রকৃতির সংস্পর্শে থাকলে মনটাও ভালো থাকে সময়ও ভালো কাটে।পাশাপাশি গাছের প্রতি ভালোবাসা থাকলে বা যতœশীল হলে বিনিময়ে ফুল, ফল, ছায়া ও মনোরম পরিবেশ পাওয়া যায়। আমার লাগানো গাছে যখন ফুল ফল আসে তখন মনের মধ্যে খুব আনন্দ হয়।আমি বিভিন্ন নার্সারী ও পাশের দেশ ভারত থেকে উন্নত জাতের চারা ও বীজ সংগ্রহ করে আমার ছাদবাগানে তা রোপণ করেছি।এই সব গাছের চারা ও বীজ কাছের বন্ধুবান্ধব আত্মীয়দেরকেও উপহার হিসেবে দিয়েছি।আমি মনে করি গাছের প্রতি সকলের ভালোবাসা বাড়ানো উচিৎ।আমার বাগানের উৎপাদিত ফল নিজের পরিবারের প্রয়োজন মিটিয়ে পাড়া প্রতিবেশি ও নিকট আত্মীয় স্বজনদের মাঝে বিলিয়ে দিয়ে থাকি। আমি চেষ্টা করি বাগান পরিচর্যার কাজগুলো নিজে হাতে করতে।মাঝে মাঝে বাড়ির অন্যান্য সহযোগী সদস্যরাও সাহায্য করে।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার শিকদার মোহাম্মদ মোহায়মেন আক্তারের সাথে ছাদবাগানের ব্যাপারে কথা হলে তিনি জানান,মেট্রোপলিটন ও সিটি এরিয়াতে বাংলাদেশ কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে আলাদাভাবে কার্যক্রম পরিচালিত হয়।কিন্তু কালীগঞ্জ উপজেলা শহর হওয়ায় এখানে ছাদকৃষি তেমন একটা লক্ষ করা যায় না।আমি শহরের নলডাংগা রোডের একটি ছাদবাগান পরিদর্শন করেছি।আর ফয়লা রোডে রাজিব আহমেদ এর ছাদবাগান করার কথা শুনেছি।এই উপজেলার যে কেউ ছাদবাগান করলে আমরা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে সবরকম সহযোগিতা করবো।রাজিব আহমেদকেও আমার নানাভাবে সহযোগিতা করতে পারি যদি উনি চান।