ক্যান্সার ও হৃদরোগ প্রতিরোধী অধিক পুষ্টিগুন সম্পন্ন সূর্যমুখী ফুল চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ফরিদপুরে। কম খরচে আর স্বল্প সময়ে অধিক লাভ হওয়ায় খুশি চাষিরা। আর সূর্যমুখী ফুল চাষে সহযোগিতা করছে বিএডিসি ফরিদপুর। বিএডিসির চুক্তিবদ্ধ চাষিদের উৎপাদিত বীজ স্থানীয় চাহিদা পুরণ করে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। আর সূর্যমুখী ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে জেলা বিভিন্ন এলাকা থেকে দর্শনার্থীরা ছুটে আসছে। ফলে ফরিদপুর বীজ ভবন এখন দর্শনার্থীদের পদচারনায় মুখরিত হয়েউঠেছে। বাগানে আসছে বিভিন্ন বয়সের ও বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ। উপভোগ করছে ফুলে অপরূপ সৌন্দর্য।
বৈচিত্রময় কৃষির জেলা ফরিদপুর। এ জেলায় প্রায় সবধরণের ফসল উৎপন্ন হয়ে থাকে। সে কারণেই ফরিদপুরে গত কয়েক বছর ধরে চলছে অধিক পুষ্টিগুন সম্পন্ন সূর্যমুখী ফুলের চাষ। ক্যান্সার ও হৃদরোগ প্রতিরোধী অধিক পুষ্টিগুন সম্পন্ন সূর্যমুখীর তেল অন্যান্য সাধারণ তেলের চাইতে একটু আলাদা। কোলেস্টেরল মুক্ত প্রচুর পরিমাণে প্রাণশক্তি থাকায় সূর্যমুখী তেল আমাদের শরীরের দুর্বলতা, কার্যক্ষমতা বাড়াতে সূর্যমুখীর ভূমিকা অনন্য। রান্নার জন্য সয়াবিন তেলের চাইতে সূর্যমুখী তেল দশগুণ বেশী পুষ্টি সমৃদ্ধ। সূর্যমুখী তেল আমাদের শরীরের হাড় সুস্থ ও মজবুত করে। শরীরের ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও কপারের চাহিদা পূরণ করে। ভিটামিন ই সমৃদ্ধ এই তেল শরীরের নানা রকম ব্যথা দূর করতে সহায়তা করে। সূর্যমুখী তেলে থাকা ম্যাগনেসিয়াম আমাদের মানসিক চাপ দূর করে। এককথায় সূর্যমুখী তেলে মানব দেহের মহাওষুধ হিসাবে ভূমিকা পালন করছে।
আর সে কারনেই ফরিদপুরে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে সূর্যমুখী ফুলের চাষ। ফরিদপুর জেলার নয়টি উপজেলায় প্রায় দুই শতাধিক চাষি বারি সূর্যমুখী- ২ জাতের সূর্যমুখী ফুলর চাষ করেছেন। মাঠ জুড়ে হলুদ ফুলের সমারহ। ফুলের সৌন্দর্য দেখতে আসছে দর্শনার্থীরাও।
দর্শনার্থী মহুয়া ইসলাম বলেন, ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে এসেছি। একই সাথে হাজারো সূর্যমুখী ফুটে আছে। খুব ইনজয় করছি। এখানে প্রতিদিন হাজারো দর্শনার্থী আসা ফুলের অপরুপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে। এই সময় আমাদের বাসায় আত্মীয়স্বজন আসলে আমরা তাদেরকেও এই বাগান দেখাতে নিয়ে আসি।
আদর্শ কৃষক আলম ব্যাপারী জানান, অন্য ফসলের চেয়ে খরচ কম, অধিক লাভ হওয়ার কারণে এই ফুলের চাষ করেছি। সার অষুধ কম লাগে, ফলে অধিক লাভবান হতে পারি। আমার চাষাবাদ দেখে আশে পাশের কৃষকরাও এ ফুল চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছে।
নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে সারিবদ্ধভাবে বীজ বপন করা হয়। বীজ বপনের ৯৫ থেকে ১০০ দিনের মধ্যে ফসল তুলা যায়। সামান্য পরিমাণ রাসায়নিক সার ও দু’বার সেচ দিতে হয় এ ফসলে। এক একর জমিতে ৩৫ থেকে ৪০হাজার টাকা খরচ হয়। আর এক একর জমিতে প্রায় এক টন বীজ উৎপাদন হয়। এক টন বীজ ৮৫ থেকে ৯০হাজার টাকা বিক্রয় করা যায়। সূর্যমুখী গাছ জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা যয়।
ফরিদপুর বিএডিসি ডাল ও তৈলবীজ উৎপাদন খামামারের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মাহমুদুল ইসলাম খান জিয়া বলেন, ক্যান্সার ও হৃদরোগ প্রতিরোধী অধিক পুষ্টিগুন সম্পন্ন সূর্যমুখী ফুল চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ফরিদপুরে। আমাদের চুক্তিবদ্ধ চাষিদের দিয়ে সূর্যমুখী ফুল চাষ করে থাকি। এ জেলার উৎপাদিত বীজ সারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের চাহিদা পুরন করে থাকে।