নগরীতে দাম্পত্য কলহের কারণে বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। রেজিষ্ট্রিকৃত বিয়ের তালাক রেজিষ্ট্রেশনের মাধ্যমে বিচ্ছেদের ঘটনা সমাধানে সিটি কর্পোরেশনের যে ভূমিকা রয়েছে তা খুব একটা কাজে আসছেনা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আইনে স্থানীয় সরকার প্রশাসনকে বিবাহ বিচ্ছেদ বা তালাক নোটিশের অনুলিপি প্রদানের বাধ্যবাধকতা থাকলেও তাদের তরফ থেকে এ ব্যাপারে কোন ভূমিকা রাখার সুযোগ নেই। এর বাহিরে নিন্ম আয়ের অধিকাংশ পরিবার এখনো বিনা রেজিষ্ট্রেশনে (নোটারীর মাধ্যমে) ছেলে-মেয়ের বিয়ের আয়োজন করছেন। তাদের বিচ্ছেদও সেভাবেই হচ্ছে। এসব বিনা রেজিষ্ট্রেশনের অধিকাংশ বিয়ে হচ্ছে বাল্যবিয়ে। দাম্পত্য কলহের কারণে বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনার নেপথ্যেও রয়েছে ৮০% বাল্যবিয়ে।
বিসিসি’র সংশ্লিষ্ট শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এক হিসেবে ২০২০ সালে নগরীতে ২০৫টি তালাকের নোটিশ পৌঁছেছে নগর ভবনে। আর পরবর্তী বছরে (২০২১ সালে) এ সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২৪৪টি। কিন্তু শতকার ১০ ভাগ ক্ষেত্রেও দাম্পত্য জীবন পূণঃস্থাপনে নগর ভবনের পদক্ষেপ কাজে আসেনি।
সূত্রমতে, সরকারী আইন অনুযায়ী নগর ভবন এসব তালাক নোটিশের অনুলিপি পাবার পর বিচ্ছেদের নোটিশ দাতাসহ স্বামী-স্ত্রী উভয়কেই সমঝোতার চিঠি দিয়ে থাকেন। ৯০ দিনের মধ্যে এ ধরনের সমঝোতা হলে তারা পুনরায় দাম্পত্য জীবন শুরু করতে পারেন। কিন্তু বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই নোটিশ পেয়ে বিচ্ছেদকৃতরা নগর ভবনের সংশ্লিষ্ট শাখায় হাজির হচ্ছেন না। ফলে ৯০দিন পর স্বাভাবিকভাবেই বিবাহ বিচ্ছেদ কার্যকর হয়ে যাচ্ছে।
নগর ভবনের সংশ্লিষ্ট শাখার সূত্রমতে, নোটিশের অনুলিপি পেয়ে প্রতিটি ক্ষেত্রেই স্বামী-স্ত্রী উভয়কে আমন্ত্রণ জানানো সত্বেও শতকরা ৯০ ভাগের ক্ষেত্রে তাতে সাড়া পাওয়া যায়না। ২০২১ সালে ২৪৪টি তালাক নোটিশের মধ্যে ১০টি ক্ষেত্রেও সমঝোতা করা সম্ভব হয়নি। ওই বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত সমঝোতা হয়েছে মাত্র চারটি। আগের বছরের চিত্রও প্রায় একই। অথচ প্রতিবছরই তালাকের সংখ্যা ২০ থেকে ২৫% পর্যন্ত বেড়েই চলেছে।
বিসিসি’রর সংশ্লিষ্ট শাখার দায়িতপ্রাপ্ত এক কর্মকর্তা বলেন, আইন অনুযায়ী প্রতিটি তালাকের বিষয়ে সমঝোতার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু শতকরা ৯০ ভাগ ক্ষেত্রেই কোন সমাধান বা সমঝোতায় পৌঁছানো যায়নি।
এ ব্যাপারে সচেতন নাগরিক কমিটির বরিশাল জেলার সভাপতি অধ্যাপক শাহ সাজেদা বলেন, বাল্যবিয়ের কারণে দাম্পত্য কলহ থেকে শুরু হয়ে শেষপরিনতি হচ্ছে বিবাহ বিচ্ছেদ। সরকারের কঠোর পদক্ষেপের কারণে এখন আর বিয়ের রেজিষ্টারগণ (কাজী) বাল্যবিয়ে পড়াচ্ছেন না। তাই আইনের ফাঁক ফোকর পেরিয়ে বিনা রেজিষ্ট্রেশনে (নোটারীর মাধ্যমে) বাল্যবিয়ে পরানো হচ্ছে। ওইসব বিয়েতে উল্লেখ করা দেনমোহর পরিশোধে তেমন কোন আইনি জটিলতা নেই। যেকারণে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সামান্য বিষয় নিয়ে শুরু হওয়া দাম্পত্য কলহ শেষপর্যন্ত বিবাহ বিচ্ছেদে গিয়ে দাঁড়ায়। তাই বিবাহ বিচ্ছেদ ঠেকানোর জন্য এবং শতভাগ বাল্যবিয়ে মুক্ত বাংলাদেশ গড়তে নোটারীর মাধ্যমে বিয়ের সকল আয়োজন বন্ধ করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।