শীতের তীব্রতা কাটিয়ে গোমস্তাপুরের আমবাগানগুলোতে ফুটতে শুরু করেছে মুকুল। মুকুলের সমারহে বাতাসে বইতে শুরু করেছে পাগল করা ঘ্রান। অন্যান্য প্রতিটি গাছে আসতে শুরু করেছে মুকুলের মোহ। এ বছর আবহাওয়া অনুকূল থাকলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আম উৎপাদিত হবে বলে কৃষি বিভাগ ধারণা করছেন। অন্যদিকে বাগান মালিকরা এ বছর আমের বাম্পার ফলনের হবে বলে আশা করছেন। এবার উপজেলায় ৪ হাজার ২২০ হেক্টর জমির বিপরীতে ৩৮ হাজার ৪৭৫ মেট্রিকট্রন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
গোমস্তাপুর উপজেলার আমবাগানগুলো ঘুরে দেখা যাচ্ছে, সারি সারি আম গাছের ডালে শোভা পাচ্ছে হলুদ আর সবুজের মহামিলন। গাছের প্রতিটি ডালপালায় মুকুল ছেয়ে আছে। চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ছে মুকুলের পাগল করা ঘ্রাণ,ছড়াচ্ছে সেই মুকুলের সুবাসিত পাগল করা বাতাস। বাতাসে মিশে সৃষ্টি করছে মৌ মৌ গন্ধ। যে গন্ধ মানুষের মন ও প্রাণকে বিমোহিতসহ মুকুলের আশপাশে মৌমাছির আনাগোনা। অনেকেই মুকুল রক্ষা করতে গাছে গাছে ওষুধ স্প্রে করতে দেখা যাচ্ছে। অনেক আমবাগান মালিক বলছেন এ বছর আমের ফলন নির্ভর করছে আবহাওয়ার ওপর।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছর উপজেলায় ৪ হাজার ২২০ হেক্টর জমিতে আমগাছ রয়েছে। এর মধ্যে ফজলি ৯৮৫ হেক্টর, আশ্বিনা ১ হাজার ২’শ ৩০ হেক্টর, ল্যাংড়া ৩৯৫ হেক্টর, খিরসাপাত ২৫৫ হেক্টর, গোপাল ভোগ ২’শ ২০ হেক্টর, আমরুপালি ২’শ ৯০ হেক্টর, মল্লিকা ০৫ হেক্টর, লক্ষণভোগ ১৯৫ হেক্টর,বোম্বাই ১৫ হেক্টর, উন্নত জাত ৩’শ ৭৫ হেক্টর ও গুটি ২৭৫ হেক্টর জমিতে আম গাছ রয়েছে।
আম বাগান মালিক রবিউল ইসলাম বলেন, বর্তমানে আবহাওয়া ভাল থাকায়, বাগানের গাছে গাছে মুকুল ফুটতে শুরু করেছে। তার বাগানে গত কয়েক সপ্তাহ থেকে বেশির ভাগ গাছে মুকুল ফুটতে শুরু করেছে। পোকাণ্ডমাকড় ও অন্যান্য রোগবালাই থেকে মুকুল রক্ষা করতে প্রাথমিক পর্যায়ে পরিচর্যা শুরু করা হয়েছে। বড় ধরনের কোনো দুর্যোগ না হলে আমের বাম্পার ফলন হবে বলে তিনি ধারণা করছেন।
বোয়ালিয়া ইউনিয়নের বাগান মালিক ও আম ব্যবসায়ী মাসুদ জানান, আম বাগানে মুকুল আসার পর থেকেই তিনি গাছের প্রাথমিক পরিচর্যা শুরু করেছেন। মুকুলে রোগবালাইয়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ওষুধ স্প্রে করছেন।
এ বিষয়ে গোমস্তাপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সীমা কর্মকার বলেন, এখন পর্যন্ত উপজেলার আম গাছগুলো মুকুল এসেছে শতকরা ১০% জমিতে। উপজেলা কৃষি বিভাগ ও উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের মোট ৩টি স্প্রে করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। প্রথমে মুকুল আসার আগে ও পরে এবং মুকুল মটর দানা বাধার সময় একটি ছত্রাকনাশক ও একটি কীটনাশক স্প্রে করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। যাতে হপার পোকাসহ অন্যান্য রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ না হয়। তিনি বলেন, চলতি মৌসুমে গোমস্তাপুর উপজেলায় আম উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৮ হাজার ৪৭৫ মেট্রিকট্রন। তবে আবহাওয়া অনুকূল থাকলে আমের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি উৎপাদন হবে বলে তিনি জানান।