দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সমানুপাতিকভাবে কমছে কৃষি জমির পরিমাণ। এরই মধ্যে কৃষিজমি থেকে মাটি উত্তোলনে কমছে জমির উর্বরতা, যার প্রভাব পড়ছে ফসল উৎপাদনে। এরই মধ্যে ইটভাটা ও টাইলস কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে উর্বর কৃষিজমির উপরের স্তরের মাটি কেটে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে চাঁদপুর, টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহের বিভিন্ন এলাকার কৃষিজমি থেকে কৌশলে ব্যবসায়ীরা উপরের মাটি তুলে নিচ্ছেন। এ প্রবণতা রোধে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। তা না হলে কৃষি উৎপাদনে এর মারাত্মক প্রভাব পড়বে। মনে রাখা প্রয়োজন, ধান হলো আমাদের প্রধান ফসল; আর ধান গাছের শেকড় সাধারণত মাটির ৫ থেকে ৯ ইঞ্চি গভীরে প্রোথিত থাকে। আর এই ৯ ইঞ্চি পর্যন্তই মাটির মূল পুষ্টি উপাদানের সন্নিবেশ ঘটে থাকে। এ অবস্থায় উপরের স্তরের উর্বর মাটি উঠিয়ে নেওয়া হলে ধান উৎপাদন হ্রাস পাবে, যা বলাই বাহুল্য। উদ্বেগজনক হলো, জমির উপরের স্তরের উর্বর মাটি তুলে নেওয়ার পর দীর্ঘদিনেও উর্বরতা আগের পর্যায়ে ফিরে আসে না। ফলে ফসল উৎপাদন অনেকাংশে হ্রাস পায়। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে ফসলি জমি সুরক্ষার কোনো বিকল্প নেই। কাজেই উর্বর কৃষিজমির উপরের মাটি কেটে নেওয়া কোনোমতেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ কথা সত্য, শিল্পায়নের ক্ষেত্রে কিছু বিষয়ে ছাড় দিতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে উর্বর কৃষিজমি থেকে মাটি না নিয়ে অনুর্বর জমি থেকে মাটি নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য প্রশাসনিক ব্যবস্থার পাশাপাশি রাজনৈতিক উদ্যোগ থাকাও জরুরি। জাতীয় ভূমি ব্যবহার নীতি-২০০১-এর ৫.৫ অনুচ্ছেদে উল্লেখ রয়েছে, উর্বর কৃষিজমি যেখানে বর্তমানে দুই বা ততোধিক ফসল উৎপাদনের জন্য সম্ভাবনাময়, তা কোনোক্রমেই অকৃষিকাজের জন্য যেমন ব্যক্তি মালিকানাধীন নির্মাণ, গৃহায়ন, ইটভাটা তৈরি ইত্যাদির জন্য ব্যবহার করা যাইবে না। অথচ জাতীয় ভূমিনীতিবিরোধী এ কাজে যুক্ত রয়েছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে কৃষকের অসচেতনতা ও অজ্ঞতা। তাছাড়া কৃষিজমির উপরের স্তরের মাটি কেটে নেওয়ার ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতন না হওয়ায় অনেক কৃষক মাটি বিক্রি করে দেন। আবার অনেকে বিক্রি করতে বাধ্য হন। এটা শুধু কৃষকের ক্ষতি নয়, সামগ্রিকভাবে জাতীয় খাদ্যশস্য উৎপাদনের জন্যও বড় ক্ষতি-এ বিবেচনায় দ্রুত এ বিষয়ে আইন প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। সবচেয়ে বড় কথা, কৃষিজমির উপরিভাগ থেকে অপরিকল্পিতভাবে মাটি উত্তোলন বন্ধে সংশ্লিষ্ট মহল তথা সরকারকে কঠোর হতে হবে।