স্বার্থপর ও অসৎ মানুষে সমাজ যখন পরিপূর্ণ তখন কিছু মানুষের সততা ও ন্যায়নিষ্ঠা আমাদের মুগ্ধ করে। এসব ভালো মানুষের কারণেই আমাদের ঘুণে ধরা সমাজ যেন এখনো টিকে আছে। চুয়াডাঙ্গার জীবননগরের শাহপুর গ্রামের জমির উদ্দিন বিশ্বাস এমনই একজন মানুষ। একসময় তিনি পেশায় ছিলেন দিনমজুর। অন্যের জমিতে শ্রম বিক্রি করে তাঁর সংসার চলত। নিজের কোনো জমি ছিল না।
জমির উদ্দিন বিশ্বাসের ছিল না জমি কেনার সামর্থ্যও। চাষ কিংবা বসতবাড়ি তৈরির উপযোগী জমি কেনার মতো অর্থ তাঁর ছিল না। ভূমিহীন জমির উদ্দিন বিশ্বাস মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরসহ জমি পাওয়ার জন্য জীবননগর ইউএনও বরাবর আবেদন করে আশ্রয়ণ প্রকল্পে দুই কক্ষের একটি সেমিপাকা ঘর পেয়েছিলেন। সেই ঘরে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে উঠেছিলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর উপহার দেওয়া ঘরটি আবার সরকারকে ফিরিয়ে দিতে চান জমির উদ্দিন বিশ্বাস। কারণ তিনি এখন স্বাবলম্বী। নিজের ঘর হয়েছে। আগে অন্যের জমিতে শ্রম দিতেন। এখন তিনি নিজেই উদ্যোগী কৃষক। জমি কিনে সেই জমিতে বাড়ি করেছেন। এখন প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর ফিরিয়ে দিতে চান। সেই ঘরটি অন্য কোনো ভূমিহীনকে দেওয়া হোক, এই ইচ্ছাও ব্যক্ত করেছেন তিনি।
এতে কোন সন্দেহ নেই যে, জমির উদ্দিন বিশ্বাস যে কাজটি করতে পেরেছেন, তা অনেকের পক্ষেই করা সম্ভব নয়। ‘গরিবের ঘর দেওয়া হলো ধনীদের’, ‘ভূমিহীনের ঘর পেয়েছেন, থাকেন বিলাসবহুল বাড়িতে’Ñএমন শিরোনামের খবর তো আমরা দেখি গণমাধ্যমে। অভিযোগ আছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জমি ও ঘর দেওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে অনিয়ম করে কিছু দেওয়া হয়েছে সচ্ছল পরিবারকেও। ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য নির্মিত এই ঘরগুলো বরাদ্দ পাওয়াদের মধ্যে ব্যবসায়ী, খামার মালিক, এনজিওতে চাকরিজীবী ও পাকা বাড়ির মালিকের পাশাপাশি একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তি রয়েছেন বলেও অতীতে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগ রয়েছে, বাস্তবায়ন পর্যায়ে এসে প্রকল্পের তালিকাভুক্ত সুবিধাভোগীদের বাদ দিয়ে ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তালিকাবহির্ভূতদের নামে। অনেক ক্ষেত্রে ৫০-৬০ হাজার টাকার বিনিময়ে দানপত্রে স্বাক্ষর করে একজনের নামে বরাদ্দ দেওয়া ঘর অন্যজনকে দেওয়া হচ্ছে।
এই যখন অবস্থা তখন চুয়াডাঙ্গার জীবননগরের শাহপুর গ্রামের জমির উদ্দিন বিশ্বাস আমাদের সমাজে সততার এক উজ্জ্বল উদাহরণ হিসেবে নিজেকে তুলে ধরলেন। নিজের বাড়ি হওয়ার পর উপহারের বাড়ি ফিরিয়ে দেওয়ার ইচ্ছে ব্যক্ত করা কম কথা নয়। সমাজে জমির উদ্দিন বিশ্বাসের মতো আরও সৎ ও উদার মানুষ তৈরি হোক এই প্রত্যাশা।