ছাগল চুরির অপবাদ দিয়ে ঝালকাঠি জেলার নলছিটিতে রাজিব হোসেন রাজু (২৮) নামে এক যুবককে নির্দয়ভাবে পেটানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় লাঠি দিয়ে আঘাত করে তাকে মারাত্মক জখম করা হয়েছে। গুরুতর আহত অবস্থায় রাজুকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলেও সেখানে ভর্তি করতে বাধা দিয়ে নিজ বাড়িতে নিয়ে যায় ছাগল মালিক উপজেলার সূর্য্যপাশা গ্রামের ইউনুস তালুকদার।
আহত রাজু উপজেলার তেওলা গ্রামের মো. মোকছেদ মীরার ছেলে। নির্যাতনের ঘটনা জানাজানির পর ক্ষোভে ফেটে পড়েন এলাকাবাসী।
তবে যে ছাগল চুরির ঘটনায় তাকে পেটানো হয়েছে সেই ছাগলটি রাজুকে মারধরের আগেই সোহাগ নামে এক কসাইয়ের কাছে থেকে উদ্ধার করেন ছাগলের মালিক ইউনুস তালুকদার। এমন পরিস্থিতিতে রাজুর স্বজনরা ঘটনার বিচার দাবি করে হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছেন।
নির্যাতনের ঘটনায় রাজুর মা তছলিমা বেগম নলছিটি থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। বিকেলে কসাই সোহাগকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে নলছিটি থানায় এ বিষয়টি মিমাংসা করতে বৈঠক বসা হয়। থানার এসআই মিজানুর রহমান জানালেন সোহাগ কশাই পলাতক থাকায় তাকে আটক করা সম্ভয়নি। তাকে ধরতে ৩ পুলিশ কর্মকর্তা মাঠে কাজ করছে। কিন্তু কসাই সোহাগ নলছিটি থানায় অবস্থানের কথা স্বীকার করে ফোন কেটে দেন।
বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সরেজমিনে নলছিটি উপজেলার সূর্য্যপাশা গ্রাম গিয়ে দেখা যায়, ছাগল মালিক ইউনুস তালুকদারের বাসার সামনের বিছানায় ব্যথায় কাতরাচ্ছেন রাজু।
তিনি সাংবাদিকদের জানান, গত মঙ্গলবার দুপুর থেকে ইউনুস তালুকদার তার ছাগলটি খুঁজে পাচ্ছিল না। পরদিন (বুধবার) সকালে নলছিটির লঞ্চঘাট বাজারের এক কসাইয়ের কাছ থেকে চোরাই ছাগলটি উদ্ধার করেন তিনি। এরপর বেলা ১১টার দিকে তার ছেলে রাসেল, সুজনসহ আরো কয়েকজন আমাকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে ছাগল চুরির অপবাদ দিয়ে মারধর করে শুরু করে। মারধরের একপর্যায়ে আমি অজ্ঞান হয়ে পড়লে হামলাকারীরা তাকে বাড়িতে নিয়ে যায়। বেশ কিছু সময়ে জ্ঞান না ফিরলে মৃত্যু হয়েছে মনে করে আমাকে বাড়ির উঠানে ফেলে পালিয়ে যায় তারা এলাকাবাসীর মাধ্যমে খবর পেয়ে পুলিশ আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। সেখনে আমাকে দুটি ইনজেকশন দেয়া হয়। পরে হাসপাতালে ভর্তি না রেখে ইউনুস তালুকদার আমাকে তার বাড়িতে নিসে আসে। মারধরের পর থেকে আমি বাম কানে কিছু শুনতে পাচ্ছি না। তিনি বলেন, আমি চুরি করেনি। তারপরও আমাকে নির্যাতন করা হয়েছে।
চুরি হওয়া ছাগলের মালিক মো. ইউনুস তালুকদার বলেন, চোরাই ছাগলটি সোহাগ নামে এক কসাইয়ের কাছে পাওয়া গেছে। সেটি শনাক্ত করে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে। তবে ছাগল চোর সন্দেহে রাজুকে মারধরের বিষয়ে তিনি বলেন, তাকে অন্য কেউ মারধর করেছে। এতে তার ছেলেরা জড়িত নয়।
এ ব্যপারে কসাই সোহাগ বলেন, তাকে থানায় ডেকে আনা হয়েছে। পরে কথা বলবেন বলে ফোটে কেটে দেয়। এরপরে একাধিকবার ফোন দিয়েও তা কেটে দেন।
ওই ছাগলটি তিনি সুগন্ধিয়া হাট থেকে কিনেছেন। ক্রয়ের ঘটনার একাধিক সাক্ষী আছে। তবে ক্রয় করা ছাগলটি কেন ইউনুস তালুকদারকে ফেরত দিলেন-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারী নলছিটি থানার এসআই মিজানুর রহমান জানান, ৯৯৯ ফোনে জানার পর ঘটনার খবর পেয়ে আহত রাজুকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়েছে। সোহাগ কশাইয়ের কাছ থেকে ছাগলটি উদ্ধার করা হয়েছে। তাকে আটকের চেষ্টা চলছে। তবে ছাগল চুরি বা রাজুকে মারধরের ঘটনায় তার মা লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বলে শুনেছি। তবে মিমাংসার চেষ্টার কথা অস্বীকার করেন।
নলছিটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আতাউর রহমান বলেন, চোর সন্দেহে রাজুকে মারধরের বিষয়ে থানায় লিখিত অভিযোগর ভিত্তিতে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। চোরাই ছাগলের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কসাই সোহাগকে থানায় আনা হয়েছে।