বিশ্বের অনেক বড় বড় অর্থনীতির দেশেও এত ব্যাংক নেই, যতটা বাংলাদেশে রয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে ৫২টি অনুমোদিত ব্যাংক রয়েছে। কিন্তু দেশের জিডিপির আকারের দিকে লক্ষ করলে অর্থনীতি ও ব্যাংকের সংখ্যার সঙ্গে সামঞ্জস্য খুঁজে পাওয়া যায় না। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ থাইল্যান্ডের বর্তমান জিডিপি ৫০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। অথচ দেশটিতে ব্যাংকের সংখ্যা মাত্র ১৮টি। এর মধ্যে ৬টি সরকারি ও ১২টি বেসরকারি ব্যাংক। অন্যদিকে অর্থনৈতিকভাবে আরেক উন্নত দেশ সিঙ্গাপুর। দেশটির ৩৪০ বিলিয়ন জিডিপির বিপরীতে ব্যাংক রয়েছে মাত্র ৫টি। এদিকে মালয়েশিয়ায় ৩৩৭ বিলিয়ন জিডিপির বিপরীতে ব্যাংকের সংখ্যা মাত্র ৮টি। দেশগুলোতে দেশীয় ব্যাংকের সংখ্যা কম হলেও সমৃদ্ধ অর্থনীতির চমকে অনেক বিদেশি ব্যাংক দেশগুলোতে বিনিয়োগ করছে। খোদ থাইল্যান্ডে বিদেশি ব্যাংকের সংখ্যা ৪৫টি, সিঙ্গাপুরে ২২টি ও মালয়েশিয়ায় ২৬টি। এদিকে বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের তফসিলভুক্ত ব্যাংকের সংখ্যা ৬১। এর মধ্যে বিদেশি ব্যাংক মাত্র ৯টি। তিনটি বিশেষায়িত ব্যাংকসহ দেশে মোট ৯টি রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক আছে। বাকি ৪৩টি ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বেসরকারি উদ্যোগে। এ ছাড়া নতুন নতুন বেসরকারি ব্যাংকের অনুমোদনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন জমা পড়ছে। বিশ্বব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষে বাংলাদেশের জিডিপির আকার ৩২৩ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে জিডিপির ভিত্তিবছর পরিবর্তন করায় ওই অর্থবছর শেষে জিডিপির আকার ৩৭৩ বিলিয়ন ডলার দেখানো হয়েছে। প্রায় ১৩০ কোটি মানুষের দেশ ভারতে ব্যাংকের সংখ্যাও বাংলাদেশের তুলনায় অনেক কম। দেশটিতে ১২টি সরকারি ব্যাংকের পাশাপাশি কার্যক্রম পরিচালনা করছে ২২টি বেসরকারি ব্যাংক। এই ব্যাংকগুলোই ভারতজুড়ে ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে। তবে ভারতে অঞ্চলভিত্তিক ৪৩টি ব্যাংকের পাশাপাশি ৪৬টি বিদেশি ব্যাংকও কার্যক্রম পরিচালনা করছে। জাতীয়ভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করা ব্যাংকের তুলনায় ভারতে আঞ্চলিক অনেক ব্যাংকের অবস্থান শক্তিশালী। অন্যদিকে পাকিস্তানে ২৬২ বিলিয়ন জিডিপির বিপরীতে ব্যাংকের সংখ্যা ২২টি, ফিলিপাইনে ৩৬১ বিলিয়নের বিপরীতে ১৭টি, নাইজেরিয়ায় ৪৩২ বিলিয়নের বিপরীতে ২০টি ও মিশরে ৩৬৫ বিলিয়নের বিপরীতে ব্যাংকের সংখ্যা ৩৯টি। মূলত একটি দেশ অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হলে, সেখানে বিদেশি ব্যাংকের কার্যক্রম বৃদ্ধি পায়। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে গত কয়েক দশকেও এমনটা ঘটেনি। বাংলাদেশে বেসরকারি ব্যাংকের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পেলেও কমেছে বিদেশি ব্যাংকের সংখ্যা।