গারো পাহাড়ে হাতি তাড়ানোর সোলার ফ্রেন্সিং
প্রকল্প কোনো কাজে আসছে না। সম্পূর্ণভাবে অকেজো হয়ে পড়েছে দেশের প্রথম
বৈদ্যুতিক বেড়া বা সোলার ফ্রেন্সিং এই প্রকল্প। এতে গচ্ছা গেছে সরকারের
কোটি টাকা।
স্থানীয় ও পরিবেশবাদীদের অভিযোগ, অপরিকল্পিতভাবে ও দেখভালের মানুষ না
থাকায় সরকারের এই প্রকল্প ভেস্তে গেছে।।
জানা যায়, জেলার সীমান্তবর্তী শ্রীবরদী, নালিতাবাড়ি ও ঝিনাইগাতী উপজেলার
বিশাল এলাকাজুড়ে অবস্থিত গারো পাহাড়। এ পাহাড়ি এলাকার মানুষের প্রধান
সমস্যা হচ্ছে বন্যহাতি। হাতির উপদ্রুত থেকে বাঁচতে ২০১৭ সালে ভারত,
নেপাল, শ্রীলংকা ও আফ্রিকার দেশগুলোর আদলে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায়
শেরপুরের ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ি সীমান্তের ১৩ কিলোমিটার জুড়ে সৌর
বিদ্যুতের মাধ্যমে তার দিয়ে বেড়া নির্মাণ করে বনবিভাগ। কিন্তু অপরিকল্পিত
ও লোকবলের অভাবে পুরো প্রকল্প ভেস্তে গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, কয়েকটি জায়গায় তারের খুঁটি থাকলেও সেখানে শুকানো
হচ্ছে কাপড়, আবার নিয়ন্ত্রণ কক্ষ তালাবদ্ধ থাকলেও নেই কোনো যন্ত্রপাতি,
চুরি হয়ে গেছে ব্যাটারি, নেই সোলার প্যানেল। আবার ফ্রেন্সিংয়ের গেইট ভেঙে
সেখানেই তৈরি করে দোকান। কিছুকিছু জায়গায় ফ্রেন্সিংয়ের তার থাকলেও
সেটিকে টিন দিয়ে ঘিরে রেখেছে স্থানীয়রা। ফলে প্রকল্পটির উপর আস্তা
হারিয়েছে পাহাড়িরা।
ঝিনাইগাতীর কাংশা ইউনিয়নের বাসিন্দা ওহাব আলী, আব্বাস উদ্দিন, সেকান্দর
মিয়া জানান, নির্মাণের কিছুদিন পরেই ফ্রেন্সিংয়ের তার ছিঁড়ে যায় এবং
আস্তে আস্তে একেবারে শেষ হতে থাকে। সরকারি কোনো লোকজন আসেনি দেখতে।
ছোট গজনীর বাসিন্দা ইকলাছ সাংমা বলেন, ‘এ বেড়া কোনো কাজে আসেনি। বেড়া
নির্মাণের পর থেকেই কেউ দেখতে আসেনি। ব্যটারিগুলো চুরি হয়ে গেছে।
গুরুচরণ দুধনই এলাকার বাসিন্দা দালবাধ মলয় বলেন, ‘ফ্রেন্সিং বেড়ায়
নিম্নমানের তার ব্যবহার করা হয়েছিল, এজন্য নির্মাণের কয়েকদিন পরই তা ময়লা
হয়ে ছিঁড়ে গেছে। আর এগুলো দেখার কোনো লোক ছিল না, যার ফলে যে যার মতো এসব
চুরি করে নিয়ে গেছে।’
বাংলাদেশ এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিমের ট্রেইনার আদনান আজাদ বলেন, ‘গারো
পাহাড়ে যে সোলার ফ্রেন্সিং নির্মাণ করা হয়েছিল তা অপরিকল্পিত। যার ফলে
নির্মাণের কয়েকদিন পরে তা নষ্ট হয়ে গেছে। কিন্তু আমরা বিভিন্ন মিডিয়াতে
দেখেছি বন বিভাগের কর্মকর্তা বলেছেন যে, অন্যান্যে দেশের আদলে তৈরি করা
হয়েছে। কিন্তু অন্যান্য দেশের সাথে এই ফ্রেন্সিংয়ের কোনো মিল পাইনি আমরা।
তাই সরকারের সঠিক নজরদারি ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলে সীমান্ত অঞ্চলে যে
হাতি-মানুষের দ্বন্দ্ব আছে, তা একেবারে নিরসন হবে বলে ধারণা করছি।’
প্রকৃতি ও পরিবেশ বাদী সংগঠন সবুজ আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক
সম্পাদক মো. মেরাজ উদ্দিন বলেন, ‘অপরিকল্পিতভাবে এমন সোলার ফ্রেন্সিং
করার কোনো প্রয়োজন ছিল না। কারণ এতে উপকারের চেয়ে সরকারের ক্ষতি হয়েছে।
তাই আমরা আশা করব, আগামীতে সোলার ফ্রেন্সিংয়ের কোনো উদ্যোগ নিলে যেনো
পরিকল্পিতভাবে নেওয়া হয়।’
জেলা প্রশাসক মো. মোমীনুর রশীদ বলেন, ‘হাতি-মানুষের দ্বন্দ্ব নিরসনে
প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট দফতর কাজ করছে, আশা করছি খুব শীঘ্রই হাতি-মানুষের
দ্বন্দ্ব নিরসন হবে।’
সম্প্রতি শেরপুর সীমান্তে হাতি-মানুষের দ্বন্দ্ব নিরসনে স্থানীয়দের সাথে
এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করেছিল বন বিভাগ। যেখানে উপস্থিত ছিলেন প্রধান বন
সংরক্ষণ আমির হোসাইন চৌধুরী। এ সময় সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘যে দশ
কিলোমিটার সোলার ফ্রেন্সিং নির্মাণ করা হয়েছিল, সেটি ছিল দেশের প্রথম
প্রকল্প। এই প্রকল্পে যা যা ত্রুটি ছিল তা থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে শীঘ্রই
গারো পাহাড়ে আরও দশ কিলোমিটার সোলার ফ্রেন্সিং নির্মাণ করা হবে। পাশাপাশি
আগেরগুলো সংস্কার করা হবে। এতে হাতি-মানুষের দ্বন্দ্ব নিরসন হবে বলে আমরা আসা করছি।’