ফরিদপুরের নগরকান্দার তালমা মোড় এলাকার ব্যবসায়ী ও উপজেলা মটর চালক লীগের নেতা মো: হারুন অর রশিদ (৪৮) কে কুপিয়ে পঙ্গু করে দিয়েছে সন্ত্রাসীরা। বুধবার বিকেলে সাড়ে পাঁচটার দিকে তালমা মোড় এলাকায় এ হামলার শিকার হন হারুন অর রশিদ। মারাত্বক আহত অবস্থায় হারুনকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ট্রমা সেন্টারে ভর্তি রাখা হয়েছে। হামলাকারীরা হারুনকে বেদম ভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে দুই হাত ও দু পায়ের রগ কেটে দেবার পাশাপাশি কয়েকটি আঙুল কেটে নিয়েছে। শরীরের জখমী বিভিন্ন স্থানে অর্ধ শতাধিক সেলাই দেওয়া হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী, থানা পুলিশ ও অভিযোগে জানা গেছে, তালমা মোড়ের আল রশিদ ওয়াকর্শপের মালিক ও মটরচালক লীগের নগরকান্দা শাখার উপদেষ্টা কমিটির সদস্য মো: হারুন অর রশিদ বিকেলে তালমা মোড়ে হাসান স্টোর নামের একটি দোকানে বিকাশে টাকা তুলতে যায়। সে সময় আগে থেকে ওতপেতে থাকা কয়েকজন সন্ত্রাসী তাকে রামদা, ছ্যান, লোহার রড নিয়ে হামলা চালায়। হামলাকারীরা প্রকাশ্যে বেদমভাবে কুপিয়ে মারাত্বক ভাবে আহত করে ফেলে রেখে চলে যায়। পরবর্তীত স্থানীয়রা আহত হারুনকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানান, আহত হারুনের অবস্থা তেমন একটা ভালো নয়। শরীর থেকে প্রচুর রক্তক্ষন হয়েছে। তার বাম হাত ও ডান পায়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানোর কারণে হাত ও পা মারাত্বক ক্ষতি হয়েছে। তাছাড়া হাত ও পায়ের কয়েকটি আঙ্গুলের অবস্থা বেশ খারাপ।
ব্যবসায়ী ও মটর চালক লীগের নেতা হারুন অর রশিদ অভিযোগ করে বলেন, সম্প্রতি শেষ হওয়া তালমা ইউপি নির্বাচনে তিনি নৌকা প্রতিকের প্রার্থীর পক্ষে অংশ নেওয়ায় তার উপর ক্ষিপ্ত হয় প্রতিপক্ষ। তিনি নিজেও মেম্বার হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান। নির্বাচনের আগে থেকেই তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। নির্বাচনের পর এ নিয়ে প্রতিপক্ষের সাথে তার কয়েক বার ঝামেলা হয়। সন্ত্রাসীরা তাকে ব্যবসা বন্ধ করে অন্যত্র চলে যাবারও হুমকি দেয়। তাছাড়া চাঁদা দাবী করে তার কাছে। এ নিয়ে তিনি থানায় মামলা করেন। মামলার পর থেকে আরো ক্ষিপ্ত ছিল প্রতিপক্ষের লোকজন। তারা সুযোগ খুঁজতে থাকে। তাকে প্রানে মেরে ফেলার জন্যই এ হামলা চালানো হয়েছে বলে জানান তিনি। এ সময় তার কাছে থাকা ৫০ হাজার টাকাও ছিনিয়ে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। হারুন কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, সারা জীবন নৌকার পক্ষে কাজ করেছি। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সাধ্যমতো সাহায্য করেছি। আজ ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, আমার দল ক্ষমতায় আর আমি নৌকার পক্ষে কাজ করার কারণে পঙ্গুত্বের শিকার হলাম। আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ন্যায় বিচার প্রত্যাশা করি।
হামলার সময় একটি দোকানের সিসি টিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, হারুন বিকাশের দোকানে দাঁড়িয়ে থাকার সময় বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে ব্যাগ হাতে একটি লোক দোকানের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। সাথে সাথে আরো চার ব্যক্তি দোকানের সামনে গিয়ে হারুনকে টেনে হিচড়ে রাস্তায় নিয়ে আসে। পরে তারা ব্যাগের মধ্যে থাকা ছ্যান ও রামদা এবং লোহার রড দিয়ে বেদমভাবে কোপাতে থাকে। এ সময় হারুন চিৎকার করলেও দোকানের সামনে থাকা অন্তত ১০/১২ ব্যক্তি নিরবে দাঁড়িয়েছিল। তারা সন্ত্রাসীদের সামনে গিয়ে হারুনকে রক্ষা করেনি। সন্ত্রাসীরা চলে যাবার পর কয়েক ব্যক্তি একটি ভ্যানে করে হারুনকে হাসপাতালে পাঠায়।
এ বিষয়ে একটি মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানান হারুন অর রশিদের ছেলে লিয়াকত হোসেন। ব্যবসায়ীর উপর হামলার বিষয়ে থানায় এখনো কোন অভিযোগ পাননি বলে জানায় নগরকান্দা থানা পুলিশ।