চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর স্টেশনকে পূর্ণাঙ্গ রেলবন্দর ও অবকাঠামো নির্মানের দাবিতে চলমান কর্মসূচীর অংশ হিসেবে অনশন শুরু করে রেল বন্দর বাস্তবায়ন পরিষদ ও তিন উপজেলার বাসিন্দারা। শনিবার সকাল ১০ থেকে রহনপুর স্টেশন প্লাটফর্মে চলে এ কর্মসূচী। চার ঘন্টাপর দুপুরে তা স্থগিত করেন রহনপুর রেল বন্দর বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক নাজমুল হুদা খান রুবেল। রহনপুর রেলবন্দর বাস্তবায়ন পরিষদ গোমস্তাপুর-নাচোল-ভোলাহাট উপজেলার ব্যানারে ৩০ জন মুক্তিযোদ্ধাসহ বিভিন্ন পেশার জনগণ অংশ নেয় এ অনশনে। অনশনকারীদের সমর্থন জানিয়ে একইস্থানে বিক্ষোভ করছেন এলাকাবাসী। গত ২২ জানুয়ারী থেকে রহনপুর স্টেশনকে পূর্ণাঙ্গ রেলবন্দর দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছেন তাঁরা। এতে তিন উপজেলার
বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক- সাংস্কৃতিক সংগঠন,মুক্তিযোদ্ধা,শিক্ষার্থীরা সমর্থন জানিয়ে কর্মসূচীগুলোতে অংশ নিয়েছেন। এ ছাড়া রহনপুর রেলওয়ে শুষ্ক স্টেশনকে পূর্ণাঙ্গ ট্রানজিট পয়েন্ট (রেল বন্দর) রুপান্তর আবেদন জানিয়ে গত ২৪ ফেব্রুয়ারী স্মারকলিপি দেন বাস্তবায়ন পরিষদের নেতারা।
জানা গেছে, রহনপুর রেলস্টেশটি ব্রিটিশ আমলে স্থাপিত। স্টেশনের আশপাশে রেলওয়ের প্রায় ৩৭৮.৮৮ একর জমি রয়েছে। এর মধ্যে কেউ কেউ লিজ নিলেও অনেক জমি বেদখল হয়ে আছে। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ের পর স্টেশনটি অবহেলিত হতে থাকে। পরবর্তীতে স্টেশনের অবকাঠামো অন্যান্য বিষয়াদি প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত হতে থাকে। নতুন করে ১৯৯১ সালে এ স্টেশন দিয়ে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে আমদানি রপ্তানি শুরু হয়। এ ছাড়া ২০১১ সালে বাংলাদেশ-ভারত-নেপাল ত্রিদেশীয় চুক্তির মাধ্যমে রহনপুর স্টেশন দিয়ে ভারতের সিঙ্গাঁবাদ রেলস্টেশন হয়ে নেপালে পণ্য সামগ্রী পৌছায়। বর্তমানে এ রুট দিয়ে পণ্য আমদানি-রপ্তানী অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু পণ্য আমদানি-রপ্তানী করলেও ট্রানশিপমেন্ট সুবিধা (লোড-আনলোড),ইয়ার্ড বৃদ্ধি,ওয়্যারহাউস নির্মাণ,ওয়াশিং প্লান্ট ইত্যাদির স্থানীয়র দাবি জানিয়ে আসলেও কোন ধরণের ব্যবস্থা নেয়নি রেলকর্তৃপক্ষ।
এদিকে ২০১৪-১৫ইং হতে ২০২১-২২ইং অর্থবছরে রেলওয়ে রাজস্ব আয় করেছে দুইশ একান্ন কোটি ছাপান্ন লাখ চব্বিশ হাজার ৯০১ টাকা। অন্যদিকে রহনপুর কাস্টমস অফিস গত ৬ বছরে রাজস্ব আদায় করেছে একশ উনসত্তর কোটি পঁয়ত্রিশ লাখ সাতানব্বই হাজার ৭৫০ টাকা বলে জানা গেছে।
রহনপুর না আমনুরায় রেল বন্দর হবে এ নিয়ে চলছে সমীক্ষা। পশ্চিমাঞ্চলের রেল কর্তৃপক্ষ তাঁদের প্রস্তাবনা পাঠাচ্ছেন বলে একটি সূত্রে জানা গেছে। এ নিয়ে দুই এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে চলছে টানাপোড়ন।
তাঁরই অংশ হিসেবে রহনপুর রেল বন্দর বাস্তবায়ন পরিষদ শনিবার রহনপুর রেলস্টেশন প্ল্যাটফর্মে অনশন কর্মসূচি পালন করেছেন। অনশন কর্মসূচি চলাকালে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেন, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য জিয়াউর রহমান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মোস্তফা বিশ্বাস, রাজশাহী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ হবিবুর রহমান, গোমস্তাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ুন রেজা, রহনপুর পৌরসভার মেয়র মতিউর রহমান খাঁন,বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মান্নান,নেজাম উদ্দিন আহমেদ,আব্দুল ওহাব,কয়েস আলী, সাবেক মেয়র ও বিএনপি নেতা তারিক আহমদ, মহন্ত মহারাজ শ্রী ক্ষিতিশ চন্দ্র আচারীসহ অনেকে।
রহনপুর রেল বন্দর বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক বলেন, আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী দুইদেশের ২৫ কিলোমিটারের মধ্যে রেল বন্দর হতে হবে। তাঁরই মধ্যে পড়ে রহনপুর রেলস্টেশনটি। অথচ আমনুরায় স্থানান্তর প্রচেষ্টায় রয়েছে একটি মহল। তিনি জানান এটা আমাদের অধিকার। রেল বন্দর বাস্তবায়ন পরিষদ গোমস্তাপুর নাচোল ভোলাহাট উপজেলার জনগন অধিকারের দাবিতে আন্দোলন করে যাচ্ছেন। এদিকে শনিবারের অনশন কর্মসূচি সাবেক দুই সংসদ সদস্য জিয়াউর রহমান ও গোলাম মোস্তাফা বিশ্বাসের পরামর্শে স্থগিত করা হয়েছে। তবে অন্যান্য কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।