যথাযোগ্য মর্যাদায় রাজশাহীতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের এই দিনটিকে জাতীয় দিবস হিসেবে দ্বিতীয়বারের মত উদ্যাপন করা হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষ্যে রাজশাহী জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সোমবার সকাল সাড়ে ১০ টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে ‘৭ মার্চ : স্বাধীনতার জীয়নকাঠি’ শীর্ষক এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও দিবসটি উপলক্ষ্যে জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়।
জেলা প্রশাসনের আয়োজিত সভায় বক্তারা বলেন, বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি বিলাশবহুল গাড়িতে ছিল না, তাঁর রাজনীতি ছিল মাঠে-ঘাটে জনতার সাথে একাত্ম হয়ে। তিনি জনতাকে আগুনের মুখে রেখে পালিয়ে যাননি। তিনি বাংলার মানুষের ন্যায্য দাবি আদায়ে ছিলেন দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। সে কারণে বঙ্গবন্ধুর উপর জনগণের বিশ^াস ছিল অপরিসীম। ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু রেসকোর্স ময়দানে ১০ লক্ষ জনতাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন আমার উপর তোমাদের বিশ^াস আছে, সবাই একযোগে বলেছিল হ্যাঁ আছে।
রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আবদুল জলিলের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার জি এস এম জাফরউল্লাহ্ এনডিসি। সভায় প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের (রাবি) অধ্যাপক মলয় ভৌমিক। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি জয়দেব কুমার ভদ্র, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার সুজায়েত ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু সালেহ মো. আশরাফুল আলম, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল ও ডা. মো. আবদুল মান্নান। সভা শেষে রাজশাহী জেলা শিল্পকলা একাডেমি ও বাংলাদেশ শিশু একাডেমি আয়োজিত বিভিন্ন প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার ও সনদ তুলে দেয়া হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বক্তব্যে বলেন, ৭ মার্চের ভাষণ শুনতে একটি মানুষও অমনোযোগী ছিল না। ৫১ বছর পরেও সবাই মনযোগের সাথে তাঁর ভাষণ শুনেছেন। তাঁর বক্তব্যের প্রতিটি শব্দ ব্যাকরণের মত। তিনি বলেন, যারা বৃদ্ধ হয়ে গেছে, বয়সের ভারে নুয়ে গেছে, তাদের যদি ৭ মার্চের ভাষণ শুনানো হয় তারাও উজ্জীবিত হবে। এ ভাষণ যদি রোগীকে প্রেসক্রিপশন হিসেবে তুলে দেওয়া যায় তবে সেটাও হবে পথ্য। এ সময় তিনি কবির ভাষায় বলেন, ‘তোমরা জানো না ইতিহাস জানে আমার বিনাশ নাই! এই বাংলায় প্রতিটি দিবসে আমি রোজ জন্মাই’।
আলোচনা সভায় বক্তাগণ ঐতিহাসিক ৭ মার্চের গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরেন। বক্তাগণ বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বিশ^নন্দিত অলিখিত ভাষণের মাধ্যমে বাঙালির হৃদয়-স্পন্দনে প্রবেশ করেছিলেন। তিনি জনতার মনের ভাষা বুঝতে পেরেছিলেন। তাই তিনি বলেছিলেন, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।
বক্তারা আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু এ দিন স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, তোমরা ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তোল, যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর ডাকেই বাংলার জনতা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণে উদ্বুদ্ধ বাঙালি জাঁতি পাকিস্তানি শত্রুদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ছিনিয়ে আনে লাল-সবুজের পতাকা।
এর আগে দিবসটি উপলক্ষ্যে এদিন সূর্যোদয়ের সাথে সাথে রাজশাহীর সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভবন এবং সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। এরপর সকাল ১০টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমি অডিটোরিয়ামে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুস্পস্তবক অর্পণ করা হয়। পরে দিবসটি উদযাপনের লক্ষ্যে সোয়া ১০টায় একই স্থানে ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ প্রচার করা হয়।
এদিকে দিবসটি উপলক্ষ্যে জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়। এদের মধ্যে রাজশাহী মাহানগর আওয়ামী লীগ, রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি), রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (রামেবি), রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয় (রুয়েট), রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব) সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে পৃথকভাবে কর্মসূচি পালন করা হয়।