সন্তানের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি চান নিহত অন্তর হাসানের দরিদ্র বাবা-মা। হত্যাকান্ডের প্রায় ৬ মাস পর গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ৩ জনকে আসামি করে ঢাকা বিজ্ঞ মহানগর হাকিম আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার বাদী অন্তর হাসানের পিতা আক্তার হোসেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। মামলা নং-১১৫,ধারা ৩০২/৩৪ দন্ডবিধি। আক্তার হোসেন বকশীগঞ্জ পৌর শহরের চরকাউরিয়া দক্ষিন সীমারপাড় এলাকার বাসিন্দা।
মামলা সূত্রে জানা যায়,বকশীগঞ্জ পৌর শহরের বাসিন্দা আক্তার হোসেনের ছেলে এক সন্তানের জনক অন্তর হাসান ২০২১ সালে ১৭ মে চাকুরীর সন্ধানে বাড়ি থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে যান। পরে মুঠোফোনে অন্তর জানায় গাজীপুরের আবদুল্লাহপুর একটি টিভি ফ্রিজ শো-রুমে চাকুরী নিয়েছে সে। এরপর নিয়মিত স্ত্রী সন্তান ও বা-মায়ের খোজঁ খবর এবং বাড়িতে টাকাও পাঠাইতো অন্তর হাসান। হঠাৎ বেশ কিছুদিন অন্তর পরিবারের সহিত যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। একদিন রাত ১১ টার সময় অন্তরের মা ছেলের ফোনে ফোন দেয়। অপরপ্রান্তে এক নারী অন্তরের ফোন রিসিভ করে সে নিজেকে টিভি ফ্রিজ শো-রুমের মালিকের স্ত্রী শাহনাজ লিপি বলে পরিচয় দেয়। ছেলের ফোন রাতের বেলায় অন্য নারী রিসিভ করায় অন্তরের বাবা মায়ের মনে সন্দেহের সৃষ্টি হয়। তারা অন্তরকে চাকুরী বাদ দিয়ে বাড়ি ফিরে আসার জন্য তাগিদ দেয়। পরিবারের কথায় কর্নপাত না করিয়া অন্তর তার মোবাইল ফোন বেশ কিছুদিন বন্ধ রাখে। পরবর্তীতে অন্তর তার বাবাকে ফোন করে জানায় সে শারিরীক ভাবে অসুস্থ এবং শাহনাজ পারভীন নামে এক নারী তাকে মানসিক ভাবে নির্যাতন করিতেছে। এরপরেই অন্তর হাসানের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এতে পরিবারের সাথে অন্তরের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ফোন বন্ধ থাকলেও শুধু ফেইসবুক ম্যাসেঞ্জারে তার স্ত্রী লাইজু হাসানের সাথে কথা বলেন। ম্যাসেঞ্জারে অডিও কিংবা ভিডিও কলে কখনো কথা বলতো না সে। শুধু ম্যাসেজ করলে ম্যাসেজের রিপ্লাই দিতো সে। স্ত্রী লাইজু বেগমের ধারনা ঘাতকরা অন্তর সেজে তার ম্যাসেঞ্জারে কথা বলেছে। এতে অন্তরের পরিবারে সন্দেহের সৃষ্টি হয়।
অন্তরের বাবা ২০২১ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর বকশীগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়রী করেন। ডায়রী নং ১৩০১। সাধারণ ডায়রীর সূত্র ধরে পুলিশ তদন্তে নামে। তদন্তের পর পুলিশ জানায় অন্তর হাসান মারা গেছে এবং তাকে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। পুলিশ আরো জানায় শাহনাজ লিপি ও তার স্বামীর নামে মামলা করিলে মুল রহস্য উৎঘাটন হইবে। পরিবারের পক্ষ থেকে আজিমপুর কবরস্থানে যোগাযোগ করা হলে কবরস্থানে মৃত দেহ দাফন করার ফিস সংক্রান্ত রশিদে অন্তর হাসানের নাম ঠিকানা পাওয়া যায়। ২০২১ সালের ২ আগস্ট তাকে দাফন করা হয়। দাফনের সময় অন্তরের বর্তমান ঠিকানা ৭৬/২ ই বিবির বাগিচা,উত্তর যাত্রাবাড়ী উল্লেখ করা হয়। যে ঠিকানায় মামলার প্রধান আসামি শাহনাজ লিপি থাকেন।
নিহত অন্তর হাসানের স্ত্রী লাইজু হাসান বলেন,আমার স্বামীকে খুন করে ২০২১ সালের ২ আগস্ট আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়। পরবর্তীতে আমরা যাতে হত্যার ঘটনা জানতে না পারি তাই অন্তর সেজে ফেইসবুক ম্যাসেঞ্জোরে শুধু ম্যাসেজের মাধ্যমে আমার সাথে কথা বলেছে শাহনাজ পারভীন লিপি। একজন মৃত মানুষ কিভাবে ম্যাসেঞ্জারে কথা বলে। হত্যার ঘটনা ধামাচাপা দিতেই শাহনাজ পারভীন ও তার স্বামীসহ আসামিরা অন্তরের ফেইসবুক আইডি থেকে আমাকে ম্যাসেজ দিয়েছে। যাতে করে আমরা মনে করি অন্তর বেচেঁ আছে। আসলে শাহনাজ পারভীন ও তার স্বামী মিলে আমার স্বামীকে খুন করেছে। আমি আমার একমাত্র শিশু সন্তানকে নিয়ে কিভাবো থাকবো। আমি হত্যাকারীদের শাস্তি চাই।
মামলার বাদী আক্তার হোসেন বলেন,আমি যাত্রাবাড়ী এলাকায় গিয়ে জানতে পেরেছি শাহনাজ পারভীন লিপি ও তার স্বামী এলাকায় চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। তারাই আমার ছেলেকে খুন করে লাশ আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করেছে। আজিমপুর কবরস্থানে লাশ দাফনের সময় আমার ছেলের ভোটার আইডির পাশাপাশি স্বাক্ষী হিসেবে ঘাতক শাহনাজ পারভীনের ভোটার আইডি কার্ডও পাওয়া গেছে। তারা যদি আমার ছেলেকে নাই মারতো তাহলে মৃত্যুর বিষয়টি আমাকে কেনো জানালো না। গোপনে তারা কেনো আমার ছেলের লাশ দাফন করবে। তারাই আমার ছেলের হত্যকারী। আমি আইনের মাধ্যমে হত্যাকারীদের দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তি চাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশের আইজিপির হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর আদালতের অ্যাডভোকেট শাহ মোহাম্মদ জিহান বলেন,আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। এটি একটি পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকান্ড এতে কোনও সন্দেহ নেই। আশা করি সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে এই ঘটনার মুল রহস্য উদঘাটন করে অপরাধীদের শাস্তির বিষয়টি নিশ্চিত করবে পুলিশ। আদালতের মাধ্যমে ন্যায় বিচার পাবে নিহত অন্তর হাসানের পরিবার।