রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দিতে বালিয়াকান্দির তালপট্টি থেকে মেগচামী পর্যন্ত সড়কের উন্নয়ন কাজ ধীরগতি হওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। ধুলোবালির কারণে সড়কের পাশের এলাকাগুলো বিবরণ হয়ে গেছে। দ্রুত দূষণ বন্ধ করাসহ উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করার দাবী জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
মঙ্গলবার (৭ মার্চ) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বালিয়াকান্দির তালপট্টি থেকে মেগচামী পর্যন্ত খোয়া, বালি দিয়ে রোলার করা। সড়কটি দিয়ে প্রতিনিয়ত ড্রাম ট্রাক, ইটভাটার গাড়ী, অতিরিক্ত বোঝাই ট্রাক চলাচল করায় খোয়া বের হয়ে ধুলোর সৃষ্টি হয়েছে। ছোট বড় গাড়ী চলাচল করার সময় বাতাসে ধুলার সৃষ্টি হচ্ছে। বিবর্ণ হয়ে গেছে সড়কের পাশে বাড়ীঘরসহ গাছপালা। সড়কের পাশে থাকা ঘরবাড়ীর চালায় ধুলোর আস্তরণ পড়ে আছে। দ্রুত গতিতে গাড়ী চলাচল করার সময় বাতাসে ধুলোবালিতে একাকার হয়ে যাচ্ছে পুরো এলাকা।
উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, আরসিআইপি প্রকল্পের অধীনে বালিয়াকান্দির তালপট্টি থেকে বালিয়াকান্দি ভায়া মধুখালী সড়কের মেগচামী পর্যন্ত ৪.৫৩৫ কিলিমিটার সড়কের উন্নয়ন কাজ শুরু হয় গত ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখে। ৬ কোটি ৫১ লাখ ৬১ হাজার ২শত ৬৮ টাকা চুক্তিমূল্যে কাজটি করছেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মীর হাবিবুল আলম। ৩০ এপ্রিল, ২০২২ তারিখের মধ্যে কাজটি সম্পন্নের মেয়াদ রয়েছে।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বালিয়াকান্দি থেকে মধুখালী যাতায়াতের জন্য সড়কটি প্রধান সড়ক হিসেবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন শত শত যানবাহন চলাচল করে। ২০২০ সালে সড়কটি উন্নয়নের কাজ শুরু হলেও কাজটি শেষ না হওয়ায় চরমদুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এলাকাবাসীর। ৪-৫ মাস পূর্বে সুড়কি আর বালি দিয়ে রোলার করে ফেলে রাখায় এখন বায়ু দূষণের একমাত্র কারণ হয়ে দাড়িয়েছে এই সড়কটি। আবার সামান্য বৃষ্টিতে কাঁদার সৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টিতে কাঁদা আর শুস্ক সময়ে ধুলোবালিতে কষ্ট হচ্ছে তাদের। অতিরিক্ত বালিবাহী ট্রাকগুলো সড়কের বেশি ক্ষতি করছে বলেও তারা জানান।
পাইককান্দি বড় রাস্তা সংলগ্ন আলমগীর, রিয়াজ, আনিসুর রহমানসহ বহু সংখ্যক বাসিন্দা জানান, কাজটির শুরু থেকেই ধীর গতিতে করা হচ্ছে। প্রথমে খনন করে অনেকদিন ফেলে রাখা হয়েছিলো। কয়েক মাস আগে খোয়া, বালি দিয়ে রোলার করা হয়েছে। ছোট বড় গাড়ী যাতায়াতের সময় প্রচন্ড ধুলোবালির সৃষ্টি হচ্ছে। এ সড়কে যানবাহনের চাকার সঙ্গে ওড়া ইট-বালু মিশ্রিত ধুলোয় মানুষের গা ভরে যাচ্ছে, চোখে, মুখে, নাকে ধুলো ঢুকে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছি। দ্রুত রাস্তাটি কার্পেটিং করে আমাদের এই দুষণ থেকে রক্ষা করা হোক।
বালিয়াকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন বলেন, সড়কের ধুলোবালি এক ধরনের ডাষ্ট। এটি সব বয়সের মানুষের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি করে। হাঁপানীসহ বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি হয়। এছাড়াও ফুসফুসের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়। ধুলোবালিতে সব চেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয় শিশু ও বৃদ্ধারা বলেও তিনি জানান।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত (সাইট ম্যানেজার) আল আমিন জানান, আমাদের আরও কয়েকটি কাজ চলছে। গত বছর নভেম্বর মাসের ১ তারিখে রোলার দিয়ে সুড়কি, বালির কাজ শেষ হয়েছে। খুব শীঘ্রই কার্পেটিং এর মাধ্যমে কাজটি সম্পন্ন হবে। ধুলোবালিতে মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে আপনারা কি করেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পানি দিয়ে দ্রুত ধুলোবালি রোধে ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।
বালিয়াকান্দি উপজেলা প্রকৌশলী আলমগীর বাদশা বলেন, সড়কটির কাজের মেয়াদ আগামী মাসে শেষ হবে। এখনো কার্পেটিং বাকী রয়েছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান যাতে করে দ্রুত কাজটি শেষ করে সে বিষয়ে তাগাদা দেয়া হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো: হাসিবুল হাসান বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি বাস্তবায়নকারী দপ্তরগুলোর সাথে কথা বলবো, তারা যেন দ্রুত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে কাজটি সম্পন্ন করেন।
বালিয়াকান্দি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, দীর্ঘদিন যাবত এই সড়কের কারণে মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। কাজের যে ধীরগতি রয়েছে সেটি দু:খজনক। মানুষের ভোগান্তি দূর করতে দ্রুত কাজটি সম্পন্ন করা দরকার। আমি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে দ্রুত কাজটি সম্পন্ন করার চেষ্টা করবো।
রাজবাড়ী নির্বাহী প্রকৌশলী মো: রবিউল ইসলাম বলেন, আমি সম্প্রতি যোগদান করেছি। তবে সড়কের উন্নয়ন কাজে ধীরগতি হলে মানুষের দুর্ভোগ হয়। দ্রুত কাজ সমাপ্তিসহ দুর্ভোগ কমাতে যা করণীয় দ্রুত করা হবে।