দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সর্বনিম্ন পর্যায়
থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত নারীর পদচারণা। কিন্তু স্বাধীনতার
৫০ বছরেও নারী শ্রমিকরা বঞ্চিত হচ্ছেন ন্যায্য মজুরি থেকে। উন্নয়ন
লক্ষ্যমাত্রার সনদে নারী-পুরুষ সমঅধিকারের কথা বলে হলেও বাস্তবে শেরপুরের
চাতাল শ্রমিকদের চিত্র ভিন্ন। পুরুষদের পাশাপাশি সমানতালে কাজ করেও কম
বেতন ও মজুরি বৈষম্যের কারণে এখানকার নারীরা সাফল্যের মুখ দেখতে পাচ্ছেন
না। কেউ তাদের খোঁজ নিতেও আসে না। জীবন জীবিকার তাগিদে মাঠে-ঘাটে কাজ
করতে হয় প্রতিবছর নারী দিবস পালিত হলেও এ বিষয়ে কিছুই জানেন না তারা।
মঙ্গলবার (৮ মার্চ) সকালে সরেজমিনে শেরপুর শহরের ঢাকলহাটি, শীতলপুর,
দিঘারপাড় ও নওহাটা এলাকার বেশ কয়েকটি ধানের চাতালে ঘুরে দেখা যায়,
পুরুষদের সাথে নারী শ্রমিকরাও ধান শুকানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
কথা হয় নারী শ্রমিক মোছা. আবেদা বেগম ও রিতা বেগমের সাথে। তারা জানান,
‘আমরা তো পুরুষের সমানই কাজ করি। এরপরও বেতন তাদের চাইতে কিছুটা কম পাই।
এখন আগের মতো ধানের মিল নাই। সব বন্ধ হয়ে গেছে গা। তাই বাধ্য হইয়াই কাজ
করতে হয়। নাইলে পোলাপান নিয়া খামু কি?’
আরেক নারী শ্রমিক জাহানারা বেগম বলেন, ‘প্রায় বিশ বছর থাইকা এই কাজ করি।
আগে ৩০ টাকা দিন পাইতাম। এখন বাড়তে বাড়তে ২০০ টাকা পাই। কিন্তু জিনিসের
যে দাম, তাতে তো আমার চারজনের সংসার এই টাকা দিয়া চলে না। আবার মিল
সারাবছর চলে না, ৬ মাস চলে, ৬ মাস বন্ধ থাকে। তাই মজুরিটা আরও বাড়াইলে
ভালা হইতো আমগোর জন্য।’
জানা যায়, ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষি ও খাদ্য সমৃদ্ধ অঞ্চল
শেরপুরের ধানের চাতালে কাজ করা হাজিরাভিত্তিক শত শত নারী শ্রমিক।
হাড্ডিসার পরিশ্রমে ধান শুকানো, মাড়াই করাসহ সব ধরনের কাজে পুরুষ
শ্রমিকের সমান কাজ করলেও তাদের চাইতে কম মজুরি পাচ্ছেন নারী শ্রমিকরা।
তবে চাতাল মালিকরা বলছেন, ভিন্ন কথা। তাদের মতে, নানা সঙ্কটে চাতাল
শিল্পই এখন বন্ধের পথে, এরপরও আগের চাইতে মজুরি অনেক বাড়ানো হয়েছে।
মজুরিতে নারী-পুরুষ শ্রমিকের সমতাও ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।
খাদ্য ও কৃষিসমৃদ্ধ অঞ্চল শেরপুর জেলায় একসময় চাতালের সংখ্যা ছিল
হাজারেরও অধিক। ওইসব চাতালে অর্ধ লাখেরও বেশি নারী-পুরুষ শ্রমিক কাজ
করতেন। আর তাদের সিংহভাগই ছিলেন নারী শ্রমিক। কারণ পুরুষের চেয়ে নারী
শ্রমিকের মজুরি দিতে হতো কম। তবে সময়ের পরিক্রমায় এখন চাতালের স্থান দখল
করে নিয়েছে অত্যাধুনিক পারবয়লার অটো রাইস মিল। এতে জেলার সিংহভাগ ধানের
চাতাল মিল বন্ধ হয়ে গেছে। যেগুলো চলছে সেগুলোর অবস্থাও ততোটা ভালো নয়।
এসব চাতালে পুরুষ শ্রমিকের সমান কাজ করেও নারী শ্রমিকরা পুরুষের চেয়ে কম
মজুরি পান। চাতালগুলোতে বর্তমানে পুরুষ শ্রমিককে ২২০ থেকে ২৫০ টাকা দেওয়া
হলেও নারী শ্রমিকদের দেওয়া হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা। কোন প্রাতিষ্ঠানিক
শিক্ষা না থাকায় জীবিকার তাগিদে বাধ্য হয়েই ওইসব নারীরা কম মজুরিতে হলেও
চাতালে কাজ করছেন। তবে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই সময়ে সামান্য টাকায়
দিন চলে না তাদের।