খুলনা জেলার দিঘলিয়ার মানুষ একসময় পাট শিল্পের উপর নির্ভরশীল ছিল। এ অঞ্চলের কাঁচা পাট ও পাট শিল্প বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে বেশীর ভাগ লোক বেকার হয়ে পড়ে।
দিঘলিয়ার মানুষ তাদের বেকারত্বের গ্লানী ঘুচাতে এ অঞ্চলের মানুষ একদিকে যেমন ধান ও রবি ফসল এবং মাছ চাষের দিকে ঝুঁকছে তেমনি ঝুঁকে পড়েছে বিভিন্ন প্রকার খামারী ব্যবসায়। দিঘলিয়ার বিভিন্ন গ্রামে গড়ে উঠেছে ব্যক্তি উদ্যোগে অনেক খামার। কেউ গড়েছে গরুর খামার, কেউবা গড়ে তুলেছেন হাঁস-মুরগীর খামার।
দিঘলিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, ৮৬.৫২ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই দিঘলিয়া উপজেলায় ইউনিয়ন সংখ্যা ৬ টি, গ্রাম ৫৩ টি, মৌজা ৩২ টি, খানার সংখ্যা ৩৫,৭৭৭ টি। এ উপজেলায় মোট জনসংখ্যা ১,৫৩,৯৮৭ জন ( আদম শুমারী ২০১১)। শিক্ষার হার ৫৫.৬৬% এবং জনসংখ্যার ঘনত্ব ১৪৯৮ জন ( প্রতি বর্গ কিলোমিটার)। মোট আবাদি জমির পরিমাণ ৫,৮০৫ হেক্টর।
দিঘলিয়া উপজেলায় কৃত্রিম প্রজনন উপকেন্দ্র ১টি, কৃত্রিম প্রজনন পয়েন্ট ৪ টি ও গবাদী পশুর হাট আছে ২ টি। দিঘলিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ০.৩৩ একর ও দৌলতপুর ভেটেরিনারি হাসপাতাল ০.৫ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত। দিঘলিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাসহ ৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারি কর্মরত আছেন। ভেটেরিনারি সর্জনের পদটি শূণ্য রয়েছে।
দিঘলিয়া উপজেলায় মোট গাভীর খামার আছে ৯৮০ টি, গরু হৃষ্টপুষ্টিকরণ (ষাঁড়) খামার ৫৬৭ টি, ছাগলের খামার ৯২ টি, ভেড়ার খামার ৯টি, মুরগীর খামার (লেয়ার) ৬৫টি, মরগীর খামার (ব্রয়লার) ১২০টি, মুরগীর খামার (সোনালী) ১০২ টি, হাঁসের খামার ৩৭ টি, কোয়েল পাখির খামার ২২ টি, টার্কি মুরগীর খামার ৫টি, কবুতরের খামার ৭০ টি ও তিত মুরগীর খামার ২টি।
এ সকল খামারে মোট গরুর সংখ্যা ২০,০০৯টি, মহিয ৫টি, ছাগল ৯,৭৫০টি, ভেড়া ১২২টি, গাড়ল ৫৫টি, ঘোড়া ৫টি ও অন্যান্য পশু ৯০ টি। এ ছাড়া মুরগী আছে ১,১৮,৩৯৬ টি (দেশী ২০২০২টি ও সংকর ৯৮,১৯৬টি), হাঁস ৫৮৭১৫টি, কোয়েল পাখি ৪১,৮৬৯টি, টার্কি মুরগী ১১১টি, কবুতর ৪৪,৬২২টি, তিতির ১২টি ও পোষা পাখি ৫৪৫টি।
দিঘলিয়ার এসব খামার থেকে বার্ষিক মাংসের উৎপাদন ১৪,০০০ মে.টন, দুধ ২১,০০০ মে.টন এবং ডিম উৎপাদন হয় ৪ কোটি ৮০ লাখ মে.টন।
এ উপজেলার এ সকল খামারীদের উৎপাদিত মাস, দুধ ও ডিম এ জনপদের মানুষের চাহিদা পূরণ করে অন্যান্য জায়গায় বিক্রি করে থাকে। আর এসব উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করার জন্য এ উপজেলায় ডিম বিক্রেতা রয়েছেন ৯জন, পশু ও হাঁস-মুরগীর খাদ্য বিক্রেতা ১৪ জন, মাংস বিক্রেতা ৪৯ জন, দুগ্ধ থেকে উৎপাদিত পণ্য বিক্রি ২৭জন, প্রাথমিক পল্লী সেবাদানকারী ২৬জন, স্থায়ী ঘাস চাষির সংখ্যা ৩৯ জন, স্থায়ী ঘাস বিক্রেতার সংখ্যা ২৫ জন। ঘাস চাষের জমির পরিমাণ ১,৯৬৮ একর। ভেটেরিনারি ওষুধ বিক্রেতা ৯ জন।
এ সকল খামারীদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, দিঘলিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোঃ ফজলুর রহমান খুবই ভালো একজন অফিসার। তাঁর উৎসাহ ও সহযোগিতায় দিন দিন দিঘলিয়ায় খামার ব্যবসা সম্প্রসারিত হচ্ছে। দিঘলিয়ার একজন খামার ব্যবসায়ী টিক্কা জানান, দিঘলিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাসহ সকল কর্মকর্তা আমাদের ঔষুধ ও সেবা দিয়ে থাকেন। দিঘলিয়ার আর একজন খামারী রুবায়েত এ প্রতিবেদককে জানান, দিঘলিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোঃ ফজলুর রহমান একজন সুন্দর মনের মানুষ। তাঁর সহযোগিতা ও সেবায় আমরা মুগ্ধ। তিনি মাঝে মধ্যে বিভিন্ন খামারীর বাড়িতে গিয়ে খামারের খোঁজ খবর নেন। সমস্যা থাকলে পরামর্শ দেন। তিনি সরকারি ঔষুধের পাশাপাশি ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা যে সকল ওষুধ দেয়, সগুলো খামারীদের দেন। সেলিম নামে জনৈক খামারী বলেন, দিঘলিয়া উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা যদি দিঘলিয়ায় থাকেন, তবে এ জনপদে তাঁর উৎসাহ ও সহযোগিতায় আরও নতুন নতুন খামার গড়ে উঠবে।
দিঘলিয়া উপজেলার তরুন সমাজ সেবক, সুগন্ধী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোল্লা মাকসুদুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে জানান, দিঘলিয়ায় হাঁস-মুরগী ও গবাদী পশুর খামার গড়ে ওঠার কারণে দেশের অন্যান্য জায়গার চেয়ে এখানে ডিম, দুধ, মাংস ও দুগ্ধজাত সামগ্রীর দাম কম। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আরও খামার গড়ে ওঠা সম্ভব।
দিঘলিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোঃ ফজলুর রহমান এ প্রতিবেদককে জানান, তিনি তাঁর উপর অর্পিত দায়িত্ব তিনি যথাযথভাবে পালন করার চেষ্টা করেণ। তিনি বলেন, আমার দ্বারা কোনো লোক যদি উপকার পায় সে কাজ থেকে আমি বিরত হবো কেন? আমি আমার সাধ্যমত মানুষের খেদমত দিতে চেষ্টা করি।