জন্মের পর থেকেই দু-হাত বাঁধা জীবন কাটানো সেই বৃষ্টির চিকিৎসায় এগিয়ে এসেছেন জেলা ও দুর্গাপুর উপজেলা প্রশাসন। মঙ্গলবার দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ব্যবহৃত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোস্টে বৃষ্টিকে সহায়তা করার আশ্বাস প্রদান করেন তিনি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিখেন, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের সাথে কথা হয়েছে। বৃষ্টিকে প্রাথমিক ভাবে ময়মনসিংহে নিয়ে যাওয়া হবে। আগামী শনিবার। সেখানে প্রাথমিকভাবে দেখার পর ঢাকার নিউরোসাইন্সেএ পাঠানো হবে। সে অনুরোধ ব্যবস্থা করেছে দুর্গাপুর উপজেলা প্রশাসন। উল্লেখ্য এর আগে গত বছরের জুলাইয়ে বৃষ্টিকে দেখতে গিয়েছিলাম। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হযয়েছিল। বৃষ্টির বাবার অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে দ্রুত সময়ে তাকে সুবর্ণ নাগরীক কার্ডের আওতায় আনা হয়েছে।
এদিকে ডেইলি বাংলাদেশকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ রাজীব-উল-আহসান জানান, আমরা শিশু বৃষ্টির জন্য ইতোমধ্যে সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। আশা করি অল্প কিছুদিনের মাঝেই তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হবে। এবং পরবর্তীতে ঢাকার নিউরোসাইন্সেএ পাঠানো হবে। তার সম্পন্ন চিকিৎসা বিনামূল্যে করা হবে। এইজন্য উপজেলা প্রশাসন তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন। তাদের যাতায়াত এবং থাকার জন্য উপজেলা প্রশাসন ইতোমধ্যে চিন্তাভাবনা গ্রহণ করছে,তাছাড়া ৮ মার্চ মঙ্গলবার জেলা প্রশাসনের পক্ষথেকে ৫০ হাজার টাকা সহায়তা দিয়েছেন। তিনি আরো জানান, বৃষ্টি পরিবারকে ঢাকা প্রেরণ করার জন্য আমরা ইতোমধ্যে স্বেচ্ছাসেবকদের সাথে কথা বলছি। গ্রামের মানুষ সহজে ঢাকা বা ময়মনসিংহের কোন কিছু চিনবেন না তাই স্বেচ্ছাসেবকদের সহায়তায় তাদের পাঠানোর জন্য চিন্তা ভাবনা বহন করা হয়েছে। আশাকরি সুচিকিৎসা পেলে আবারো বৃষ্টি একজন সুস্থ মানুষ হয়ে সবার কাছে ফিরে আসতে পারবে।
গেল দুই দিনে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বিভিন্ন ব্যক্তি প্রতিবেদক সহ বৃষ্টির পরিবারকে সহায়তা আশ্বাস দিযয়েছেন। শুধু তাই নয় দেশের বাহির থেকে বৃষ্টির পরিবারকে ফোন দিয়ে বৃষ্টির খোঁজখবর নিয়েছেন অনেকেই।
নেত্রকোনার দুর্গাপুরের পৌরশহরের দশাল গ্রামের দরিদ্র পরিবারের সন্তান বৃষ্টি। পিতা শাজাহান মিয়া সাধারণ একজন কয়লা শ্রমিক এবং মা আয়েশা খাতুন অন্যের বাড়িতে কাজ করে কোন রকমে চলে তাদের ছোট্ট সংসার। ২০১৪ সালের ০৬ জুন জন্মের এক বছর যেতে না যেতেই শিশুর বৃষ্টির আচরণ পরিবর্তন লক্ষ্য করেন পিতা মাতা। সময়ের সাথে সাথে বাড়ে অস্বাভাবিক আচরণের তীব্রতা। সুস্থতার জন্য পরিবারের সদস্যরা ডাক্তার কবিরাজ সহ বিভিন্ন জায়গায় ছোটাছুটি করেও কোন সুফল না পাওয়ায় বাধ্য হয়েই আদরের সন্তানকে বেঁধে রাখার পথ বেছে নিয়েছেন তারা।
তাছাড়া বাঁধন খুলে রাখলেই নিজের গায়ে নিজে আঘাত করে ক্ষতবিক্ষত করেছে তার পুরো শরীর। শিশুটির সারা নিজের নখের আঘাত সহ কামড়ের চিহ্ন রয়েছে। আগে ক্ষণিকের জন্য বেঁধে রাখলেও এখন বাধ্য হয়েই দিনরাত সবসময়ই হাতে বাঁধন রাখতে হয় বৃষ্টির। রাতে ঘুমানোর সময় হাতে রশিদ আটকে রাখা হয় বিছানার সাথে। অনেক সময় মেয়েকে রাতে পাহারা দিয়ে নির্ঘুম রাত কাটান মা-বাবা। দীর্ঘদিন ধরেই দুহাত বেঁধে রাখার কারণে হাতের চামড়ার উপর ছাপ পড়েছে দীর্ঘস্থায়ী।
বৃষ্টির বাবা শাজাহান মিয়া জানান, ফোন করে আমার মেয়ের খোঁজ খবর নিয়েছিলেন এবং সহায়তার আশ্বাস দিচ্ছেন। আমি সবাইকেই কৃতজ্ঞ জানাই। আমি চাই আমার মেয়ে তুই যেন আবার সুস্থ হয়ে উঠুক। ছেলে মেয়েদের মতই খেলাধুলা করবে এবং বিদ্যালয় যাবে। একটু সুস্থ করে দিলে আমি অনেক কৃতজ্ঞ থাকব।
বৃষ্টির মা আয়েশা খাতুন জানান, আমরা আমাদের মেয়েকে অনেক কষ্টকরে লালন পালন করেছি। আদরের এই সন্তানকে লালন-পালন করতে গিয়ে আমাদের অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে। তারপরেও সন্তানের ভালোর জন্য তাকে বেঁধে রাখতে ছড়া আর কোন পথ পাইনি। এখন আমার মেয়েকে নিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে আমি কৃতজ্ঞতা জানাই সাংবাদিক ভাইদের যারা বিষয়টি তুলে ধরেছেন। তাছড়া অনেকেই ফোন করে খোঁজখবর নিয়েছেন এবং চিকিৎসার জন্য সহায়তা করবেন বলে জানাচ্ছেন।