নকলা উপজেলার বানেশ্বরদী গ্রামের মো. ফজলুল
হকের ছেলে তরুণ কৃষক মো. আবদুর রহমান রাসেল পতিত জমিতে চাষ করা কলা
বাগানের গাছের ফাঁকে গম চাষ করে বাড়তি আয়ের পথ পেয়েছেন। এই বাগানের কলা
গাছের ফাঁকে গত কয়েক বছর ধরে বছরে ৪/৫বার বিভিন্ন শাক সবজি চাষ করে
এলাকাবাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। এবছর কলা বাগানে শাক-সবজি চাষ ছেড়ে গমের
আবাদ করেছেন। ব্যতিক্রমি এ আবাদে যে পরিমাণ লাভ পাবেন তা অন্য কোনো আবাদে
সম্ভব নয় বলে রাসেল জানিয়েছেন।
তরুণ এ কৃষক বর্গা নেওয়া ৬০ শতাংশ জমিতে এবছর কয়েক মাস আগে বিভিন্ন জাতের
কলার ৮৪০টি চারা লাগিয়েছেন। কলা গাছের ফাঁকে যথেষ্ট ফাঁকা থাকায়, এত দিন
এ ফাঁকা জায়গায় বিভিন্ন শাক, সবজি, মসলা জাতীয় ফসল চাষ করেছেন। বিভিন্ন
সবজিসহ বিভিন্ন মসলা জাতীয় ফসল চাষ করার পাশাপাশি ওই জমির আইলে সবরি কলার
গাছ লাগিয়েছিলেন। কিন্তু এবছর তার ওই ৬০ শতক জমিতে কলা ও কলা গাছের ফাঁকে
গমের মাঠে পরিণত করেছেন। গমের শীষের ধরন দেখে বাম্পার ফলনের আশা করছেন
তিনি।
কলা গাছের ফাঁকে বপন করা গম বিক্রির টাকাতে তার ছেলে-মেয়ের সারা বছরের
পড়া-লেখার খরচ হয়ে যাবে বলে রাসেল আশা করছেন। তিনি বলেন, প্রথম দিকে
এলাকার অনেকে তাকে নিরুৎসাহী করলেও, পরে তার সফলতা দেখে এলাকার অনেকে এমন
মিশ্র চাষে আগ্রহী হয়েছেন। কলা ও সাথী ফসল গমের বাম্পার ফলন দেখে এলাকার
অনেকেই এমন মিশ্র আবাদের দিকে ঝুঁকছেন। বিশেষ করে কলা বাগানে স্বল্প
কালীন শাক সবজি, মসলা জাতীয় ফসল ও গম চাষে কৃষকের আগ্রহ যেন আকাশচুম্বী।
রাসেল বলেন, উপজেলার বানেশ্বরদী ইউনিয়নের উত্তর বানেশ্বরদী গ্রামে কলা
বাগানে তার বর্গা নেওয়া ৬০ শতাংশ জমিতে বিভিন্ন জাতের কলার ৮৪০টি চারা
লাগিয়েছেন, আর কলা গাছের ফাঁকা জায়গায় ২০ কেজি গমের বীজ বপন করেছিলেন।
কলা গাছ রোপনের সময় ব্যবহার করা সারেই চলছে গমের আবাদ। তবে গমের আবাদে
বাড়তি কিছু সার হিসেবে ডিএবি, পটাশ ও ইউরিয়া ব্যবহার করতে হয়েছে। গমের
জন্য জমি তৈরি, সেচ ও সার বাবদ মোট ৩ হাজার টাকা বাড়তি খরচ হয়েছে।
কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মূখিন না হলে এ ৬০ শতক জমি থেকে তিনি ২০ মন
থেকে ২২ মন গম হবে বলে আশা করছেন। গমের ভালো দাম পেলে তিনি ধানের চেয়েও
লাভ পাবেন, এমনটাই জানিয়েছেন এলাকাবসী।
রাসেল জানান, বর্ষজীবী কলার আবাদে জমিতে চাষ দেওয়া বাবদ ১ হাজার ৫০০
টাকা, সার বাবদ ১ হাজার ৫০০ টাকা, প্রতিটি চারা ক্রয় বাবদ ২০/২২ টাকা
হারে মোট ৯ হাজার ৬০০ টাকা, কীটনাশক বাবদ ২ হাজার টাকা, প্রতিটি শ্রমিকের
মজুরি বাবদ ৬০০ টাকা হারে ২০ জনের মজুরি মোট ১২ হাজার টাকাসহ সেচ দেওয়া
বাবদ বেশ কছু টাকা খরচ হয়েছে। এতে করে ৮৪০টি কলার চারার ফলন হওয়া পর্যন্ত
প্রতিটির পিছনে ১৫০ টাকা করে খরচ হবে। আর প্রতি গাছ থেকে কলা বিক্রি হবে
অন্তত ৩০০ টাকা থেকে ৪৫০ টাকার।
রাসেল তার আবাদে কোনো ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করেন না। কৃষি
বিভাগের পরামর্শে ফেরোমন ফাঁদ ও জৈব সার ব্যবহার এবং প্রাকৃতিক উপায়ে
পোকা ও রোগ বালাই দমন করেন। ফলে তার উৎপাদিত শাক সবজি, শস্য ও ফল
সম্পূর্ণ নিরাপদ। কলাবাগানের গাছের ফাঁকে শাক সবজি, মসলা জাতীয় ফসল চাষে
সাফল্য দেখে এলাকার অনেক কৃষক তার কাছে পরামর্শ নিতে আসেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার কৃষিবিদ শেখ ফজলুল হক মনি ও কৃষিবিদ মাহামুদুল
হাসান মুসা জানান, বানেশ্বরদীর রাসেলসহ অন্যান্য কৃষককে এই পদ্ধতিতে
চাষাবাদ করতে নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কলা ও শাক সবজি চাষিদের যেকোন
সমস্যায় দ্রুত সমাধান দিতে কৃষি বিভাগ সদা তৎপর রয়েছে বলেও তারা জানান।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আবদুল ওয়াদুদ জানান, দেশের মোট জমির
সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে ও একই জমিতে বছরে একাধিকবার বিভিন্ন আবাদের
মাধ্যমে ব্যবহার করতে কৃষকদের নিয়ে মাঠ দিবস করাসহ তাদের প্রয়োজনীয়
প্রশিক্ষন ও কৃষি প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। একই জমিতে রোপন করা দীর্ঘ মেয়াদী
ফল গাছের ফাঁকে এক সাথে ও একই খরচে শাক-সবজি ও অন্যান্য স্বল্প কালীন
শস্য আবাদ করে যেকেউ বাড়তি আয় করে স্বাবলম্বী হতে পারেন বলে মনে করছেন এই
কৃষি কর্মকর্তা।
চলতি মৌসুমে নকলা উপজেলায় ২২০ হেক্টর জমিতে গমের আবাদ হয়েছে।