ধানখেতে বাংলাদেশের মানচিত্র ও জাতীয় পতাকা
ফুটিয়ে তুলেছেন শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার ধানশাইল বালিকা উচ্চ
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নূরে আলম সিদ্দিকী। নিজের ফসলের মাঠে সবুজ ও
বেগুনি ধানের চারা দিয়ে তৈরি করেছেন এসব। যা রীতিমতো আলোড়ন তৈরি করেছে
জেলাজুড়ে।
পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ এই বেগুনি ধানের চাষ দেখতে ভিড় করছে মানুষ। প্রতিদিনই
দূর-দুরান্ত থেকে ধানের সৌন্দর্য দেখতে আসছেন তারা।
এ বিষয়ে নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, ‘আমি গত বছর ইউটিউবের মাধ্যমে এই বেগুনি
রঙের ‘পার্পল লিফ রাইস’ নামের ধান চাষের একটি ভিডিয়ো দেখি। এরপর আমার
মাঝে আগ্রহ জাগে এই ধান চাষ করার। পরে আগ্রহ থেকেই গত বছর আমি অল্প জমিতে
বেগুনি ধানের বীজ সংগ্রহ করে তা রোপন করি। আলহামদুল্লিাহ ধানও খুব ভালো
হয়। তাই এবারও মোট দশ কাঠা জায়গায় ধান রোপন করি। এর মাঝে বেগুনি ধানের
বীজও রোপণ করি।’
তিনি আরও বলেন, ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষে আমি জাতীয় পতাকার
আকৃতিতে দুই জাতের ধান রোপণ করেছি। পাশাপাশি আরেকটি খেতে বেগুনি ধান দিয়ে
বাংলাদেশের মানচিত্রের মতো করি। যা দেখার জন্য মানুষ প্রতিদিনই আসছেন
আমার খেতে, দেখছেন ধানখেত, তুলছেন ছবি। কেউ বা আবার বীজ নেওয়ার জন্য
আগ্রহ প্রকাশ করছেন। আমার ইচ্ছে আছে, আগামীতে বেগুনি ধানের আবাদ
বাড়ানোর।’
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দিগন্ত মাঠজুড়ে সবুজ আর সবুজ। একটু খেয়াল করলেই
দেখা যায় সবুজের মাঠে মাঝখানে বেগুনি রঙ। সবুজ ধানের বেষ্টনীর কাছে গেলে
মনে হয় বেগুনি রঙের জায়গাটুকু কোনো আগাছা বা বালাই আক্রান্ত ধান। কিন্তু
না, এটি এমন একটি ধানের জাত, যার পাতা ও কা-ের রঙ বেগুনি। যেভাবে তৈরি
করেছে দেখতে অনেকটাই জাতীয় পতাকার আদলে। আবার পাশের আরেকটি খেতে দেখা
যায়, সবুজ ধান ও বেগুনি ধানের মিশ্রণে বাংলাদেশের মানচিত্র।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, দেশে প্রথম বেগুনি রঙের ধানের আবাদ শুরু হয়
গাইবান্ধায়। সৌন্দর্য ও পুষ্টিগুণে ভরপুর থাকায় দ্রুত সময়ের মধ্যে
বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় এ ধানের আবাদ ছড়িয়ে পড়ে। এ ধানের নাম মূলত পার্পল
লিফ রাইস। এই ধানগাছের পাতা ও কা-ের রঙ বেগুনি হয়। এর চালের রঙও হয়
বেগুনি। তাই কৃষকদের কাছে এখন পর্যন্ত এ ধানের পরিচিতি বেগুনি রঙের ধান।
এ ধান বিদেশি জাত নয়, দেশীয় শুক্রাণু প্রাণরস (জার্মপ্লাজম)।
নলকুড়া এলাকা থেকে খেত দেখতে এসে আবদুর রহমান বলেন, ‘খুবই সুন্দর হয়েছে
খেতটি, দেখতে খুব ভালো লাগছে। খেতের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুললাম। এর আগেও
নালিতাবাড়ী উপজেলা গিয়ে এমন খেত দেখেছি।’
ঝিনাইগাতীর ভারুয়া এলাকা থেকে পরিবার নিয়ে বেগুনি ধানের খেত দেখতে এসেছেন
রফিক মিয়া। এ সময় কথা হয় তার সাথে। তিনি বলেন, ‘আমাদের জাতীয় পতাকার মতো
দেখতে ধানখেতটি, যদিও জাতীয় পতাকার মতো কালার হয়নি, তারপরেও অনেকটাই
জাতীয় পতাকার মতো দেখতে। খেতের এক পাশে পতাকা, আরেক খেতে বাংলাদেশের
মানচিত্র, খুবই ভালো লাগছে।’ পাশেই থাকা লাভলী বেগম বলেন, ‘কত সুন্দর
ধানখেত, চারপাশে সবুজ, মাঝখানে বেগুনি কালার। দেখতে খুব ভালো লেগেছে।
আমরা ছবি তুললাম, খেতের চারপাশ ঘুরে বেড়ালাম, ভালো লাগলো অনেক।’
ঝিনাইগাতী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, ধানখেতের
মাঝখানে এমন বেগুনি ধান লাগানোর জন্য খেতের সৌন্দর্য বৃদ্ধি হয়েছে। যা
দেখতে উৎসুক মানুষ আসেন খেত দেখতে। দিন দিন বেগুনি ধান চাষাবাদ বৃদ্ধি
হচ্ছে। এর আগেও ঝিনাইগাতী উপজেলায় বেগুনি ধানের চাষ হয়েছে। তবে এবার
গতবারের তুলনায় একটু বেশি। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা
হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. মুহিত কুমার দে বলেন,
ধানখেতের মধ্যে বেগুনি ধান দিয়ে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার আদলে খেত
করেছেন, যা সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে। পাশাপাশি এই বেগুনি ধানের পুষ্টিগুণ
বেশি। তাই দিন দিন বেগুনি ধানের চাষাবাদ বাড়ছে। যে সকল চাষিরা বেগুনি
ধানের আবাদ করেছেন তাদের সাথে আমরা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। যদি প্রাকৃতিক
কোনো সমস্যা না হয় তাহলে এবার ধানের বাম্পার ফলন হবে আশা করি।