রাজশাহী মহানগরীর বন্ধ হওয়া ১২৬ জন মুক্তিযোদ্ধার ভাতা চালুর দাবিতে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হককে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। রাজশাহী মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. আবদুল মান্নানের নেতৃত্বে জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবদুল জলিলের মাধ্যমে বুধবার (১৬ মার্চ) এই স্মারকলিপি দেওয়া হয়। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাদুল হক মাস্টারও উপস্থিত ছিলেন। ডিসির হাতে স্মারকলিপি দেওয়ার সময় ভাতা বঞ্চিতদের মধ্যে আনোয়ার ইকবাল বাদল, জহির উদ্দিন জসি, আইনজীবী এন্তাজুল হক বাবু, আইনজীবী অঙ্কুর সেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, রাজশাহী মহানগরের ৫৫২ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার মধ্যে ১৬০ জনের গেজেটভুক্তির জন্য জাতীয় মুক্তিযুদ্ধ কাউন্সিলের (জামুকা) সুপারিশ ছিল না। তাই গতবছর জামুকা তাঁদের নতুন করে যাচাই-বাছাই করার উদ্যোগ নেয়। জামুকার নির্দেশনায় জেলা প্রশাসন একটি কমিটি করে এই ১৬০ জনকে নতুনভাবে যাচাই-বাছাই করে। সে সময় ওই কমিটি ১২৬ জনের গেজেট নিয়মিতকরণের সুপারিশ করেনি। যে কারণে গত মাসের ভাতা পাননি এই ১২৬ জন।
ভাতা বঞ্চিতদের পক্ষে দেওয়া স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, গত বছরের ৬ থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য সচিব অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (সার্বিক) অফিস কক্ষে প্রথমে বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং পরে একজন করে মোট ৩ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। অথচ নির্দেশিকায় বলা আছে, প্রকাশ্য মুক্তিযোদ্ধাদের উপস্থিতিতে ঘোষণা দিয়ে যাচাই-বাছাই করতে হবে। যাচাই-বাছাইয়ের সময় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে লাল মুক্তিবার্তা, ভারতীয় তালিকা এবং অন্য প্রমাণকদের সাক্ষী প্রদানে কমিটি সাক্ষ্য প্রদানে বিরত থাকতে বলেছে। এছাড়াও অনেককে ভয়ভীতি প্রদান করা হয়েছে। এর ফলে তাঁরা ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
এতে আরও বলা হয়, চার সদস্যের কমিটিতে সভাপতিসহ তিনজন ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তাঁরা অনেকের ক্ষেত্রে বিরাগবশত রায় প্রদান করেছেন। কমিটির একজন সদস্য কোন সময়ই মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষের ব্যক্তি নন। ছাত্রজীবনে তিনি এন.এস.এফ করতেন এবং সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচন ও সিটি নির্বাচনে তিনি বিএনপির পক্ষ নিয়েছিলেন। তিনি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্ত্যক্তকারী হিসেবে পরিচিত বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, হাইকোর্ট বিভাগে রীটের কারণে রাজশাহী মহানগর এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ের ওপর স্থগিতাদেশ থাকা স্বত্ত্বেও এই কার্যক্রম চালানো হয়েছে, যা আদালত অবমাননার সামিল। নিয়ম বহির্ভূতভাবে যাচাই-বাছাই করে ১২৬ জনের ভাতা হঠাৎ করে কোন নোটিশ বা পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই বন্ধ করা হয়েছে। ওই যাচাই-বাছাই কমিটির প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে সবাই আপিল করলেও তার নিষ্পত্তি করেনি জামুকা। আপিল নিষ্পত্তির আগেই ভাতা বন্ধ করা হয়েছে। এখন তাদের ভিক্ষা করা ছাড়া কোন বিকল্প পথ নেই। তাই তাদের ভাতা চালু রাখার জন্য মন্ত্রীর কাছে আবেদন জানানো হয়েছে।
এদিকে এই স্মারকলিপির অনুলিপি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও সদর আসনের সাংসদ ফজলে হোসেন বাদশা, বিভাগীয় কমিশনার জিএসএম জাফরউল্লাহ এবং রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (এরএমপি) কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিককে দেওয়া হয়েছে। আর স্মারকলিপিটি যথাযথ প্রক্রিয়ায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল।