মেঘের রাজ্য সাজেক যেতে হলে প্রথমে যেতে হবে দীঘিনালায়। এরপর জিপ অথবা চান্দের গাড়ি দিয়ে যেতে হবে সাজেকে সামরিক বাহিনীর এসকোর্টে। দীঘিনালা থেকে সেনাবাহিনীর এসকোর্ট শুরু হয় সকাল ১০ টায়। তাই আপনাকে খাগড়াছড়ি থেকে দীঘিনালায় সকাল ১০টার আগেই পৌঁছতে হবে। পাহাড়ে যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে তাই নিরাপত্তার স্বার্থে সেনাবাহিনী এই পদক্ষেপ নিয়েছে। দীঘিনালা পৌঁছে হাতে সময় থাকলে ঘুরে দেখে আসতে পারবেন হাজাছড়া ঝর্ণা।
দিঘীনালা থেকে বাগাইহাট, মাচালং বাজার, তারপর রুইলুই পাড়া হয়ে পৌঁছে যাবেন সাজেকে। খাগড়াছড়ি শহর থেকে সাজেক যেতে সময় লাগবে দুই থেকে তিন ঘণ্টা। আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তা ধরে পথ চলা সাজেক ট্যুরের অন্যতম আকর্ষণ। পুরো রাস্তা জুড়ে চারপাশের দৃশ্য আপনাকে এক অপূর্ব শান্তি দেবে।
সাজেক পৌঁছতে দুপুর হয়ে যাবে। পৌঁছে ঠিক করে নিতে হবে রাত কাটাবার জন্য কটেজ। সাজেকের দিঘী ছড়া,শুকনা ছড়া,বাঘাইহাট, খা¯্রাংহিল,হামারীপাড়াতে বিভিন্ন দাম ও মানের কটেজ রয়েছে। তবে ভালো হয় আগে থেকে কটেজ বুকিং করে নিলে।
খাবার জন্য রয়েছে আদিবাসী ও বাঙ্গালি দুই ধরনের হোটেল। ভাত, মুরগী, ডিম, ডাল, ভর্তা সহ অন্যান্য ননভেজ খাবারও পাওয়া যাবে এখানে। চাইলে আদিবাসী হোটেল থেকে ব্যাম্বু চিকেনের স্বাদও নিয়ে আসতে পারেন। তবে যেখানেই খান না কেন আপনাকে আগে থেকে অবশ্যই তা অর্ডার করে রাখতে হবে। সাজেকে সব কিছুর দাম কিন্তু বেশি।
আরেকটি কথা সাজেকে রবি এবং টেলিটক ছাড়া কোনো অপারেটরের নেটওয়ার্ক নেই। তাই এই দুটি অপারেটরের যেকোনো একটি সাথে রাখবেন।
এখন আসি ঘোরাঘুরির পর্বে। বিকালে রোদ পড়ে গেলে ঘুরে আসতে পারেন হ্যালিপ্যাড থেকে। সেখান থেকে উপভোগ করতে পারবেন সূর্যাস্ত। দেখবেন নীল আকাশ থেকে মেঘের ভেলা গুলো অন্ধকার আচ্ছন্ন হয়ে হারিয়ে যাচ্ছে আর মিটমিট করে জ¦লে উঠছে তারা। সে কি অপূর্ব দৃশ্য। চাঁদের আলো, তারা ভরা আকাশ, সেই থাকে শরীর ছুঁয়ে যাওয়া মেঘের শীতল অনুভব সব মিলে তৈরি হবে স্বর্গীয় সুখ।
রাতে চাইলে বারবিকিউ পার্টি করতে পারেন। রাত পার করে ভোরে সূর্যোদয় দেখতে চাইলে আবার চলে যাবেন হ্যালিপ্যাডে। উপভোগ করতে পারবেন সাদা মেঘের উপর সোনালি আভা পড়ার মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। তারপর নাস্তা শেষ করে চলে যেতে পারেন কংলাক পাহাড়ে।
কংলাক পাহাড় ঘোরা শেষ করে চলে যেতে পারেন কংলাক ঝর্ণায়। পাহাড়ি উঁচুনিচু রাস্তা পার করে যেতে হবে কংলাক ঝর্ণায়। প্রায় এক ঘণ্টার পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছে যাবেন কাক্সিক্ষত ঝর্ণায়। সেখানে ঝর্ণার শীতল জলে স্নানও করে নিতে পারেন। সাজেকে সাধারণত একরাতের বেশি থাকার প্ল্যান নিয়ে তেমন কেউ যায় না। তবে চাইলে থাকতে পারেন যতদিন খুশি ততদিন।
খাগড়াছড়ি ফিরতে ফিরতে দুপুর হয়ে যাবে। খাগড়াছড়ি শহরে এসে আলুটিলা গুহায় যেতে ভুলবেন না। এই গুহায় এক রোমাঞ্চকর অভিযান হবে আপনার। গুহার ভেতর ঘুটঘুটে অন্ধকার, তাই সাথে টর্চ লাইট নিতে ভুলবেন না। অবশ্য স্মার্ট ফোন সাথে থাকলে আলাদা টর্চেরও প্রয়োজন নেই।
আলুটিলা যাওয়ার পথে কিছুক্ষণের জন্য ঘুরে আসতে পারেন টিলার উপর থেকে। এখান থেকে পুরো খাগড়াছড়ি শহর দেখতে পাওয়া যায়। খাগড়াছড়ি শহরে একটি ছোট্ট ঝুলন্ত ব্রিজ আছে। চাইলে দেখে আসতে পারেন সেটিও।
হাতে সময় থাকলে রিসং ঝর্ণাও ঘুরে আসবেন। রিসং গেট থেকে এক থেকে দেড় ঘণ্টা পথ হেঁটে অতিক্রম করলেই দেখা মিলবে রিসং ঝর্ণার। তবে এর একটি বিশেষ দিক হল ঝর্ণার পথে ২৩৫ ধাপের সিঁড়ি দিয়ে নামতে হয়। এই ঝর্ণার উচ্চতা প্রায় ১০০ ফুট। চাইলে এখনেও গোসল করে নিতে পারেন। ঘোরাঘুরি শেষে ফিরে আসতে হবে খাগড়াছড়ি আর সেখান থেকেই পেয়ে যাবেন ঢাকা ফেরার বাস।প্রকৃতির এই সৌন্দ্যর্য যারা উপভোগ করতে চাইছেন, তারা ঘুরে আসতে পারেন সাজেক। এক যুগ আগেও নিরাপত্তার অভাবে সাজেকে সেভাবে যেতেন না পর্যটকরা। এখন সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় পর্যটকদের সেখানে যাওয়া অনেকটাই সহজ হয়েছে এবং পোর্ট্রেট এর সহযোগিতায় যেতে পেরেছি সাজেক এ। ফেরার পথে আকাশের মেঘগুলো যেন পাহাড়ের এক একটা কোলে উড়ে নিসর্গ সাজেক হাতছানি দিয়ে বলছে দেখা হবে আবার।
লেখক - চিত্র সাংবাদিক ও সদস্য - চট্রগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন।