রাজশাহীর বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের (রাসিক) মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেছেন, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীনতম দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ কখনো চোরাপথ বা অন্ধকার পথ দিয়ে ক্ষমতায় আসেনি। আওয়ামী লীগ জনগণের দল। জনগণকে সাথে নিয়ে রাজনীতি করে যাচ্ছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে তৃণমূলে আওয়ামী লীগকে আরো শক্তিশালী করতে জেলা-উপজেলায় সম্মেলন করা হচ্ছে। সম্মেলনের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচিত করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগে বিশৃঙ্খলাকারীদের কোন জায়গা নেই।’ সোমবার (২১ মার্চ) বেলা ১১টায় বাঘা উপজেলার শাহদৌলা সরকারি কলেজ মাঠে আয়োজিত সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, গত ১৩ বছরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ব্যাপক উন্নয়ন দৃশ্যমান হয়েছে। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, যমুনা সেতুর রেল সংযোগ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র, এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প, কয়লাভিত্তিক রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণসহ দেশে ব্যাপক উন্নয়ন আজ দৃশ্যমান।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহরিয়ার আলম এমপির সভাপতিত্বে সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন। সম্মেলনে উদ্বোধক ছিলেন রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অনিল কুমার সরকার। সম্মেলনে প্রধান বক্তা ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ দারা। সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য ও বিএমডিএ চেয়ারম্যান বেগম আখতার জাহান। সম্মেলনে আরো বক্তব্য দেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ডাবলু সরকার। সঞ্চালনা করেন বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আশরাফুল ইসলাম বাবুল।
সম্মেলনের শুরুতে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উন্মোলন, বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি সহ অতিথিবৃন্দ। সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন শেষে সম্মেলন মঞ্চেই দ্বিতীয় অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম অধিবেশনে বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটিকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। সম্মেলনে দ্বিতীয় অধিবেশনে বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি ও সাধারণ সম্পাদক পদে আশরাফুল ইসলাম বাবুল বিনা-প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পুনরায় নির্বাচিত হন।
এর আগে সম্মেলনের শুরুতেই কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে বাঘা পৌরসভার সাবেক মেয়র আক্কাছ আলী এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপির সমর্থকদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। প্রায় আধা ঘন্টাব্যাপী চলা সংঘর্ষকালে মঞ্চের উপরে চেয়ার ছুড়ে মারা, চেয়ার ভাংচুর, দেশীয় অস্ত্র ও বাঁশের লাঠি ব্যবহার করা হয়। এ সময় দৌড়া দৌড়ি, ছুটা ছুটি করে সম্মেলনে আসা আগত লোকজন সম্মেলন স্থল ত্যাগ করে। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে পুলিশ টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে। এরপর পরিস্থিতি শান্ত হলে সম্মেলনের কার্যক্রম শুরু হয়।
সংঘর্ষকালে একজন নেতার প্রেস সহকারি, পৌর আ.লীগের সভাপতি আবদুর কুদ্দুস সরকার, শাহরিয়ার হোসেন, সিরাজুর ইসলাম, সাইফুর ইসলাম, মোরাদ হোসেন, লিটন ভুঁইয়া, গোলাম হোসেন, সুজন আলীসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
আহতদের মধ্যে সাইফুল ইসলাম ও সিরাজুল ইসলামকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আর আহতদের মধ্যে কয়েকজনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্্ের নেয়া হলেও গ্রেপ্তার আতঙ্কে বেশীর ভাগই গোপনে চিকিৎসা কার্যক্রম চালাচ্ছে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, প্রথম অধিবেশনে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন শেষে মঞ্চে আমন্ত্রিত অতিথিরা আসন গ্রহনের পর কোরআন তেলাওয়াত, গীতা পাঠ ও নেতাদের ফুল দিয়ে বরন করে নেওয়া হয়। এরপর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও বাঘা পৌর সভার সাবেক মেয়র আক্কাছ আলীর সমর্থকরা মঞ্চের সামনে আক্কাছ ভাই আক্কাছ ভাই বলে স্লোগান দিতে থাকে। তখন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সমর্থকরা তাদের প্রতিহত করার চেষ্টা করলেই সংঘর্ষে শুরু হয়।
এ তথ্য নিশ্চিত করে রাজশাহীর বাঘা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাজ্জাদ হোসেন বলেন, পরিস্থিততি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্যই টিয়ারসেল নিক্ষেপ করতে বাধ্য হয়েছে পুলিশ। সংঘর্ষের ঘটনায় প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।