নদীর প্রাকৃতিক পরিবেশের বিপর্যয় ঘটিয়ে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার পোড়াগাঁও ইউনিয়নের উপড়ে দিয়ে বয়ে চলা পাহাড়ী চেল্লাখালী নদীর বুরুঙ্গা ব্রীজের উত্তর পাশে বালু কারবারীরা নদী রক্ষা বাধেঁর পাড় ভেঙ্গে উত্তোলন করছে লাল মোটা বালু ও নুড়ি পাথর। প্রচুর বালু উত্তোলন করে মাটির পাহাড়ে তারা গড়ে তুলে বালুর পাহাড়। একই সাথে ভারত বাংলাদেশ আন্তজার্তিক সীমা রেখা আইন ভঙ্গ করে নদী ও নদী পাড়ে যত্রতত্রভাবে বালু উত্তোলন করে চলেছে বালু কারবারীরা। এবস্থায় নদী রক্ষাবাঁধ ও তার আশপাশে বসবাসরত মানুষজনের বাড়ীঘরসহ সামগ্রীক পরিবেশ হুমকির মুখে পড়েছে।
একই সাথে বুরুঙ্গায় যে ব্রীজ রয়েছে ইতি পূর্বে সেই ব্রীজের নিচ থেকে বালু তুলায় ব্রীজের খুটির নিচ থেকে বালু মাটি সরে গিয়ে ব্রীজটিও হুমকির সন্মখিন হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে এলাকাবাসী।
এলাকাবাসী ও উপজেলা নির্বাহী অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালে শেরপুর জেলা প্রশসাকের কার্যালয় হতে চেল্লাখালী নদীর বালু মহাল ইজারা দরপত্রে নালিতাবাড়ীর বুরুঙ্গা ও আন্ধারোপাড়া বাইগরপাড়া বালুমহাল ৩৯.৭২ একর জমি ইজারা ঘোষনা করা হয়েছে। যার মূল্য ধরা হয়েছে ৪১ লাখ ৭৩ হাজার ৩৪ টাকা। সুত্রস্থ ও দৃশ্যত চেল্লাখালী বুরুঙ্গায় ব্রীজের উত্তর পাশে ও দক্ষিনে নদীর সরকারী ডাকের মৌজায় নদীর মাঝ বরাবর যে বালু, সেখানে তেমন বালু নেই। যা কিছু বালু রয়েছে সেটি নদী পাড় এলাকায় বা নদী রক্ষা বাঁেধ নদী নিরাপত্তার আওতায়। এবস্থায় নদীর মাঝ বরাবর যে বালু সেখান থেকে শর্তনুযায়ী বালু তোলার কথা কিন্তু সেটা না করে অবৈধভাবে বালু কারবারীরা বালু তুলছে নদীর পাড়ের জায়গা হতে। একই সাথে নদীর পাড় এবং নদী হতে বালু কারবারীরা যে বালু উত্তোলন করছে তার পানিসহ আলাদা বালু পাইপ বসিয়ে নদীর মাঝ বরাবর সেই বালু পানি ফেলছে। ফলে নদীর বুক এখন সেই বালু পানির কারণে ভরাট হতে চলেছে এবং নদীর দুপাড়ের অংশ হতে বালু তোলায় ৫০/১০০ ফুটের ওপড়ে বিশাল বিশাল গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। নদীর মাঝ বরাবর ডেজার মেশিনের বালু জমে যাওয়ায় আগত বর্ষা মৌসুমে নদীর পানির গতি পথ হবে নদী পাড়ের দিকে। তীব্র পানির স্রোতে ভেঙ্গে পড়বে নদীর অরিক্ষত বাঁধ। নদীর পাড় ভাংগনের আংশকায় মানুষজন অরক্ষিত ও ঝুকিপূর্ন এবং আগত বর্ষায় ব্যাপক ক্ষতির স¤œুখিন হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে এলাকার মানুষজন। অন্য দিকে বুরুঙ্গা ব্রীজটির নিচ হতে বালু সরে যাওয়া ও ইতি পূর্বে ব্রীজের নিচে খুটির কাছ থেকে বালু তোলে নেওয়ায় ব্রীজটিও এখন ঝুকিপূর্ন অবস্থায় আছে। এবস্থায় প্রশাসনের চোখের সামনে বিকট শব্দে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে নদীর প্রাকৃতিক পরিবেশের বিপর্যয় ঘটিয়ে বেপরোয়া বালুকারবারীরা কারও কোন কথার কর্নপাত না করে দেদারচে বালু বিক্রির ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
বুরুঙ্গায় ব্রীজের উত্তর অংশে যারা বালু উত্তোলন করছে তারা হলেন, আয়নাল, ময়নাল, মিনাল, জালু, ইব্রাহিমসহ আরো অনেকে। এছাড়াও নিষিদ্ধ স্থান ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকা সংলগ্ন বুরুঙ্গা পোড়াবাড়ী এলাকায় যারা বালু তুলছে তারা হলেন, মোঃ ইসলাম (সাবেক মেম্বার), বাবুল মিয়া, হামিদ মিয়া, মাজুম মিয়া, জুলহাস উদ্দিন, হারুন মিয়া, আমির আলীসহ আরো অনেকে।
বালু ব্যবসায়ী আঃ কালাম বলেন, এদিকে তেমন কেউ আসে না। নদীর মাঝে তেমন কোন বালুও নেই। নদীর পাড় এলাকায় নদী রক্ষা বাঁেধ কিছু বালু আছে সেটি আমরাসহ আরো অনেকে বালু তুলছে। এতে করে আমাদের রাস্তারও সমস্যা হচ্ছে।
এলাকাবাসী আঃ কুদ্দছ বলেন, আমরা তাদের এসব স্থান হতে বিকট শব্দজনিত ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধ ও নিষেধ করলেও তারা আমাদের কোন কথা শোনে না।
পোড়াগাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাজী জামাল উদ্দিন বলেন, প্রকৃত পক্ষে নদীর মাঝ বরাবর তেমন কোন বালু নেই। কিছু বালু আছে সেটি নদীর পাড়ে এবং সেটি নদী নিরাপত্তায় বেষ্টিত। এবস্থায় নদীর প্রাকৃতিক পরিবেশের বিপর্যয় ঘটিয়ে পাড় ভেঙ্গে সেই বালু তারা উত্তোলন করছে। একই সাথে একেবারে ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত নিষিদ্ধ এলাকায় নদী হতে আইন ভঙ্গ করে এলাকার কিছু লোক এই বালু উত্তেলনের কাজটি করছে। এ ব্যাপারে ইতি পূূর্বে উপজেলা সমন্বয় মিটিংয়ে বিষয়টি উপস্থপিত হয়েছে। নদী রক্ষা ও ইজারা বন্ধে আন্দোলনও হয়েছে। কিন্তু এর কোন দৃশ্যত অভিযান কার্যক্রম দেখা যায়নি। এবস্থায় জরুরী অভিযান বা মোবাইল কোর্ট না করলে নদী রক্ষাবাঁধ তথা নদীর সার্বিক পরিবেশ বিপর্যয় ঘটে এলাকার মানুষজন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হেলেনা পারভীন বলেন, এ বিষয়টি শুনেছি। মোবাইল কোর্ট অন্যান্য স্থানে হচ্ছে। অতি শীগ্রই এসব স্থানে অভিযান কার্যক্রম শুরু করা হবে।