আখাউড়া-সিলেট রেল সেকশনের হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার ৬টি রেল স্টেশন এখন করুণ দশা। স্টেশনগুলো বন্ধ থাকার কারণে রেলের মূল্যবান যন্ত্রপাতি নষ্ট ও লোপাট হয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় লোকজন তালাবদ্ধ রেল ষ্টেশন গুলো চালু করার দাবী করলেও কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ নেই। কাশিমনগর, শাহপুর, তেলিয়াপাড়া, ইটাখোলা, ছাতিয়াইন ও সুতাং রেল ষ্টেশনগুলো দীর্ঘদিন ধরে তালাবদ্ধ। স্থানীয় লোকজন জানান- রেল ষ্টেশনগুলো সংস্কার করে ট্রেন দাড়ানো ও লোকবল নিয়োগ করে চালু করা হলে প্রতিদিন শত শত যাত্রী ট্রেনে গমন করতে পারতো। এতে সরকারের রাজস্ব আয়েরও সম্ভাবনা ছিল। এ ছাড়া ষ্টেশন গুলো বন্ধ ও পরিত্যক্ত হয়ে পড়ায় এখানে নানা অসামাজিক ও অপরাধীদের নিরাপদ আস্থানায় পরিণত হয়েছে। কাশিমনগর রেল ষ্টেশনের টিকেট মাষ্টার নুরুল ইসলাম প্রায় ১৪ বছর আগে মারা যাবার পর একজন লোক নিয়োগ প্রদান করলেও প্রায় ৬ মাস আগে তিনি অনত্র চলে যান। যে কারণে রেল ষ্টেশনের কার্যালয়ে তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। ওই এলাকার বাসিন্দা জয়নাল আবেদীন (জুনু) জানান এ স্টেশন থেকে পার্শ্ববর্তী ১৫/২০টি গ্রাম থেকে প্রতিদিন আখাউড়া-সিলেট রোডে ৪টি লোকাল ট্রেনে ২/৩শ যাত্রী সাধারণ ওঠানামা করতো এবং কাশিমনগর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে কাঁচামাল সরবরাহ করা হত। এতে কাঁচামাল পাইকাররা সহজেই তাদের গন্তব্যস্থানে মালামালগুলো সরবরাহ করতে পারতো। তেলিয়াপাড়া রেল ষ্টেশনে আবদুল হাই নামে একজন বুকিং ক্লার্ক মৃত্যু হওয়ার পর এখানে কোন বুকিং ক্লার্ক নিয়োগ দেয়া হয় নাই।
শাহজাহানপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ পারভেজ হোসেন চৌধুরী জানান ব্রিটিশ আমল থেকে রেল ষ্টেশনটি চালু ছিল। প্রতিদিন শত শত যাত্রী রেল ষ্টেশন থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করত। কিন্তু বর্তমানে কোনো জনবল নেই। যে কারণে টিকেট বিক্রির কোনো ব্যবস্থা নেই। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা একাধিকবার রেল ষ্টেশনটি সংস্কারের জন্য প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। রেল ষ্টেশনের অনেক মূল্যবান রেল যন্ত্রপাতি নষ্ট ও চুরি হয়ে গেছে। ইটাখোলা ষ্টেশন একটি সুপ্রসিদ্ধ ষ্টেশন ছিল। এ রেল ষ্টেশন থেকে অনেক পণ্য ও মানুষ রেলপথে আসা-যাওয়া করত। কিন্তু এ ঐতিহ্যবাহী রেল ষ্টেশনে এখন দুএকটি লোকাল ট্রেনও যাত্রা বিরতী করে না। ছাতিয়াইন ও সুতাং রেল ষ্টেশন প্রায় ২ যুগের বেশি সময় ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। এ ছাড়া অনেক স্থানে গেইট ও গেইট ম্যান না থাকায় সাধারণ যানবাহন রেল লাইনের উপর দিয়ে পাড় হচ্ছে। এতে করে অনেক স্থানেই ঘটছে রেল দুর্ঘটনা।
মাধবপুর উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দ মোঃ শাহজাহান জানান-এ স্টেশন গুলো চালু করার জন্য কয়েক বার মন্ত্রানালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। এগুলো চালু হলে এলাকার জনসাধারন উপকৃত হওয়ার পাশাপাশি সরকার রাজস্ব পেত।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী, হবিগঞ্জ-৪ (মাধবপুর-চুনারুঘাট) আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ¦ অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী বলেন, মাধবপুরের ৬টি রেল ষ্টেশনগুলোর সংস্কার ও লোকবল নিয়োগ খুবই প্রয়োজন। ৬টি রেল ষ্টেশন চালু হলে রেল পথে মানুষের ভ্রমন সহজ হবে। মাননীয় রেল মন্ত্রীকে বিষয়টি জানিয়েছি। আশা করি সরকার যোগাযোগ উন্নয়নের বিষয়ে মাধবপুরে ৬টি রেল ষ্টেশনে উন্নয়নে যুগপযোগি সিদ্ধান্ত নেবে।