জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলায় ৩ ভাই অভিনব কায়দায় প্রতারণা করে একই জমি একাধিকবার বিক্রি করায় প্রতারিত হয়ে সর্বশান্ত হয়েছেন এলাকার একাধিক নিরীহ মানুষ। তাই ভুক্তভোগী পরিবার সর্বশান্ত হয়ে আইনের প্রতিকার চেয়ে জামালপুর জেলা জজ আদালতে মামলা দায়ের করেছেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়,জেলার মাদারগঞ্জ উপজেলার চরপাকেরদহ ইউনিয়নের রুকনাই গ্রামের বাসিন্দা মৃত নজর আলী ছেলে অছিম উদ্দিন, ইদ্রিস আলী এবং আকবর আলী তারা ৩ভাই পার্শ্ববর্তী মেলান্দহ উপজেলার মাহমুদপুর মৌজার বিআরএস খতিয়ান নং ১৮ দাগ নং ৭৪৬৯ মোট জমির পরিমাণ ৯৪ শতাংশ জমির মধ্যে ৮০ শতাংশ জমি ৩ভাই তাদের স্ব-স্ব স্ত্রীগণের নামে গত ৩১/১০/১৯৮২ইং তারিখে মেলান্দহ সাব রেজিস্ট্রার অফিসের দলিল নং ৫৬৫০ মুলে কবলা দেন।
পরবর্তীতে ইদ্রিস আলী তথ্য গোপন করে মাদারগঞ্জের নিশ্চিন্তপুর গ্রামের বাসিন্দা মমিন সরকারের ছেলে মোজাম্মেল হক এর কাছে ৩০ শতাংশ জমি ৬ হাজার টাকার বিনিময়ে মাদারগঞ্জ সাব রেজিস্ট্রার অফিসের দলিল নং ২৮৪৮ তারিখ ০৩/১১/১৯৮২ মুলে একই জমি সাব কবলা বিক্রয় করেন। অপর ভাই, আকবর আলী একইদিন মমিন সরকারের ছেলে আবদুল মজিদ এর কাছে ৩১ শতাংশ জমি ৬ হাজার টাকার বিনিময়ে ২৮৪৯ নং দলিল মুলে সাব কবলা বিক্রি করেন। এ দিকে অছিম উদ্দিন তিনি গত ১৯/১২/১৯৮২ইং তারিখে মমিন সরকারের ছেলে আবদুল মজিদ এবং মোজাম্মেল হকের কাছে সাড়ে ১৫ শতাংশ জমি ৩৫৬৭ নং দলিল মুলে এবং একই দিন রুকনাই গ্রামের মৃত মহিউদ্দিন সরকারের ছেলে মোতাহার আলীর কাছে সাড়ে ১৫ শতাংশ মোট ৩১শতাংশ জমি ৩৫৬৬ নং দলিল মুলে সাব কবলা বিক্রয় করেন।
অপরদিকে, মমিন সরকারের ছেলে আবদুল মজিদ ক্রয় সুত্রে সাড়ে ৩৮ শতাংশ জমি জমির মালিক হয়ে ভোগ দখলে থাকাবস্থায় নিশ্চিতপুর গ্রামের মৃত ভোলা মন্ডলের ছেলে মিয়ার উদ্দিন এবং মিয়ার উদ্দিনের স্ত্রী রহিমা বেগমের কাছে ঐ সাড়ে ৩৮ শতাংশ জমি গত ২৩/০৭/২০০৩ইং তারিখে মেলান্দহ সাব রেজিস্ট্রার অফিসে ৫২২৫ নং দলিল মুলে সাব কবলা বিক্রয় করেন। সরল বিশ্বাসে মিয়ার উদ্দিন জমি ক্রয় করার পর ধীরে ধীরে ৩ভাইয়ের অভিনব কায়দায় জমি বিক্রির প্রতারণার তথ্য বেরিয়ে আসে।বর্তমানে মিয়ার উদ্দিনসহ অপর-আপর ভূক্তভোগি পরিবার হয়রানির শিকার হয়ে আইনের প্রতিকার চেয়ে জামালপুর জেলা জজ আদালতে মামলা দায়ের করেছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মিয়ার উদ্দিনের দখলীয় জমিতে চলতি মৌসুমে বোরো ধান চাষ করেছেন।স্থানীয় বাসিন্দা আপেল মিয়া, সবুজ আলী, রুস্তম আলী, বেলাল মিয়া, জানান, দীর্ঘদিন ধরে মিয়ার উদ্দিন জমি ভোগদখল করে আসছেন। কিন্তু জমির পূর্ববর্তি মালিকগণ প্রতারণা করে বিভিন্ন সময় একই জমি একাধিকবার বিক্রি করেছেন। ইতোমধ্যে অছিম উদ্দিন এবং আকবর আলী মৃত্যুবরণ করেছেন। তাদের ৩ভাইয়ের প্রতারণায় ক্রেতাগণ হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
সোরহাব মিয়া জানান,একই জমি স্ত্রীর নামে লিখে দিয়ে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে আমার কাছে বিক্রী করার পর বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয়দের চাপের মুখে পুনরায় দলিল করে দিয়েছে বলে উল্লেখ করেন। একই জমি একাধিকবার বিক্রির বিষয়ে মৃত অছিম উদ্দিনের ছেলে আনছার আলী, আফছার আলী এবং মোসা মিয়া এর কাছে জানতে চাইলে তারা জানায়, একই জমি একাধিকবার বিক্রির বিষয়ে আমরা পরে জানতে পেরেছি।'বাবা মারা গেছেন, তিনি বেঁচে থাকলে হয়তো আসল কথা জানতে পারতাম। এ বিষয়ে মৃত আকবর আলীর ছেলে আবদুর রাজ্জাক বলেন,জমির বিষয়ে আমি কোনো কথাও বলতে চাই না, এমনকি আমি কিছু জানিও না।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী মিয়ার উদ্দিন বলেন,নিজ নিজ স্ত্রীর নামে জমি লিখে দিয়ে তথ্য গোপন করে প্রতারণা করে একাধিকবার জমি বিক্রি করা চরম শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছে। তাই আইনি প্রতিকার চেয়ে আদালতের দারস্থ হয়েছি। আশা রাখি, আদালত থেকে আমরা সুষ্ঠু সুন্দর সুবিচার পাবো আশা করছি।